নিজস্ব প্রতিবেদক : নানা আয়োজনে যশোরের নাট্যগোষ্ঠী রূপকারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় যশোর শিল্পকলার মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গুণীজন সম্মাননা, বার্ষিক পরীক্ষার সনদপত্র, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
নাট্যগোষ্ঠী রূপকারের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হাবিবুর রহমান (কালপুরুষ) স্মরণে সংগঠনটির পথচলায় অবদান রাখা এমন ৬ ব্যক্তি ও সংগঠনকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
কালপুরুষ ২০২৩ সম্মাননা পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন রূপকার নাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাকালীন উপদেষ্টা ও সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ দ্দৌলা, প্রকাশনা উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা অশোক কুমার রায়, প্রতিষ্ঠাকালীন অভিনয় শিল্পী কবি কাসেদুজ্জামান সেলিম, প্রতিষ্ঠাকালীন কন্ঠশিল্পী মঞ্জুর কাদের মঞ্জু ও শাহানারা রব, নাট্যগোষ্ঠী হিসাবে বিবর্তন যশোর। অনুষ্ঠানে এসব গুণীজন ও সংগঠনকে কালপুরুষ সম্মাননা পদক তুলে দেন প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খালেদা খাতুন রেখা।
এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ে পেঁৗছে গেছি, সেখানে এক ক্লিকেই সারা বিশ্বকে জানতে পারি। সাংস্কৃতিক সংগঠন রূপকারের যখন জন্ম হয়েছিলো; তখন এখানে উপস্থিত অনেকের জন্মই হয়নি। যারা আজকে সংবর্ধিত হয়েছেন তারা সেই সময়কালের সাক্ষী। এর মাঝে সময়টা অতিক্রান্ত হয়েছে সেই সময়েরও সাক্ষী। কাজেই তাদের অভিজ্ঞতা, তাদের দক্ষতা আমাদের নতুন প্রজন্মের প্রয়োজন।
আমাদের নতুন প্রজন্মের ধৈর্য্যশক্তি অনেক কম। কারণ তারা অল্প পরিশ্রমে অনেক কিছু পেয়ে যাচ্ছে। আমরা অনেক উন্নত সম্মৃদ্ধ সময়ে পেঁৗছে গিয়েছি। আর এই সময়টাকে সমৃদ্ধ করেছেন এই সব গুণী মানুষেরা। কাজেই আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে ভষিষ্যত পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিতে হলে তাদেরকে এই অভিজ্ঞতা দক্ষতা জীবনের গল্প শুনতে হবে; ধারণ করতে হবে। আমরা যদি সেগুলো শুনতে পারি, মানতে পারি, ধারণ করতে পারি তাহলেই আদর্শ মানুষ গড়ে তোলার পাশাপাশি সমাজটাও আলোকিত করতে পারবো।
সম্মাননাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ দ্দৌলা বলেন, ‘নাট্যগোষ্ঠী রূপকারের প্রতিষ্ঠাতা হাবিবুর রহমান যিনি হবি ভাই হিসাবেই পরিচিত। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষ ছিলো। তিনি সমাজের নানা অসংগতির বিরুদ্ধে নানা নাটক রচনা করেছেন। মানুষের কষ্ট, সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে তিনি নাটক রচনা করেছেন। তার সঙ্গে অনেক স্মৃতি রয়েছে; সেটা ভুলবার নয়। তিনি একজন আদর্শ জনপ্রতিনিধি ছিলেন। উপশহরকে তিনি নান্দনিকভাবে গড়ে তুলেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা অশোক কুমার রায় বলেন, ‘হাবিবুর রহমান সমাজের আইকন। তিনি যেমন একজন জনপ্রতিনিধি; আবার মুক্ত চিন্তার প্রতীক ছিলেন। সমাজ বিনির্মাণে তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি সাংস্কৃতিক চর্চা করেছেন। নাটকের মাধ্যমে সমাজের নানা অসংগতি তুলে ধরেছিলেন তিনি।’
রূপকার যশোরের সভাপতি হায়দার আলীর সভাপতিত্বে অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি দীপংকর দাস রতন, বৃষ্টিবন্ধন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ড. সবুজ শামীম আহসান, যশোর দাউদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক কামরুজ্জামান আজাদ, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার সুন্দরবন অঞ্চলের সমন্বয়ক হাসান হাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সদস্যদের পরিবেশনায় মন মাতানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
একের পর এক দলীয় নৃত্য, কবিতা, গানে মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠানে মাতেন শিল্পকলার মিলনায়নে আগত দর্শক ও অতিথিবৃন্দ। এর আগে দুপুর থেকে শিল্পকলার আর্ট গ্যালারিতে চলে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। সেখানে গ্রামীণ বাংলার লোকজ সংস্কৃত থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন পটভূমির দৃশ্য উঠে আসে কচি—কাঁচাদের রং পেন্সিলে। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার ও বার্ষিক পরীক্ষার সনদপত্র তুলে দেন প্রধান অতিথিসহ অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠান শেষে বিবর্তন যশোরের নাটক ‘বিবাহ প্রস্তাব’ মঞ্চস্থ হয়।