নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর বোর্ডে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহের কার্যাদেশ প্রদানে বড়ধরণের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এক কোটি ৩০ লাখ উত্তরপত্র সরবরাহের এই কাজে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দেয়ায় বোর্ডে আর্থিক ক্ষতি হবে দুই কোটি টাকার বেশি। সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, গোপন আঁতাতের মাধ্যমে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দিয়ে বোর্ডের আর্থিক ক্ষতি হলেও কতিপয় কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবেন। তবে বোর্ড কতৃর্পক্ষ বলছে, সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় এবং শর্তপূরণ না করায় তারা কার্যাদেশ পাননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ২০২৪ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহের জন্য গত নভেম্বর মাসে দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্র অনুযায়ী, ওএমআরসহ মূল উত্তরপত্র ৪৫ লাখ, এমসিকিউ ওএমআর শিট ৪৫ লাখ, অতিরিক্ত উত্তরপত্র ৩০ লাখ এবং ব্যবহারিক উত্তরপত্র ১০ লাখ সরবরাহের এই দরপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গত ২০ নভেম্বর।
দরপত্রে সর্বনিম্ন দর দাখিল করে এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস ১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এছাড়া এলিট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজেস লি. ১৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা, বাংলাদেশে মনোসপুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কো. লি. ১৬ কোটি ৬৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫শ’ টাকা, প্রিন্ট মাস্টার প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লি. ১৬ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং মাস্টার সিমেক্স পেপার লি. ১৬ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা দর দাখিল করে।
বোর্ড সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস সর্বনিম্ন ১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা দর দাখিল করলেও কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে এলিট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজেস লি’কে। যাদের দর ১৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা; যা এশিয়া’র চেয়ে দুই কোটি ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বেশি।
সূত্রের অভিযোগ, দরপত্র আহ্বানের আগেই এলিট প্রিন্টিংয়ের সাথে কতৃর্পক্ষের আঁতাত হয়েছে। এ কারণে প্রায় ১১ কোটি টাকার এই কাজের জন্য ১২ কোটি টাকার কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতার শর্ত সংযুক্ত করা হয়েছে। এই শর্তের বেড়াজালে আটকে সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে বোর্ডের দুই কোটির বেশি টাকা বাড়তি ব্যয় হলেও লাভবান হবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস’র স্বত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান অভিযোগ করেন, তিনি একাধিক বোর্ডে এই উত্তরপত্র সরবরাহের কাজ করেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান একশ’ কোটি টাকার কাজে ১৫ কোটি টাকার কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা চায়। সেখানে যশোর বোর্ড ১১ কোটি টাকার কাজে ১২ কোটি টাকার পূর্ব অভিজ্ঞতা চেয়েছে; যা সন্দেহজনক। এবং এই অযুহাতে তাকে বাদ দিয়ে দুই কোটি টাকার বেশি বাড়তি ব্যয় করে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দিয়েছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গোপন আঁতাত করে এই কাজটি করেছেন। এতে তারা লাভবান হলেও বোর্ডের ক্ষতি হবে দুই কোটি ১২ লাখ টাকা। এ জন্য তিনি এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব দাবি করেছেন, পিপিআর মেনে এই কাজে ১২ কোটি টাকার একক কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। দরপত্রের শর্ত পূরণ না করায় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।
তবে বোর্ড চেয়ারম্যান আরও দাবি করেন, সর্বনিম্ন দরদাতা এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস কয়েকটি স্থানে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে। কুমিল্লা বোর্ড প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দিয়ে বিড়ম্বনায় রয়েছে। যেহেতু কাজটি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহের। এজন্য নির্ধারিত সময়ে কাজটি বুঝে পাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একারণে বোর্ড কোনো ঝঁুকি নিতে চায়নি।
তবে বোর্ড চেয়ারম্যানের এই দাবির ব্যাপারে এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস’র স্বত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান বলেন, কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার তথ্যটি সত্য নয়। আর কুমিল্লা বোর্ডের কাজও তিনি যথাযথভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। যশোর বোর্ড কতৃর্পক্ষ নিজেদের ত্রুটি ঢাকতে তার প্রতিষ্ঠানকে অহেতুক দোষারোপ করছে।