২০শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সৌন্দর্য ম্লান ‘আলামতের’ আবর্জনায়
সৌন্দর্য ম্লান ‘আলামতের’ আবর্জনায়


তহীদ মনি : যশোরের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক ভবন কোনটি? এ প্রশ্নের উত্তরে সবাই একবাক্যে বলবেন যশোর কালেক্টরেট ভবন। যশোর প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু এ ভবনটি সম্প্রতি পেয়েছে আরো নান্দনিক রূপ। মোহনীয় রং, বর্ণিল আলোক ছটার সাথে দেওয়াল জুড়ে ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রকাশ দর্শনার্থীদের দিচ্ছে প্রশান্ত মন। তবে গোটা ভবনের সব সৌন্দর্য ¤œান করে দিচ্ছে পূর্বপাশে রক্ষিত মামলার আলামত। বছরের পর বছর রোদ বৃষ্টির মাঝে পড়ে থাকা আলামত রীতিমত জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। ভবনের সৌন্দর্যহানিকর এ আলামতগুলো আদালতের এখতিয়ার ভুক্ত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা যশোর। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শত্রুমুক্ত জেলাও যশোর। দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলাও যশোর। সেই যশোরের কালেক্টরেট ভবনটি যেমন পুরাতন, তেমনি ঐতিহ্যমণ্ডিতও। ৩৬০ দুয়ারী হিসেবে পরিচিত ভবনের চারপাশেই আঙ্গিনা। এক সময় এ ভবনের ৩ পাশের বারান্দা ছিল নেশাখোর, ভিক্ষুক, নিশিবধূ, পকেটমারদের দখলে। সেখানে সন্ধ্যার পরই দেখা যেতো অন্য রকম চিত্র। আবর্জনাময় পুকুরটির চারপাশে এক সময় ছিল মানুষ সমান আগাছা। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রথমে পুকুর পাড় আগাছা মুক্ত করা হয়। হয় পুকুর সংস্কারও। স্বচ্ছ পানির দেখাও মেলে। রাতে করা হয় আলোর ব্যবস্থা । বারান্দার সব অবাঞ্ছিত লোকজন সরিয়ে, মুক্ত উদ্যানে হাটাহাটির সুযোগ তৈরি করা হয়। উত্তরদিকের জংলা পরিবেশও করা হয় পরিচ্ছন্ন। সেখানে গড়ে ওঠে নান্দনিক পার্ক। বাড়ে মানুষের আনাগোনা। নাগরিক জীবনের ক্লান্তি মুছে দিতে বিভিন্ন বয়সের লোকজন ভিড় করতে থাকে ওই পার্ক ঘিরে। এটির ইতিবাচক দিক জেলা প্রশাসনকেও নাড়া দেয়।
সময়ের প্রয়োজনে চাকরি সূত্রে অনেকে এসেছেন যশোরে, দায়িত্ব পালন শেষে আবার চলেও গেছেন। কিন্তু হাতেগোনা কিছুসংখ্যক জেলা প্রশাসক আজও যশোরবাসীর হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছেন। তারা ব্যতিক্রম ও নান্দনিক উদ্যোগের মাধ্যমে যশোরের সুনাম উজ্জল করেছেন। প্রশাসনিক ধরাবাঁধা কর্মসূচির মাঝেও নিয়েছেন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে মানুষের চিত্তকে দিয়েছেন ভাবনার খোরাক। এমনই একজন জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর রুটিন কাজের পাশাপাশি যশোরকে অনন্য উচ্চতায় পোঁছে দিতে নান্দনিক কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছেন। এর মধ্যে জেলার শিক্ষা-শিল্প সংস্কৃতির বিকাশ, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে মেধাবী উদ্যোগগুলো ইতোমধ্যে সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এসব কাজের জন্য তিনি মানবিক জেলা প্রশাসক হিসাবেও স্বীকৃতি পেয়েছেন। করোনাকালীন সময়ে তিনি ভিন্নভাবে আবির্ভূত হয়েছেন যশোরবাসীর কাছে। সেবা ও তাৎক্ষণিক বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নজির স্থাপন করে সব শ্রেণির মানুষের কাছে সুনাম কুড়িয়েছেন। সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত গতিশীল জেলা প্রশাসন বাস্তবায়নে জিরো টলারেন্স নীতি পালন করেছেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সাড়া জাগানো এলেন গিন্সবার্গের ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ এর ঐতিহ্য এতকাল মানুষের মুখে মুখে অথবা বইয়ের পাতায় থাকলেও তার দৃশ্যমান কোনো রূপ ছিল না যশোরে। মো. তমিজুল ইসলাম খান প্রথম কোনো জেলা প্রশাসক যিনি এটির দৃশ্যমান রূপ দিয়ে যশোরকে আবারো ইতিহাস-ঐতিহ্যের ঠিকানায় পৌঁছে দিয়েছেন। কালেক্টরেট ভবনেই টেরাকোটায় ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ ফুটিয়ে তুলেছেন। কালেক্টরেট ভবনের বর্ণিল সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জায় বদলে গেছে দৃশ্যপট। এখন শহরমুখি মানুষ দূর থেকে পরিচ্ছন্ন্ ঝকঝকে লাল ভবনটি দেখতে পান। রাতে আলোকমণ্ডিত ভবনের রূপ নগরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। বর্ণিল আর্কিটেকচারাল আলোকসজ্জায় রাতে মোহনীয় রূপ ধারণ করে যশোরের ঐতিহ্যের প্রতীক এ ভবনটি। তিনি শিক্ষা, শিল্প ও সাংস্কৃতিক কাজের মধ্যে দিয়ে নান্দনিক জেলা প্রশাসক হিসেবে মানুষের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছেন। সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কর্মীদের সর্বাত্মক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram