২১শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সার্জারির জনক ইবনে রুশদ
118 বার পঠিত

সমাজের কথা ডেস্ক ; মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও পণ্ডিত হিসেবে ইবনে রুশদ ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। রেনেসাঁর যুগে ইউরোপে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। ১১২৮ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের কর্ডোভায় এক সম্ভ্রান্ত ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ইবনে রুশদ। তাঁর পুরো নাম আবু আল ওয়ালিদ মোহাম্মদ ইবনে আহমাদ ইবনে রুশদ।

তিনি পাশ্চাত্যে আবৎড়ংং নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন কর্ডোভার বিচারক। দাদা মালেকি মাজহাবের সুপণ্ডিত ছিলেন। তিনি ছিলেন কর্ডোভার জামে মসজিদের ইমাম।

যুবক ইবনে রুশদ প্রাথমিক পর্যায়ের লেখাপড়া করেন কর্ডোভায়। তিনি জ্ঞান আহরণে ছিলেন পুরোপুরি আত্মনিবেদিত। তিনি দর্শন ও ভেষজ বিষয়ে ব্যাপকভাবে লেখাপড়া করেন। আবু জাফর হারুন ও ইবনে বাজার মতো বিখ্যাত শিক্ষকের কাছে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছেন।

কর্ডোভার তৎকালীন শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক আবু জাফর ইবনে হারুনের কাছে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখা করেন। তিনি কর্ডোভায় হাকামের পাঠাগারে পড়াশোনা করেছেন।
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ হলে তাঁকে মরক্কোয় ডেকে নেওয়া হয়। ১১৬২ খ্রিস্টাব্দে ইবনে রুশদ মুয়াহিদ খলিফা আবু ইয়াকুব ইউসুফের আমন্ত্রণে মরক্কোয় গমন করেন। আল ইয়াকুব সেখানে তাঁকে তাঁর চিকিৎসক পদে নিয়োগ দেন।

তিনি ইবনে তোফায়েলের স্থলাভিষিক্ত হন। সেখানে খলিফা তাঁকে রাজকীয় হাকিম ও উজিরের পদ দিয়ে সম্মানিত করেন। এ সময় দার্শনিক—ধর্মতত্ত্ববিদ ইবনে তোফায়েলের বন্ধুত্ব খলিফার দরবারে তাঁকে পরিচিত করে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। খলিফা আবু ইয়াকুবের মৃত্যুর পর আল—মানসুর খলিফা পদে অধিষ্ঠিত হন। ফলে তাঁর সম্মান ও গ্রহণযোগ্য আরো বহুগুণ বেড়ে যায়।
এ সূত্রে তিনি হয়ে গেলেন সার্জারির জনক। খলিফা ইয়াকুব আল—মানসুরের ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে তিনি এ দায়িত্ব অব্যাহত রাখেন। আল—মানসুর ছিলেন খলিফা ইবনে ইয়াকুবের পুত্র। ইবনে রুশদের দর্শন যেমন ইউরোপের পণ্ডিতদের ওপর অসাধারণ প্রভাব ফেলেছিল, তেমনি তাঁর চিকিৎসা দর্শনও সেখানে সমাদৃত হয়েছিল।

ইবনে রুশদ চিকিৎসাশাস্ত্রে বিশ্বকে অসাধারণ কিছু গ্রন্থ উপহার দিয়েছেন। অসাধারণ কয়েকটি বই রচনা করেছেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘কিতাব আল কুল্লিয়াত ফি আল তিব্ব’। গোটা ইউরোপ ও আরব বিশ্বে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান পাঠ্য বই ছিল এটি। চিকিৎসাশাস্ত্রে এটি একটি মাস্টার ওয়ার্ক ছিল। এটি লাতিন ভাষাসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। এটি ১২৫৫ সালে লাতিন ভাষায় অসম্পূর্ণভাবে অনুবাদ করা হয়। ১৫৩৭ সালে সম্পূর্ণ অনুবাদ হয়। সোলায়মান ইবনে ইবরাহিম ইবনে দাউদ এটি হিব্রু ভাষায় অনুবাদ করেন। ইবনে রুশদ এ বইয়ে চিকিৎসাশাস্ত্রের তিনটি মৌল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। রোগ বিশ্লেষণ (ডায়াগনসিস), নিরাময় (কিউরি) এবং প্রতিরোধ (প্রিভেনশন)।

ইবনে রুশদ ছিলেন আধুনিক সার্জারির জনক। বইটিতে ইবনে সিনার ‘আল—কানুন’ সম্পর্কে সর্বশেষ উল্লেখ আছে। ইবনে রুশদ ইবনে সিনার দর্শনের সমালোচনা করলেও তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে ইবনে সিনার উচ্চ মর্যাদাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাঁর চিকিৎসাদর্শন গ্রহণ করেছেন। বইটিতে ইবনে রুশদের আসল পর্যবেক্ষণের বিষয় বিধৃত আছে। তিনি ১১৬২ খ্রিস্টাব্দের আগে বইটি লেখেন।

ইবনে রুশদ অন্য জ্ঞান—বিজ্ঞানের সঙ্গে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন। তবে তিনি চিকিৎসা অনুশীলন করেননি। চিকিৎসার দৃষ্টিকোণ থেকে ইবনে রুশদের অবস্থান নগণ্য। তবে তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর চিকিৎসাজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ। ইবনে রুশদের অনুসন্ধান চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাধারণ নীতি ও সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি গ্যালেনের চিকিৎসাসংক্রান্ত বইগুলো সংক্ষিপ্ত করেছেন।

ইবনে রুশদ বিভিন্ন কঠিন রোগ শনাক্ত করেন এবং সেসব রোগের ওষুধও আবিষ্কার করেন। তিনি গুটিবসন্ত নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন এবং এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন। চোখের পুতুল কিভাবে কাজ করে তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন। ইবনে রুশদ মানবদেহের অঙ্গ—প্রত্যঙ্গ আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি হিসেবে স্বীকার করেন এবং মানবদেহের অঙ্গ—প্রতঙ্গ নিয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মানবদেহের অঙ্গ—প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে, আল্লাহর প্রতি তার ঈমান মজবুত ও দৃঢ় হবে। সূত্র : কিতাবুল কুল্লিয়াত
লেখক : শিক্ষক ও অনুবাদক

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram