জিয়াউর রহমান জিয়া, নেংগুড়াহাট (মনিরামপুর) প্রতিনিধি : মনিরামপুর উপজেলা নেংগুড়াহাট বাজারের লক্ষণপুর রোডের অসীম ডাক্তারের দোকানের পাশে বুধবার দেখা যায় ইটের উপর বসে চুল কাটাচ্ছেন একজন, যিনি কাটছেন তিনি দুই পায়ের উপর বসে আছেন। এক সময় প্রতিটি হাটেই এ দৃশ্য দেখা যেত।
মানুষ স্বভাবগতই সুন্দরের পূজারী। চুল—দাঁড়ি মানুষের সৌন্দর্য বহন করে,এই চুল—দাঁড়ি নিয়ে যুগে যুগে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। এই কারণেই নরসুন্দরদের কদর ও প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। চুল—দাঁড়ি কেটে মানুষকে সুশ্রী করা যাদের কাজ,তারাই হলেন নরসুন্দর।
সভ্যতার ক্রমবিবর্তনে রাস্তার পাশের নবসুন্দররা এখন অতীত। তাদের স্থান দখল করেছে আধুনিক সেলুন ও পার্লার। আধুনিকতায় টিকতে না পারলেও বয়ঃবৃদ্ধ নবসুন্দর যারা জীাবকার তাগিদে এখনো ধরে আছেন পুরনো পেশা তাদের এখনো দেখা মেলে হাট—বাজারে, খেয়াঘাটে, ফুটপাতের কিংবা গ্রামগঞ্জের জলচৌকিতে বা ইটের ওপর সাজানো পিঁড়িতে বসে চুল—দাঁড়ি কাটতে।
নেংগুড়াহাটের লক্ষণপুর রোডের নরসুন্দর কেশবপুর উপজেলার মুল গ্রামের মৃত মাধবচন্দ্র বিশ্বাস ছেলে নিমাই চন্দ্র বিশ্বাস। বয়স ৭৫। বাপ দাদার হাত ধরে রেখেছেন ৫০ থেকে ৬০বছর, কেশবপুর,মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট—বাজার ঘুরে এখনো চুল দাঁড়ি কাটেন নিমাই চন্দ্র বিশ্বাস। হতাশার সুরে তিনি জানান, বাপ দাদার পেশা ধরে রেখেছি কিন্তু ক্রেতা পাওয়া যায় না। এখন আর এমন কেউ নেই, যারা হাটে—বাজারে খোলা আকাশের নিচে বসে চুল—দাঁড়ি কাটেন। সংসার চলা তো দূরের কথা চিরুনি, সাবান, ফিটকিরি, পাউডার ও লোশন কেনার টাকায় হচ্ছে না।
তিনি জানান, অনেক বছর আগে চুল কাটা বাবদ দিতে হতো চার পয়সা আর দাঁড়ি কাটার জন্য দু—পয়সা সে সময় যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলতো, কিন্তু বর্তমানে ৩০টাকায় চুল ও ১০টাকা দাঁড়ি কেটেও সারা দিন যে টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে সাংসারিক ব্যয় নির্বাহ করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অতীতের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, পূর্বে আমরা বার্ষিক চুক্তিতে কাজ করতাম,কিন্তু বর্তমানে সেই নিয়ম নেই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন,বর্তমানে যে পরিবর্তন এসেছে,চুল—দাঁড়ি কাটার সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতিও পরিবর্তন হয়েছে। সে সব সেলুনে এখন আর শান দেওয়া ক্ষুর দেখাই যায় না,তার বদলে এসেছে বে¬ড লাগানো ক্ষুর। এসেছে শেভিং ক্রিম, লোশন বে¬ায়ার, চুলের কলপ। তিনি যখন এ কাজ শুরু করেছিলেন তখন এগুলো ছিল কল্পনাতীত।
নেংগুড়াহাট বাজারের ধান ব্যবসায়ী ইউনুস আলী মোড়ল বলেন,এখন তো উপজেলায় অনেক আধুনিক সেলুন আছে। কিন্তু যখনই বাজারে যাই,ওই চুল কাটা দেখলে ছোট বেলার কথা মনে পড়ে যায়। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন নরসুন্দর হাঁটু দিয়ে আমাদের চাপ দিয়ে ধরতো, যেন নড়াচড়া না করতে পারি। ফলে যখন চুল কাটতো,তখন তার হাঁটুর ওপর ঘুমিয়ে পড়তাম।
নেংগুড়াহাট বাজারে ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ী মশিউর রহমান বলেন, ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে হাটে যেতাম। চুল কাটাতে বাজারে আসতাম। এখন রাস্তার পাশে চুল—দাঁড়ি কেউ কাটায় না, ছেলে—মেয়েদের চুল ও কাটায় আধুনিক সেলুন গুলোতে। আমরা এখনো এ দৃশ্য নিজের চোখে দেখলেও এমন একটা সময় আসবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিছকই গল্পই মনে হবে।