নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে শ্বেত পোশাকে শতকন্ঠে বাউল ও লালন সংগীত উৎসবের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রতিবাদী অনুষ্ঠান। রোববার সন্ধ্যায় শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা ভৈরব চত্বরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মরমি কবি ফকির লালন সাঁইজির গানের লাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়ার ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে এক যুবককে আটকের প্রতিবাদে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন শিল্পী ও সাংস্কৃতিককর্মীসহ সাধারণ মানুষ। এ কর্মসূচি থেকে গানে গানে শিল্পীরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠান শুরম্নতে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু। সংগীত উৎসব চলার মাঝে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দীপংকর দাস রতন।
বক্তারা বলেন, ‘আমাদের দেশের যে-সব মানুষ ঐক্যের বাংলাদেশ চায় না, তারা লালনের দর্শনের বিরোধিতা করে নানা ধরনের চক্রাšেত্মর সৃষ্টি করছেন। তাদের অপতৎপরতায় বিভিন্ন সময়ে বাউলদের চুল কেটে দেওয়া, বাদ্যযন্ত্র ভেঙে দেওয়াসহ নানা সময় বাধা প্রদান করা হয়েছে। এখন যখন কেউ ফেসবুকে লালনের দর্শন প্রচার করে, তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করার সময় তারা একবারও ভাবলেন না যে, এর মধ্যে মূলত লালনকে অপমান করা হচ্ছে। আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা কখনো এ ধরনের অপতৎপরতা গ্রহণ করতে পারি না।
বক্তারা আরও বলেন, লালনের আদর্শ এত শক্তিশালী যে আমরা মনে করি তার গান একটি মিছিলের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। তাই আমরা প্রতিবাদের এই ভাষাকেই বেছে নিয়েছি। এজন্যই এই লালন তথা বাউল সংগীত প্রচারের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও বেগবান কররে চাই।’
সন্ধ্যা ৬টা থেকে এই লালন সংগীত উৎসবে জেলার সব বাউল / বাউল শিল্পীদের সাথে কয়েকশ শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মী মেতে ওঠেন। সাদা পোশাকে এই অহিংস প্রতিবাদ সকলকের কাছেই অনুপ্রেরণা।
উলেস্নখ্য, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের সঞ্জয় রক্ষিত নামের ওই ব্যক্তি পরে জামিন পেলেও এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়। সঞ্জয়ের পোস্টে লেখা ছিল, ‘ছুন্নত দিলে হয় মুসলমান/ নারীর তবে কী হয় বিধান’। এই পোস্ট ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে, এমন অভিযোগ তুলে তার বাড়ির সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন একদল ব্যক্তি। একপর্যায়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন জামিনে কারামুক্ত হন সঞ্জয় রক্ষিত।