শামস বিশ্বাস : আস্তে আস্তে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এমনভাবে শীত পড়ছে— যার শীতল আবহাওয়ার কথা মাথায় এলেই শীত লাগতে শুরু করবে।
রাশিয়া
বসবাসের একটি খুব ঠান্ডা দেশ। মাত্র ২ মাসের জন্য সূর্যের মুখ দেখতে পাওয়া যায় এই দেশে। এখানে জানুয়ারিতে তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ২৭ ডিগ্রি এবং গ্রীষ্মে মাইনাস ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দেশের অধিবাসীদের গা গরম রাখতে সোয়েটার নয়, প্রয়োজন ভোঁদকা।
ওইমিয়াকন : ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি রাশিয়ার সাইবেরিয়ান তুন্দ্রা অঞ্চলের ওইমিয়াকন গ্রামের তাপমাত্রা নেমে আসে মাইনাস ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পৃথিবীর শীতলতম গ্রামে এই তাপমাত্রায় চোখের পাতাতেও জমে যাচ্ছে বরফ। এত কম তাপমাত্রা ডিজিটাল থার্মোমিটার ধারণ করতে পারে না অর্থাৎ ভেঙে যায়। কেননা এই থার্মোমিটারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দেওয়া আছে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯২৪ সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানী সার্জে ওব্রিচেভ এই এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৬৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেন। মানুষের বসতি আছে— এমন স্থানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড এটি। ২০১৩ সালে ওয়াইমায়াকনে সর্বকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ওই বছর সেখানে তাপমাত্রা পৌঁছেছিল মাইনাস ৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আগে গ্রীষ্মের সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকত ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। ২০১০ সালে সেই তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়ার দিক থেকে বসবাসের অযোগ্য হলেও এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও ওইমিয়াকন গ্রামে মানুষ বাস করে। সব মিলিয়ে এই গ্রামে মানুষের সংখ্যা ৫০০।
ভারকোয়ানস্ক : নিম্ন তাপমাত্রার আবহাওয়ার জন্য রাশিয়ায় ভারকোয়ানস্ক এলাকাটি পরিচিত। বিশ্বের নিম্ন তাপমাত্রার জন্য ভারকোয়ানস্কের সঙ্গে ওইমিয়াকন এলাকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসে এই এলাকার তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে। এ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৯৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এখানে কলম দিয়ে লেখা যায় না। কারণ তা জমে থাকে। গ্লাসে পানি খেতে গেলে তা মুহূর্তে জমে যায়। গাড়ি সব সময় স্টার্ট দিয়ে গরম রাখতে হয়। মারাত্মক ঠা—ার কারণে মোবাইল ফোন কাজ করে না। ফলে নেটওয়ার্কও নেই।
অ্যান্টার্কটিকা
নিঃসন্দেহে আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে ঠা—া মহাদেশ। এই মহাদেশের ৯৮ শতাংশ অংশ গড়ে ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার (১.২ মাইল) পুরু বরফাবৃত। এখানে বাস্তবসম্মতভাবে বাস করা অসম্ভব। অ্যান্টার্কটিকা বিশ্বের শুষ্কতম মহাদেশ এবং এর গড় উচ্চতা ও বায়ুপ্রবাহ বেগও মহাদেশগুলোর মধ্যে সর্বাধিক। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ২০০ মিলিমিটার হওয়ায় এ মহাদেশকে শীতল মরুভূমি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই মহাদেশের তাপমাত্রা সর্বনিম্ন রেকর্ড মাইনাস ৮৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস (মাইনাস ১২৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পর্যন্ত পৌঁছেছে। তবে বছরের শীতলতম সময়ে গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (মাইনাস ৮১ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। এই মহাদেশে কোনো স্থায়ী বাসিন্দা না থাকলেও সারাবছর প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষ এই মহাদেশে ছড়িয়ে—ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন গবেষণাকেন্দ্রে অবস্থান করে।
ভোস্টক : অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে অবস্থিত রাশিয়ার গবেষণাকেন্দ্র ভোস্টক। এখানে সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে। আগস্ট মাসেই শীতের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করা হয় মাইনাস ১২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
প্লাটিআউ স্টেশন: ভোস্টকের পর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে ভোস্টকের রেকর্ড রয়েছে। এখানে জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি শীত পড়ে। এ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ১১৯ দশমিক ২ ডিগ্রি ফারেনহাইট রেকর্ড করা হয়।
গ্রিনল্যান্ড
পৃথিবীর সব থেকে বড় দ্বীপ হলো গ্রিনল্যান্ড। সূর্যের আলো এ দ্বীপে প্রায় আসে না বললেই চলে। বছরের প্রতিমাসই বরফ দিয়ে ঢাকা থাকে এ দ্বীপ। গরমকালের সব থেকে উষ্ণতম তাপমাত্রা হলো মাইনাস ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ইসমিটি : জার্মান শব্দ ইসমিটির অর্থ বরফকেন্দ্র। পুরো এলাকা বরফজুড়ে থাকে। এই এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নর্থ আইস : নর্থ আইস গ্রিনল্যান্ডের গবেষণাকেন্দ্র। এলাকাটির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৮৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
যুক্তরাষ্ট্র
নিউইয়র্ক শহরের তাপমাত্রা নামে ১৯ ডিগ্রিতে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড ২৪ ডিগ্রি। সেটিও ১৯৪০ সালের। সিকাগোর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৯৬৯ সালের ৫ ডিগ্রির রেকর্ড ভেঙে হয় ১ ডিগ্রিতে। ২০০১ সালে চার্লসস্টন, সাউথ ক্যারোলিনার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৪৫ ডিগ্রি। এ বছর সেটি দাঁড়িয়েছে ৩৪ ডিগ্রিতে। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হলো মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই দেশের সবচেয়ে উত্তরের অঙ্গরাজ্য আলাস্কায় ঠা—া তাপমাত্রা প্রায় ৯ মাস ধরে চলে। সবচেয়ে কম তাপমাত্রা মাইনাস ৬২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় এবং এই তাপমাত্রার সঙ্গে সামান্য বাতাসে ঘরের বাইরে থাকা কেউ মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারে। অত্যধিক কম তাপমাত্রার প্রভাব পড়ে এখানকার অধিবাসীদের ত্বকের ওপরও।
প্রসপেক্ট ক্রিক, আলাস্কা : প্রসপেক্ট ক্রিকে ছোট আকারের বসতি আছে। এই এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
রজার পাস, মন্টানা : সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে রজার পাসের উচ্চতা ৫ হাজার ৬১০ ফুট উঁচু। ১৯৫৪ সালে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
কানাডা
শীতের দেশ হিসেবে পরিচিত কানাডায় ২০১৮ সালে শুরুতেই মাইনাস ৪৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে। তা বিশ্বের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি দেশটির কুইবেকের লা গ্রান্ডেতে সর্বনিম্ন এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তীব্র শীত ও তুষারের কারণে দেশটিতে অসংখ্য ফ্লাইট বাতিল করা হয়। ফ্লাইট অ্যাওয়ার নামে একটি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার তথ্য মতে, শুধু টরন্টো বিমানবন্দরেই প্রায় ৫০০ ফ্লাইট বাতিল করা হয়। জনসাধারণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সর্বনিম্ন তাপমাত্রার অনেক শহরের একটি বিশাল দেশ কানাডা। সারাবছরই এ দেশে তীর্যকভাবে আলো দেয় সূর্য। বছরের ৫ মাসই শীতকাল অনুভূত হয় কানাডায়। যখন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে, তখন মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। অবশ্য গরমকালে তাপমাত্রার কোনো হেরফের হয় না বললেই চলে।
স্ন্যাগ, ইউকোন : যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা মহাসড়ক থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে কানাডার ইউকোনে অবস্থিত। জানুয়ারিতে এখানকার তাপমাত্রা সবচেয়ে কম। এখানকার রেকর্ড করা সবচেয়ে কম তাপমাত্রা হলো মাইনাস ৮১ দশমিক ৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
ফোর্ট সেলক্রিক, ইউকোন : এটি কানাডা নদীর পাড়ে অবস্থিত। ১৯৫০ সালের আগে এটি মরুভূমি ছিল। বর্তমানে এখানে আবার বসতি স্থাপনের চেষ্টা চলছে। এখানে প্রবেশের কোনো রাস্তা নেই। বেশিরভাগ লোক নৌকা বা বিমানযোগে এখানে আসে। জানুয়ারিতে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা থাকে। এই এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৭৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট।