নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক অভিযানে নামছে প্রশাসন। এক সপ্তাহের এই অভিযানে জেলার আট উপজেলা ও পৌর এলাকায় মশক নিধন, পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হবে।
আগামী ২৯ অক্টোবর এই অভিযানে নামছে যশোর জেলা প্রশাসন। ৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলা এ অভিযানে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার সমন্বয়ে গঠিত টিম প্রতিটি এলাকা ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে এডিস মশার আবাসস্থল চিহ্নিত ও ধ্বংস করা; মশক নিধন করা এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করবে।
সর্বাত্মক এই অভিযানের মাধ্যমে যশোরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার।
যশোর জেলা প্রশাসন আয়োজিত ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ পালন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভায় সর্বাত্মক অভিযানের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বুধবার বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ ‘অমিত্রাক্ষরে’ অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। সভা পরিচালনা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগ যশোরের উপপরিচালক রফিকুল হাসান।
সভায় যশোরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি তুলে ধরেন ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ ও সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. রেহেনেওয়াজ। তথ্য অনুযায়ী এ বছর যশোর জেলায় মোট ৩ হাজার ২১৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ যশোর সদর উপজেলায় ১ হাজার ৪৫৩ জন।
সদরের বাইরে অভয়নগর উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭৩ জন ও কেশবপুর উপজেলায় ৪০২ জন। রোগী মারা গেছেন ১২ জন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুণ অর রশিদ জানান, বুধবার যশোর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল ৮০ জন। এ বছর একদিনে সর্বোচ্চ ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৫। গত দুই মাসে যশোরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
যশোর হাসপাতালে সদর ও বাঘারপাড়া উপজেলার রোগীর সংখ্যা বেশি। অভয়নগরের অনেক রোগী খুলনাতে চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি ৮০ রোগীর মধ্যে ২৪জন যশোর পৌর এলাকার।
এর মধ্যে ঘোপ, বেজপাড়া, খড়কি, আশ্রম রোড এলাকার রোগী বেশি থাকলেও পৌর এলাকার প্রায় সব জায়গারই রোগী রয়েছে। বিশেষ করে পৌর এলাকার জনবহুল ও ভবন নির্মাণাধীন এলাকাগুলোতে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বেশি।
সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, যশোর সদরের বাইরে অভয়নগর উপজেলা ডেঙ্গুর হটস্পট। বিশেষ করে নওয়াপাড়া পৌরসভা এবং শুভরাড়া ও প্রেমবাগ ইউনিয়নে অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সপ্তাহব্যাপী সর্বাত্মক অভিযানের পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডেঙ্গু প্রতিরোধে যশোরের সকল পৌর এলাকায় ২৯ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ পালন করা হবে।
প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলবে এ পরিচ্ছন্নতা অভিযান। পৌরসভা থেকে পূর্ব নির্ধারিত ওয়ার্ডে চলবে পরিচ্ছন্নতার সমন্বিত কর্মসূচি। জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার সমন্বয়ে গঠিত টিম প্রতিটি এলাকা ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে এডিস মশার আবাসস্থল চিহ্নিত ও ধ্বংস করা; মশক নিধন করা এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করবে।
প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, পৌর মেয়র, কাউন্সিলরবৃন্দ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে অভিযানের টিম গঠন করা হবে। এই টিম পৌরসভার ওয়ার্ডগুলোতে ধারাবাহিকভাবে অভিযান পরিচালনা করবে। অভিযানের আগে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে মাইকিং করা হবে।
পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহের উদ্বোধনী দিন ২৯ অক্টোবর রোববার সকাল দশটায় কালেক্টরেট সভাকক্ষে সরকারি বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি—পেশার মানুষের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর কালেক্টরেট চত্বর থেকে বের করা হবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা শেষে যশোর পৌরসভা থেকে নির্ধারিত ওয়ার্ডে বাস্তবায়ন করা হবে পরিচ্ছন্নতার সমন্বিত কর্মসূচি।
সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, সমন্বিতভাবে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হবে। পৌরসভা ও স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মিলনে টিমের সদস্যরা প্রতিটি এলাকা ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে এডিস মশার আবাসস্থল চিহ্নিত ও ধ্বংস; মশক নিধন এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করবেন।
পাশাপাশি পৌরসভার টিম প্রতিটি এলাকায় মশার প্রজনন ও আবাসক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করবে। যা পরবর্তীতে মশক নিধন অভিযানের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। উপজেলা ও পৌর এলাকার পাশাপাশি পরবর্তীতে ইউনিয়নপর্যায়েও এই কার্যক্রম চলবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার উল্লেখ করেন, এই অভিযানে এডিস মশার আবাসস্থল চিহ্নিত ও ধ্বংস এবং মশক নিধনের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
যাতে সাধারণ মানুষ নিজের বাড়ি ও আশপাশের এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখেন; জমে থাকা পানি অপসারণ করেন এবং মশার আবাসস্থল ধ্বংস করেন।
সভায় বক্তৃতা করেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এ এইচ এম মুযহারুল ইসলাম মন্টু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফিরোজ কবির, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, যশোর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু নাছির, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জেল হোসেন খান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. রেহেনেওয়াজ, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক, প্রেসক্লাব যশোরের যুগ্ম সম্পাদক মিলন রহমান, জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক জি এম সেলিম, বড়বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মীর মোশাররফ হোসেন বাবু, যশোর পৌরসভার প্রকৌশলী কামাল আহমেদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুন্ডু প্রমুখ।
সভায় বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।