সন্তোষ দাস
গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমে একটি ভাল খবর প্রচারিত হতে দেখছি। দেশের ১৯ টি বিশ্ববিদ্যালয় একমত হয়েছে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রত্যাশী আমাদের তরুণ শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য এই মুহূর্তে এর থেকে ভাল খবর আর হতে পারে না। ভাল খবর এই অর্থে যে, করোনার এই মহাদুর্যোগকালে শিক্ষর্থীদের অন্তত: ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড়াদৌড়ি করা লাগবে না। গুচ্ছভুক্ত হওয়া এই ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে টি তার নিজ এলাকায় অবস্থিত, সেখানে বসে পরীক্ষা দিলে একই সাথে ১৯ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়া হয়ে যাবে। এতে তাদের সময়, অর্থ, পরিশ্রম, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা কমবে। আর করোনা কালে এটা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য স্বস্তির খবর বৈকি।
গত বছরও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষর্থীরা দেশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছে। এমনও দেখা গিয়েছে খুলনা জেলায় বাড়ি একজন শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আজ খুলনা থেকে রওনা দিয়েছে। আগামীকাল চট্টগ্রামে পরীক্ষা দিয়ে ঐ দিনই ঢাকা বা রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হতে হচ্ছে। হয়ত পরশুদিনই ঢাকা বা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা। একবার ভাবুন তো ঐ শিক্ষর্থীর শরীর ও মনের উপর কতটা চাপ পড়ে! আর তার পিতা-মাতার কত উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও অর্থ দন্ড হয়! এই সকল দিক বিবেচনা করেই বেশ কয়েক বছর ধরে শ্রদ্ধেয় ড. জাফর ইকবালসহ বহু শিক্ষাবিদ এমনকি মহামান্য রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়কে এক হয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার আহবান জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের নিজেদের স্বার্থকেই বড় করে দেখেছে এতদিন। আমাদের কোমল শিক্ষর্থীদের কথা তারা ভাবেনি। অর্থ বাণিজ্য আর আভিজাত্যের অহমিকা তাদের কাছে বড় হয়ে উঠেছিল। আভিজাত্যের অহমিকা এই অর্থে যে, গুচ্ছ পদ্বতিতে পরীক্ষা হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মান অনুযায়ী গ্রেডিং এর প্রশ্ন আসে এবং সে ক্ষেত্রে সবাই চায় এক নম্বরে থাকতে।
দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত হাজার হাজার ডিগ্রি কলেজগুলো দীর্ঘ দিন ধরে গুচ্ছ পদ্বতিতে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অপরিসীম কষ্ট লাগব করে চলেছে। এবার করোনাকালে ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। দেরীতে হলেও খবরটি স্বস্তির। বেটার লেট দ্যান নেভার। আরো স্বস্তির খবর হত যদি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের ইগো ও অর্থ চিন্তা পরিত্যাগ করে, শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করে এই গুচ্ছে যোগ দিত। আমরা এখনো আশাবাদী, যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এখনো এই গুচ্ছে যোগ দেয়নি, তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।