২০শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যশোরে শীতের দাপটে হাড়ে কাঁপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে অব্যাহত শীতের মাঝে দিনভর বৃষ্টিপাতে আরও জেঁকে বসেছে শীত। তাপমাত্রা দশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশে পাশে ঘোরাফেরা করলেও বৃষ্টির দাপটে বেড়েছে দুর্ভোগ আর কষ্টের মাত্রা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে যশোরে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বইছে মৃদ শৈত্যপ্রবাহ। এরই মাঝে বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে শুরু হয় বৃষ্টি। যা পরে মাঝারি বৃষ্টিপাতে রূপ নেয়। বৃষ্টি চলে প্রায় তিন ঘণ্টা। এরপর দিনভর থেমে থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

মৃদু শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে এই বৃষ্টি শীতের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিয়েছে দ্বিগুণ। এদিন তাপমাত্রা খুব একটা নিচে না নামলেও কনকনে ঠান্ডা অনুভব হয়েছে। সারাদিনে দেখা মেলেনি সূর্যের। এদিন যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন শীত আরও কয়েক দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।

যশোর বিমান বাহিনীর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার যশোরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহ থেকে দুই দফা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায় যশোরের ওপর দিয়ে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্ববাস অনুযায়ী বৃহস্পতিবার শীতের মধ্যে বৃষ্টি নামে। কয়েক কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে এই বৃষ্টি যেন শীতের দাপটকে বাড়িয়েছে দ্বিগুণ। দিনভর কোথাও সূর্যের মুখ দেখা যায়নি।

মাঝে মধ্যে ঠান্ডা বাতাস কাঁপিয়ে তুলছে জেলার ছিন্নমূল মানুষগুলোকে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে পথে—ঘাটে থাকা এই মানুষগুলো দুর্বিসহ দিন পার করছেন। যশোরে রেলস্টেশন ও ফুটপথগুলোতে ছিন্নমূল মানুষকে কম্বল মুড়ি দিয়ে থাকতে দেখা গেছে। শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড়, হাত—পায়ের মোজা, টুপি, মাফলার, জ্যাকেটের চাহিদা বেড়েছে।

শামসুর রহমান নামে এক এনজিও কর্মকর্তা বলেন, ‘একে তো তীব্র শীত, তার ওপর আবার বৃষ্টি। দু’য়ে মিলে স্বাভাবিক কাজকর্ম যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। ছেলে—মেয়েদের স্কুলে আনা দুর্ভোগ, অফিস যাতায়াতে দুর্ভোগ’।

শহরের মুজিব সড়কে কথা হয় ইজিবাইক চালক নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোরে শীতের সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। তার সঙ্গে বাতাস তো আছে। বৃষ্টি ও শীতে কারণে ইজিবাইক চালাতে কষ্ট হচ্ছে।’

মিজানুর রহমান নামে এক পথচারী বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। এর মধ্যে বৃষ্টিতে আজ শীতের তীব্রতা একটু বেশি। হাত পা শীতল হয়ে গেছে। গরম কাপড়ের সঙ্গে হাত মোজা, পায়ের মোজা পড়লেও স্বস্তি মিলছে না।

আক্কাস আলী নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘তিনটি শার্ট, দুটি প্যান্ট, মোজা পড়ছি। সেই সঙ্গে মাফলার ও মাথায় টুপি দিয়ে কান মুখ ঢেকে রেখেছি। এরপরও শীতে কাবু হয়ে যাচ্ছি। একটি ট্রিপ দিলে হাত—পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। পেটের দায়ে এত শীতের মধ্যেও বের হতে হয়েছে।

কাদের আলী নামে এক রিকসা চালক বলেন, ‘গ্যালোবারের চাইতি এবেড্ডা শীতটা বেশি মনে হচ্ছে। তার মদ্দি (মধ্যে) বৃষ্টিতি আবার শীত আট্টু বাড়ায়ে দি গেল, ভাড়া মারবানি কিয়েইরে আজকে, তা কবেন কিডা।’ শহরের রেল স্টেশন এলাকার মাছ বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পানি বরপের মতো ঠান্ডা। ঘেরে লাবলিই জমে যাওয়ার মতন অবস্তা। তাই এক—দু দিন পরপর মাছ ধরতি যাচ্চি। ডেলি ঘেরে লাবলি ঠান্ডায় মইরে যাতি হবে।’

এদিকে, শীতের প্রকোপে রোগীর চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। বেশি রোগাক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে অসুস্থ শিশুদের চাপও বেড়েছে।

বর্তমানে এই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ৭০—৮০ ভাগই শীতজনিত কারণে অসুস্থ। তাদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। আবার শীতজনিত কারণে মারা গেলেও পরিসংখ্যান ওইভাবে করা সম্ভব হয় না। কারণ, শীতের কারণেই রোগীর অ্যাজমা সমস্যা বাড়ে, কাশি বাড়ে, জ্বর থেকে নিউমোনিয়া হয়। কিন্তু মারা গেলে এসব রোগই শনাক্ত করা হয়। তখন তা শীতজনিত কারণে বলা সম্ভব হয় না।’

এই বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রিজিবুল ইসলাম জানান, জেলার অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য ৬১ হাজার কম্বল বরাদ্দ ছিলো। তার মধ্যে ৫৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও আরও ৭৫ হাজার কম্বলের চাহিদার কথা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

সরকারি কম্বল ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কম্বল বিতরণ করছে। তবে সেটা অনেক কম। তাই সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনকে শীতার্ত মানুষের মাঝে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram