ইমরান হোসেন পিংকু : যশোরের ওপর দিয়ে কয়েকদিন ধরে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি ও মৃদু শৈত্য প্রবাহ। তীব্র ঠান্ডার জন্য জেলার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান দুদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে কয়েকটি বিদ্যালয়ে চলেছে প্রাইভেট, চালু ছিল কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম। বাধ্য হয়ে কনকনে ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারে যেতে হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী—অভিভাবকদের।
মঙ্গলবার—বুধবার বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, সব কোচিং সেন্টার খোলা ছিল, শিক্ষকদের ব্যাচে পড়ানো হয়েছে যাথরীতি। স্কুলের ক্ষেত্রে নানা প্রলোভন ও পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
বুধবার এদিন সকাল ৯টার দিকে চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি শহীদ মশিয়ূর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায় একটি শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীরা বসা আছে, শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। পরে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায় ওটি ক্লাস ছিল না, ছিল প্রাইভেট। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে শিক্ষক ছুটি দিয়ে দেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, স্যারে বলেছে প্রাইভেট পড়তে আসতে। এজন্য শীতের মধ্যে কষ্ট করে পড়তে এসেছি। তাছাড়া স্কুলে বন্ধের ব্যাপারেও কিছু জানানো হয় নি।’
ওই শ্রেণি কক্ষে ছিলেন গণিতের শিক্ষক প্রণব রায়। তিনি জানান, স্কুলে কোন প্রাইভেট পড়ানো হয়নি। বরং নবম—দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিজ্ঞান মেলার কাজ করা হচ্ছিল। তীব্র শীতের কারণে স্কুল ছুটির দিনে কেনো শিক্ষার্থীদের ডেকে স্কুলে আনা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এড়িয়ে যান।
নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এখনো তো বিজ্ঞান বই পায়নি। বিজ্ঞান মেলা কিভাবে করবো।’
যশোর শহরের জজ কোর্ট মোড় এলাকার মেধা বিকাশ কোচিং সেন্টারে পরিচালক রাসেল আহমেদ বলেন, আমাদের উচিত ছিল কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় খোলা রাখতে হয়েছে।
একই সাথে অভিভাবকরাও তাদের ছেলে—মেয়েদের কোচিং সেন্টারে পাঠিয়েছে। এর ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই কোচিং সেন্টার চালাতে হয়েছে আমাদের। এ কোচিং সেন্টারে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, তীব্র শীত উপেক্ষা করে কোচিং সেন্টারে মেয়েকে নিয়ে আসতে হয়েছে। যাতে পড়াশুনা থেকে যাতে পিছিয়ে না পড়ে। আবার যদি কোচিং সেন্টারগুলো নিজে থেকে বন্ধ দিতো তাহলে এ কষ্ট করতে হতো না।’
নবদূত একাডেমিক কোচিং সেন্টার, ড্রিম কোচিং সেন্টার, আলমাস একাডেমিক কেয়ার, সতর্তা কোচিং সেন্টারসহ শতাধিক কোচিং সেন্টারে ছেলে—মেয়েরা কোচিং করেছে। তীব্র শীতে কাঁপতে কাঁপতে এসে তারা পড়েছে। অভিভাবকরা বলছেন, কোচিং সেন্টার বন্ধ না দেয়ায় ছেলে—মেয়েদের নিয়ে কোচিংয়ে যেতে হচ্ছে।’
যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, জেলাতে ১২৮৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই তীব্র শীতের কারণে যেখানে সব সরকারি—বেরসরকারি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সেখানে কোচিং সেন্টার চালু রাখার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি নির্দেশনা অমান্য করে কার্যক্রম চালায়, তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হোসেন বলেন, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় মঙ্গলবার—বুধবার যশোরের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী এ ছুটির ঘোষণা দেওয়া হয়। যদি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রাইভেট বা কোচিং চালু রাখে আর তার প্রমাণ পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।