২০শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যশোরের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা

সাইফুল ইসলাম : যশোরে শৈত্যপ্রবাহের কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার তাপমাত্রা দশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় এবং এই ধারা অব্যাহত থাকার পূর্বাভাসে মঙ্গলবার জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার রাতে জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার একদিনের জন্য শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, মৃদু শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে যশোর। জবুথবু অবস্থায় প্রাণীকুলের। এরইমধ্যে জেলাতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। সোমবার (২২ জানুয়ারি) যশোরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, যশোরে সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ মৌসুমে এটাই এই জেলাটিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এছাড়া বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৯৫ শতাংশ। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষ। যদিও দুপুরের পর সূর্যের মুখ দেখা গিয়েছিল, কিন্তু প্রখরতা খুব বেশি একটা দেখা যায়নি। সঙ্গে হিমেল বাতাসের প্রভাব আরও নাজেহাল করে তোলে মানুষকে।

শীতের এমন অবস্থার মধ্যে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও সোমবার জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক দিনের মতো ক্লাস পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তবে উপস্থিতির অর্ধেকে নেমেছে বলে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার শীতের কারণে যশোরে মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করলো সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগ।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মঙ্গলবারও যশোরে শৈত্যপ্রবাহের একই ধারা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পূর্বাভাস আমলে নিয়ে সোমবার রাতে স্কুল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।

যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হোসেন বলেন, ‘বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মঙ্গলবার জেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যশোর জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে— চলমান এ শৈত্যপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। যশোর জেলার দিনের তাপমাত্রা সোমবার ৯ দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আগামীকাল মঙ্গলবার দিনের তাপমাত্রা একই রকম থাকতে পারে। এ প্রেক্ষিতে ২৩ জানুয়ারি জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয়ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন খান জানান, জেলার তাপমাত্রা দশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী মঙ্গলবার জেলার এক হাজার ২৮৯টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

এদিকে, শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেই সোমবার যশোরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা ছিল। সকালে সরেজমিনে যশোর জিলা স্কুল, কালেক্টরেট স্কুল, যশোর ইনস্টিটিউট স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা পর্যায়েও খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও স্কুল খোলা ছিল। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও উপস্থিতি ছিল কম। তারপরও সকাল তীব্র শীত উপেক্ষা করে শিশুদের স্কুলে নিয়ে আসছেন অভিভাবকেরা।
হাসমী সাজু নামে এক অভিভাবক বলেন, হাড়কাঁপানো শীত, তবুও স্কুল খোলা। সকালে বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে গিয়েছিলাম এখন নিয়ে যাচ্ছি। স্কুল খোলা থাকলে, ক্লাস মিস দিলে সমস্যা। এমন ঠান্ডায় বন্ধ করা উচিত, না হলে খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে বাচ্চাদের জন্য।

মারুফ হোসেন নামে এক অভিভাবক বলেন, হাড়কাঁপানো শীত, তবুও স্কুল খোলা। সকালে বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে গিয়েছিলাম, এখন নিয়ে যাচ্ছি। স্কুল খোলা থাকলে, ক্লাস মিস দিলে সমস্যা। এমন ঠান্ডায় বন্ধ করা উচিত, না হলে খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে বাচ্চাদের জন্য।

অপর একজন অভিবাবক শেখ কিবরিয়া বলেন, আজ যশোরে বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তারপরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ হয়নি। এ অবস্থার মধ্যে আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুল কলেজে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে খুব ভালো হতো।

এদিকে, শীতের দাপটে এদিন সকাল থেকে যশোর শহরের সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি অনেকটাই কম দেখা গেছে। শীত আবহাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা।

প্রায় ৮ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে কাজের আশায় শহরের লালদীঘি পাড়ে এসেছিলেন সদরের সতীঘাটা এলাকার মনিরুল ইসলাম। জবুথবু হয়ে বসে থাকা এ দিনমজুর জানান, সকাল ৬টার দিকে রাস্তায় ঘন কুয়াশা থাকছে। গাড়ির হেডলাইটও ঠিক মত দেখা যাচ্ছিল না। এরমধ্যেই তীব্র শীতকে উপক্ষো করে দীঘি পাড়ে আসলেও, আসছেন না মহাজনরা। ফলে কাজ মিলছে না।

রিকশা চালক মহিদুল ইসলাম বলেন, রাস্তায় সকাল ৮টা—৯টার আগে মানুষজনের চলাচল তেমন নেই। এরপর কিছু মানুষ বের হলেও সংখ্যায় কম। তারা আবার সন্ধ্যা না হতেই ফিরে যাচ্ছেন। এতে আগে যেখানে ৭—৮শ’ টাকা আয় হতো, এখন তা ৩শ’ সাড়ে ৩শ’ তে নেমেছে।

চা দোকানি শহিদুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকান খুলে রাখলেও ঠান্ডার কারণে মানুষ বেশী আসছে না। আসলেও তারা অল্প সময় বসছেন। এতে কেনাবেচা কমে গেছে। কিন্তু আমাদেরতো উপায় নেই।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram