বিএম রুহুল কুদ্দুস শাকিল, সাড়াতলা (শার্শা) : গো—খাদ্যের প্রধান উপকরণ বিচালী। এ বিচালী যশোরের শার্শা অঞ্চল থেকে বাইরের অধিকাংশ জেলা গুলোতে সরবরাহ হওয়ায় ধানের পাশাপাশি বেশ লাভবান হচ্চেন কৃষক। শার্শা মূলত ধান উৎপাদন নির্ভর একটি উপজেলা হওয়ায় এ অঞ্চলে প্রতি মৌসুমে প্রচুর পরিমান ধানের আবাদ হয়। উৎপাদনকৃত ধানের বিচালী স্থানীয় গো—খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ হচ্চে। শার্শায় বিচালী ব্যবসা দিনে দিনে জমজমাট হয়ে উঠচে।
বর্তমান আমন মৌসুমে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের কৃষকের বাড়ি থেকে সরাসরি বিচালী সংগ্রহ করে বাইরের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করচেন। কৃষকের নিকট হতে ক্রয়কৃত বিচালী ব্যবসায়িরা পরিবহন যোগে বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্চেন।
প্রতিদিন উপজেলা থেকে ১৫০—২০০ শত ট্রাক বিচালী বাইরের জেলাতে যাচ্চে। এক ট্রাকে আনুমানিক ৫০০—৬০০ কাউন (৮০ তাড়ি ১ পোন ও ১৬ পোনে ১ কাউন) বিচালি বিক্রি হচ্চে। ধানের পাশাপাশি বাড়তি গো—খাদ্য বিচালীর ভাল দাম পাওয়ায় বিক্রি করে কৃষকও বেশ লাভবান হচ্চেন।
শার্শার ডিহির চন্দ্রপুর গ্রামের কালু মাতব্বর ও শামচুর রহমান, লক্ষণপুর পারুইঘুপি গ্রামের আতিয়ার রহমান ও হেলাল, বাহাদুরপুর বোয়ালিয়া গ্রামের জামাল, জাহাঙ্গীর ও ওলিয়ার, পুটখালী বারোপোতার শাহাবুদ্দিন, গোগার হাফিজুর রহমান, শার্শা স্বরুপদহ গ্রামের হাসেম আলী ও হাফিজুর রহমানসহ শতাধিক স্থানীয় বিচালী ব্যবসায়ী রয়েচেন।
এদের মধ্যে কথা হয় চন্দ্রপুর গ্রামের কালু মাতাব্বরের সাথে। তিনি জানান, শার্শার ১১ টি ইউনিয়নে কৃষকের বাড়ি থেকে তারা সরাসরি বিচালী কিনচেন। বিচালীর মান অনুযায়ী প্রতি কাউন ১৫’শ থেকে ২০—২২’শ টাকায় ক্রয় করচেন। ক্রয়কৃত বিচালী তারা বাইরের জেলার ব্যবসায়িদের নিকট বিক্রি করচেন। তিনি বলেন, সিজনাল এ ব্যবসায়ে উপজেলায় প্রায় শতাধিক স্থানীয় ব্যাপারী রয়েচেন।
বিচালী ব্যবসায়ি ঝিনাইদহ মহেশপুরের নোয়ানীপাড়ার আব্দুস সামাদ ও সাইফুল ইসলাম জানান, শার্শার স্থানীয় বিচালী ব্যবসায়িদের কাচ থেকে প্রতিদিন ১৫০—২০০ শত গাড়ি (আনুমানিক ৫০০—৬০০ কাউন) বিভিন্ন জাতের আমন ধানের বিচালী ট্রাক, আলমসাধু, নচিমন ও করিমন যোগে কিনে নিয়ে যাচ্চেন। ক্রয়কৃত বিচালী ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজবাড়ি, পাংশা, খোকসা, সাতক্ষীরা, খুলনা ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করচেন। চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলা চাড়া বাকি জেলা গুলোতে প্রতি হাজার (১ হাজার তাড়ি) হিসাবে বিক্রয় করে থাকেন। তারা আরও জানান, সরবরাহকৃত ঐসব জেলাতে ধানের আবাদ কম হওয়ায় বিচালী গো—খাদ্য, পানের বরজ, মাঠের ফসলসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। বচরে ধানের দুটি মৌসুমেই তারা বিচালীর ব্যবসা করেন বলে জানান।
ডিহি ইউনিয়নের দরিদূর্গাপুর গ্রামের কৃষক ইমান, ডিহি গ্রামের পল¬ী চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম, তেবাড়িয়ার নূর ইসলাম ও শফি উদ্দিন, বাহাদুরপুর ধান্যখোলা গ্রামের জুব্বার, গোড়পাড়া গ্রামের ইজ্জত আলি সহ অনেক কৃষক জানান, আমন মৌসুমে পোকার আক্রমণে ধানের ফলন কিচুটা খারাপ হয়। এখানকার বিচালী বাইরে যাওয়ায় ভাল দামে বিক্রি করে লোকসান পুশিয়ে তারা বাড়তি লাভবান হচ্চেন। বিচালীর মান ভেদে তারা কাউন প্রতি ১৫ শ হতে ২০—২২ শ টাকায় বিক্রি করচেন। শুরুতে দাম একটু কম পেলেও আস্তে আস্তে বেশি হচ্চে। তবে চলতি বচরের চেয়ে গত বচর অতি বৃষ্টিতে অধিকাংশ স্থানে ধান ও বিচালী নষ্ট হওয়ায় তারা প্রতি কাউন বিচালী সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা দামে বিক্রি করতে পেরেচিলেন। এ বচর দাম যেটা পাচ্চেন সেটাও বেশ সন্তোষজনক বলে তারা জানান। কারণ শার্শার বিচালী বাইরের জেলাতে না গেলে স্থানীয় ভাবে চাহিদা ও দাম অনেক কম থাকতো। সেক্ষেত্রে বড় বড় চাষিদের বিচালী নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হতো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা সমাজের কথাকে বলেন, এবার আমন মৌসুমে শার্শায় ২১ হাজার ৩ শত ৬২ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা চিল ২১ হাজার হেক্টর। যা গত বচর চাষ হয়েচিল ২০ হাজার ৫শ হেক্টর। এ বচর আমন ধানের কাঙ্খিত ভাল ফলন হয়েচে। শার্শা অঞ্চলের কৃষক ভাইয়েরা ধানের পাশাপাশি গো—খাদ্য বিচালী বিক্রি করেও বাড়তি বেশ লাভবান হচ্ছেন।