সমাজের কথা ডেস্ক : একটা সময় ছিল যখন ডাটা ট্রান্সফার বা সংরক্ষণের একমাত্র উপায় ছিল সিডি বা ফ্লপি ডিস্ক। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সেসব প্রযুক্তি হারিয়ে যায় পেনড্রাইভ, হার্ডডিস্ক কিংবা মেমোরি কার্ডের গহ্বরে। তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা একটি নতুন ধরনের অপটিক্যাল ডিস্ক তৈরি করেছেন। এই ডিস্কের ডেটা ধারণক্ষমতা ‘পেটাবিট’ স্তরের। অর্থাৎ ১২৫ টেরাবাইট ডেটা এতে সংরক্ষণ করা যাবে যা প্রায় ১৫ হাজার সাধারণ ডিভিডির ধারণক্ষমতার সমান। এই অপটিক্যাল ডিস্ক নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
ডিজিটাল তথ্যধারণের ক্ষমতাকে আরও বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞানীদের একটি দল একটি নতুন ধরনের উপাদান তৈরি করেছে। ডাই—ডোপড ফটোরেসিস্ট উইথ অ্যাগ্রিগেশন—ইনডিউসড এমিশন লুমিনোজেন বা এআইই—ডিডিপিআর নামে পরিচিত এই উপাদান। নির্দিষ্ট ক্ষেত্রফলের উচ্চ ঘনত্বের ডেটা সংরক্ষণ করা যায় এই উপাদানের মাধ্যমে। তাৎক্ষণিক বার্তা থেকে শুরু করে ভিডিও স্ট্রিমিং প্রতিদিন অনেক বেশি পরিমাণ ডেটা তৈরি হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন উপাদানের মাধ্যমে তৈরি অপটিক্যাল ডিস্কে ডেটা সংরক্ষণ করে নতুন তথ্যবিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
ডিভিডি ও ব্লু রে ডিস্কের মতো অপটিক্যাল ডিভাইসগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি। একটি ব্লুরে ডিস্ক ২৫ গিগাবাইট পর্যন্ত ডেটা সংরক্ষণ করতে পারে। অপরদিকে বর্তমান ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ ১ টেরাবাইট পর্যন্ত ডেটা সংরক্ষণ করতে পারে। আর হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (এইচডিডি) সর্বোচ্চ ১৬ টেরাবাইটের মতো ডেটা সংরক্ষণ করতে পারে। অপটিক্যাল ডিস্কগুলো বর্তমান স্টোরেজ পদ্ধতির তুলনায় কম জায়গা নেবে। তাই এগুলো পরিবেশের জন্য ভালো। অন্যান্য ডেটা স্টোরেজের তুলনায় এই পদ্ধতি কম ব্যয়বহুল হতে পারে।
গবেষণার বিস্তারিত গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত হয়েছে। একটি অপটিক্যাল ডিস্কে ন্যানোস্কেলে রাইটিংয়ে আণবিক স্তরে তথ্য রেকর্ড করা হয়। এআইইডিডিপিআর দুটি রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। একটি হলো— আইসোপ্রোপাইলথিওক্সানথোন (আইটিএক্স), অপরটি ডিপেন্টেরিথ্রিটল পেন্টাঅ্যাক্রিলেট (ডিটিপিএ)। আইটিএক্স একটি দক্ষ ফটোইনিশিয়েটরের মতো কাজ করে। এটি আলোর সংস্পর্শে এলে প্রতিক্রিয়া দেখায়। অপরদিকে ডিটিপিএ হলো একটি মনোমার অর্থাৎ একটি ছোট অণু। এটিরও উচ্চ আলোক সংবেদনশীলতা রয়েছে। যার অর্থ এটি আলোতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। তাই দুটি উপাদানকে একত্রিত করে তথ্যকে আগের চেয়ে আরও উচ্চ ঘনত্বে সংরক্ষণ করা যায়।
ন্যানোস্কেলের রিডিংয়ের জন্য হেক্সাফেনিলসিলোল (এইচপিএস) নামক একটি রাসায়নিক এবং এআইই লুমিনোজেনস (এআইইজেনস) নামে একটি নতুন উপাদান ডিস্কের ফিল্মটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এআইইজেনসের উচ্চ ফ্লুরোসেন্স (প্রতিপ্রভা) রয়েছে, এটির বিদ্যুৎ চুম্বকীয় বিকিরণ শোষণের হার অতি উচ্চ। নিখুঁত লেজার রশ্মি ব্যবহার করে এর দক্ষতা আরও বাড়ানো যায়।
এভাবে এই অপটিক্যাল ডিস্কে বেশি ঘনত্বে ডেট সংরক্ষণ করা যায়। ডিস্কের স্টোরেজ ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞানীরা আণবিক স্কেলে একাধিক স্তরে বা মাল্টিলেয়ারে ন্যানোস্কেল রিডিং এবং রাইটিং কৌশল ব্যবহার করেছেন। স্তরগুলোর মধ্যে দূরত্ব ১ মাইক্রোমিটার (এক মিলিমিটারের এক হাজার ভাগ) কমিয়ে, গবেষণা দলটি ১০০টি স্তরে ডেটা সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করেছেন। এ ছাড়া অনেকটা ভিনাইল রেকর্ডের মতো ডিস্কের উভয় পাশে তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে স্টোরেজ ক্ষমতা আরও বাড়ানো হয়েছে।