অঘোর মন্ডল : আস্থা—বিশ্বাস—প্রতিদান। এই তিন স্টাম্পের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং অগ্রগতি। দেশের মানুষ আস্থা রেখেছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের কথা বিশ্বাস করতে চান তারা। অভিজ্ঞ আর তারুণ্যের মিশেলে গড়া নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেওয়ার পর থেকে অনেক কথা বলছেন। আমজনতা মনে করে তারা তাদের কথা রাখবেন। মানুষের আস্থা আর বিশ্বাসের প্রতিদান দিতে না পারলে বিপদগ্রস্ত হবে দেশ, দেশের গণতন্ত্র।
প্রধানমন্ত্রী থেকে মন্ত্রীদের কথায় আশার বিপরীতে একটা শঙ্কার সুরও বাজছে। বর্তমান সরকারকে অনেক চাপ সামাল দিতে হবে। সেটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক। ভোট বর্জনকারী বিরোধী দল ঘরে বসে থাকবে না। রাজপথে আন্দোলন তারা করবে। সরকার নয়, দল হিসেবে বিরোধীদের সেই আন্দোলন মোকাবিলার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের আছে। কিন্তু সরকার আর দল মিলেমিশে যদি একাকার হয়ে যায়, তা হলেই বিপদ।
ভোটের আগে এক সময় যারা ভারতবিরোধী জিগির তুলতেন, তাদের সেই আওয়াজ এখন মানুষের কানে পৌঁছায় না। তারা এখন তাকিয়ে থাকেন আটলান্টিকের ওপারে। সেখান থেকে যদি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নতুন কোনো থিওরি আসে। যা দিয়ে বলা যাবে এই সরকার অবৈধ! নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটের সঠিক হিসাব চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে কি কোথাও লেখা আছে শতকরা কত ভাগ ভোট পেলে সেই দল সরকার গঠন করতে পারবে? তাদের বৈধ সরকারের সার্টিফিকেট দেবে পশ্চিমারা!
এসব যুক্তি—তর্কের পরও একটা কথা বলতেই হবে, সরকারের ওপর বিদেশিদের চাপ প্রবল থেকে প্রবলতর হবে। সেই চাপ সামাল দেওয়ার সাহস এবং সামর্থ্য শেখ হাসিনার আছে। তার মধ্যে কী একটা ক্ষমতা আছে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা নেতারা ঠিক বুঝতে পারছেন না! তা না হলে এত চাপ সামলে আরেকটা নির্বাচন করে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসেন কীভাবে!
মানুষ উন্নতি দেখছে। তারা আরও উন্নয়ন দেখতে চায়। কিন্তু সবার আগে তাদের চাওয়া খেয়ে—পরে বাঁচা। দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ করতে হলে সিন্ডিকেট নয়, জনগণের কথা ভাবতে হবে সরকারকে।
দৃশ্যমান উন্নয়ন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। ডেল্টা প্ল্যান। উন্নয়নশীল দেশের সরণিতে পা রাখা। এসব কথা মানুষ শুনতে চাইলেও বুঝতে চাইবে না। যদি তারা নিজেদের জীবনমানের কোনো পরিবর্তন খুঁজে না পায়! সাধারণ মানুষের সাধারণ চাহিদা পূরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত সরকারের কর্মপরিকল্পনায়। সাধারণ মানুষকে দূরে রেখে দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়। গণতন্ত্রের ভিতও দৃঢ় করা যাবে না। জনগণের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্রকেও নিরাপদ করা যাবে না। (সংক্ষেপিত)
লেখক : সিনিয়র জার্নালিস্ট ও কলাম লেখক