সমাজের কথা ডেস্ক : দেখতে অন্যদের মতোই স্বাভাবিক। দেখে বোঝার উপায় নেই তার কণ্ঠেই রয়েছে জাদু। মোটু—পাতলুসহ যে কারও কণ্ঠ হুবহু নকল করতে পারেন তিনি। বলছিলাম ঝিনাইদহ শহরের বেপারীপাড়া এলাকার স্কুলশিক্ষক আব্দুল¬াহ আল নোমানের কথা। স্কুলে বিনোদনের মাধ্যমে পাঠদানে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে।
জানা গেছে, আব্দুল¬াহ আল নোমান বেপারীপাড়া এলাকার আকরামুল হক ও নাসরিন নাহার দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে বড়। তিনি মালয়েশিয়ার কুয়লালামপুর ইউনিভার্সিটি অব আর্টস থেকে ডিপে¬ামা করেছেন। ২০২০ সালে করোনার সময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজে খন্ডকালীন ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন। স্থায়ী নিয়োগ না হওয়ায় চাকরির মেয়াদ শেষ হলে বাড়িতে ফিরে আসেন। তারপর নিজেই এলাকায় ঝিনাইদহ ইসলামিক আইডিয়াল স্কুল নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।
সরেজমিনে ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা স্কুল আঙ্গিনায় সারি সারি বসে আছেন। কেউ কেউ নকশী কাঁথা সেলাই করছেন। ক্লাসে ঢুকতেই দেখা মেলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল¬াহ আল নোমানের। বিভিন্ন জনপ্রিয় কার্টুনের চরিত্রের কণ্ঠ হুবহু নকল করে শিশুদের ক্লাস নিচ্ছেন তিনি। বিনোদনের সঙ্গে চলছে পড়াশোনা। শিশুরাও পাচ্ছে অনাবিল আনন্দ।
এছাড়াও নোমান যে কোনো চরিত্রের মিমিক্রি করতে পারেন। ক্রিকেট বা ফুটবলের ধারা ভাষ্যকারদের মিমিক্রি যে এতো সহজে করা সম্ভব তা নোমানকে না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবে না। সেই সঙ্গে জনপ্রিয় সব গায়কের কণ্ঠের গানও গাইতে পারেন। যা শুনলে সবাই অবাক হন। নোমানের এ সব ভিন্ন—ভিন্ন কণ্ঠের যাদুতে মুগ্ধ এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থীদের অবিভাবক এবং শিক্ষকরা।
পে¬ শ্রেণির ছাত্র রায়হান ঢাকা পোস্টকে বলে, স্যার খুব ভালো। তিনি মটু—পাতলুর গল্প শুনিয়ে পড়ান। আনন্দ দেন। স্যার কোথাও গেলে আমাদের জন্য চকলেট নিয়ে আসেন।
পে¬ শ্রেণির ছাত্র রাজ জানায়, স্যার খুব সুন্দর করে বাংলা ইংরেজি পড়ান। মটু—পাতলুর মতো করে তাদের সাথে কথা বলে আনন্দ দেন। এজন্য প্রতিদিন স্কুল আসে সে।
অভিভাবক স্বপ্না খাতুন জানান, এ বছর দুই সন্তানকে তিনি পে¬ শ্রেণিতে ভর্তি করেছেন। তাদের বাড়ির পাশেও দুটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল আছে। তারপরও নোমান স্যারের স্কুলে ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ সব বিষয়ে পড়ানো হয়। এছাড়াও তিনি বাচ্চাদের মটু—পাতলু এবং বিভিন্ন মানুষের ভাষা অনুকরণ করে আনন্দ দিয়ে পড়ান। এজন্য বাচ্চারাও স্কুলে আসতে খুবই আগ্রহী।
আরেক অভিভাবক শামীমা জাহান ঢাকা পোস্টকে জানান, সবাই তাকে নিয়ে গর্ব করছে। পৃথিবীর অন্যতম কঠিন কাজ হচ্ছে অন্যের কণ্ঠ নকল করা। সে যেভাবে এত সহজে এই কাজটি করছে তা দেখে ও শুনে সবাই হতবাক।
স্কুলের সহকারী শিক্ষক নাজনিন নাহার বলেন, স্যারের কারণে মাত্র এক বছরে আমাদের স্কুলের ছাত্রী—ছাত্রী ১০০ ছাড়িয়েছে। এ এক বিরল প্রতিভা। যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে যখন তখন।
নোমানের স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন জানান, তার স্বামীর এই বিশেষ গুনে তিনি খুবই খুশি। এক সময় তার কাছে বিষয়টি স্বাভাবিক না লাগলেও এখন তিনি এমন ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট পছন্দ করেন ।
আব্দুল¬াহ আল নোমান বলেন, এটা দীর্ঘদিনের চেষ্টার ফল। এর জন্যে আমাকে বছরের পর বছর কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। মিমিক্রি করে শুধু দেশে নয় ভারতেও বেশ জনপ্রিয় হয়েছি।
তিনি বলেন, সাবাইকে আনন্দ দেওয়ার পরও নিজের ভিতরেও দুঃখ রয়েছে। আমি বাংলাদেশের একজন সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি। সর্বোচ্চ ৯ বার করোনা আক্রান্ত হয়েছি। তারপরও করোনা আক্রান্তদের সাহায্য করে গেছি নিজের জীবন বাজি রেখে। কিন্তু কোনো স্বীকৃতি পাইনি।
আব্দুল¬াহ আল নোমান বলেন, নতুন প্রজন্ম যেন বড় হয়ে বাবা—মায়ের দায়িত্ব গ্রহণ করে। বড়দের সম্মান করে। নৈতিক শিক্ষা লাভ করতে পারে। এজন্যই ছোট থেকে সবার মধ্যে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে চাই।
ঝিনাইদহ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর প্যানেল মেয়র সাইফুল ইসলাম মধু বলেন, ঝিনাইদহ সিদ্দিকিয়া সড়কের পাশে ঝিনাইদহ ইসলামিক আইডিয়াল স্কুল। সেই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আব্দুল¬াহ আল নোমান। সেখানে লেখাপড়ার মান অনেক ভালো। এ কারণে পাড়ার ছেলে মেয়েদের পাশাপাশি দূর থেকেও বাচ্চারা সেখানে পড়তে যায়।
নোমান বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপন ও খেলাধুলায় ভালো ধারা ভাষ্য দেয়। এছাড়াও মটু—পাতলু, বিভিন্ন অভিনেতা এবং শিল্পীদের কণ্ঠ অনুকরণ করে আনন্দ দিয়ে পড়াই সে কারণে ছেলেমেয়েরা অনেক খুশি হয়।
তিনি বলেন, নোমান করোনাকালে মানুষকে অনেক সেবা দিয়েছে। এজন্য সারাদেশের মধ্যে সব থেকে বেশি বার করোনা আক্রান্ত হয়েছে। তার বিনিময়ে সে কিছুই পাইনি। এখন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে।