১৮ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মতামত
‘সমৃদ্ধ ও সমতাভিত্তিক’ বাংলাদেশ হওয়ার পথ সুগম হচ্ছে
52 বার পঠিত

ড. আতিউর রহমান : এবার বিজয়ের মাস ভিন্ন এক বাস্তবতায় উপস্থিত হয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক টানাপড়েন এবং নির্বাচনী ডামাডোলে সংকট ও সম্ভাবনার দুবার্তাই দিচ্ছে। প্রতিবারই নির্বাচনের সময় এমন সামাজিক অস্থিরতা চোখে পড়ে। দিন শেষে নির্বাচনটি হয়ে গেলে অন্তত পাঁচ বছরের জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আশা করছি, নানা প্রতিকূলতা ও বিশৃঙ্খলা পেরিয়ে এবারও বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত সম্ভাবনার পথেই হাঁটছে। ডিসেম্বরে সাধারণত শীতের আমেজে সব শ্রেণির মানুষই স্বদেশ ভাবনা ও স্বদেশি সাংস্কৃতিক আয়োজনে নির্ভয়ে অংশগ্রহণ করে থাকে। এবারের ডিসেম্বরে নির্বাচনী ক্রিয়া—প্রতিক্রিয়া ও হরতাল—অবরোধের প্রভাবে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতির প্রভাবে ওই রকম আনন্দযোগ খানিকটা অনুপস্থিতই বলা যায়। এমনটি অব্যাহত থাকলে বিজয়ের এ মাসেও অনেক মানুষই হয়তো ঘরবন্দি থেকে যাবে। এর মানে এই নয় যে, বিজয়ের আনন্দ থেকে মানুষ পুরোপুরি দূরে থাকবে।

আগের চেয়ে মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চয় ঘটেছে। তবে সামাজিক বিভাজন ও বিশৃঙ্খলা অনেকের মনেই এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করেছে। আশা করি, এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ বিগত ৫২ বছরে বাংলাদেশের অসামান্য অগ্রগতির কথা নিশ্চয় এ মাসে মনে করবে; বিশেষ করে দেশটি স্বাধীন না হলে যে এত উন্নয়নমুখী অবকাঠামো, শিক্ষার প্রসার ও খাদ্য সংকট দূর করার সুযোগই মিলত নাÑ এ কথাটি নিশ্চয় তাদের মনে পড়বে। আছে দুঃখ; আছে অশান্তি। তবুও নিশ্চয় তাদের হৃদয়ে আছে স্বাধীনতার স্বাদ, মুক্তির অবিনশ^র চেতনা। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলাদেশ অনেকটা পথই পাড়ি দিয়েছে; উন্নয়নের এক অবিস্মরণীয় পথপরিক্রমা অতিক্রম করেছে। ভালো—মন্দ মিলেই এ অসামান্য উন্নয়নে পরিশ্রমী মানুষের ভূমিকাই ছিল সবার চেয়ে বেশি। আর উদ্যোগী এসব মানুষের মনে লড়াই করে মুক্তির অভিযাত্রায় সর্বক্ষণ যুক্ত থাকার অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন, এখনো দিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু।

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই। তিনি যখন বাংলাদেশ গঠনের কাজে হাত দিয়েছিলেন, তখন বাংলার মাটি ও মানুষ ছাড়া তার হাতে কোনো সম্পদই ছিল না। বর্তমান ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতির বিপরীতে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল শূন্য। সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ ছিল যথাক্রমে জিডিপির মাত্র ৩ ও ৯ শতাংশ। ফলে টিকে থাকা ও উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে ব্যাপকভাবে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হতো। এই প্রাথমিক কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বীরত্বপূর্ণ কৌশলের সূচনা করেছিল।

বঙ্গবন্ধুর সুচিন্তিত নেতৃত্বে দেশ সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছিল। ১৯৭২ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৯৩ মার্কিন ডলার। ১৯৭৫ সালে তা ২৭৩ ডলারে উন্নীত হয়। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মাত্র সাড়ে তিন বছরে এই লক্ষণীয় পরিবর্তন সম্ভব হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হারানোর পর অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে আমরা দেখতে পাই, ১৯৭৭ সালে মাথাপিছু আয় নেমে দাঁড়ায় ১২৯ মার্কিন ডলারে। পরে ১৯৭৫ সালের ওই আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে আমাদের ১৩ বছর লেগে গিয়েছিল। অতঃপর তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের গতি আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সালের পর ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠন করে তিনি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নতুন ধারার সূচনা করেন। তার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সমৃদ্ধ ও সমতাভিত্তিক’ বাংলাদেশ হওয়ার পথ সুগম হচ্ছে। (সংক্ষেপিত)

লেখক : ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram