সমাজের কথা ডেস্ক : বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতো ভাষা শহিদদেরও ভাতা—বোনাসসহ অন্য সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ভাষা শহিদ বরকতের পরিবারের সদস্যরা। তাদের দাবি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়মিতভাবে বোনাস—ভাতা দেওয়া হলেও ভাষা শহিদদের তা দেওয়া হয় না। আর ভাষা শহিদদের স্বজনদের জন্য নেই কোনো বরাদ্দ।
শহিদ বরকতের ভাতিজা আইন উদ্দিন বরকত বলেন, ‘ভাষা শহিদ বরকত পরিবারকে ২০০৬ সাল থেকে সরকারিভাবে প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা দেওয়া শুরু হয়। অন্য ভাষা শহিদদের প্রতি পরিবারের সদস্যদের ৫ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা দেয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। পরবর্তীকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে তা দ্বিগুণ করে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা দেওয়া হয়। এখনো সম্মানী ভাতা ১০ হাজার টাকাই রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে এদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চাকরিজীবীদের বেতন—ভাতাদি বাড়ালেও ভাষা শহিদদের সম্মানী ভাতা বাড়ানো হয়নি। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধারা মাসিক ২০—২২ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা ছাড়া ও তিনটি বোনাসও পাচ্ছেন। কিন্তু ভাষা শহিদ পরিবারের কেউ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতো কোনো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না।’
এ সময় আইন উদ্দিন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি ও বোনাস প্রদানের দাবি জানান।এছাড়াও ভাষা শহিদ বরকত পরিবারের সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতো ভাষা শহিদ ও সৈনিকদের উত্তরসূরিদের চাকরি ও ভর্তি কোটাসহ অন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা, যে কজন ভাষাসৈনিক বর্তমানে বেঁচে আছেন মৃত্যুর পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতো তাদেরও রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতো ভাষাসৈনিকদের তালিকা তৈরির দাবি জানান।
সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে বরকতের পরিবার আরও জানান, ঢাকা—জয়দেবপুর সড়ক সংলগ্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নলজানী এলাকায় সরকারের বরাদ্দকৃত জমিতে শহিদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বানুর কবর রয়েছে। হাসিনা বানুর মৃত্যুর পর প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকেই শহিদ মায়ের কবরে ফুল দিতে ও জিয়ারত করতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে স্কুল—কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিশু ও নারী—পুরুষসহ অসংখ্য মানুষ এসে ভিড় জমায়। স্থানটি সড়কের পাশে হওয়ায় নানা দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। বরকত পরিবার দিবসটি উপলক্ষে আগতদের নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।
শহিদ বরকতের বড় ভাতিজা আলাউদ্দিন বরকত বলেন, ‘শহিদের ভাতার টাকাটাই মুখ্য নয়। এখন ভাষা শহিদদের পরিপূর্ণ স্বীকৃতি ও মর্যাদা দরকার। তার চাচা বরকতসহ অন্য ভাষা শহিদদের স্বাধীনতা পদকসহ রাষ্ট্রীয় অন্য পদক বা স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সড়কের নামকরণ ভাষা শহিদদের নামে করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।’