# মানববন্ধন, উপাচার্যকে স্মারকলিপি
যবিপ্রবি প্রতিনিধি : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) হলের আবাসিক এক শিক্ষার্থীকে গভীর রাতে নির্যাতনের ঘটনায় বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচে এই কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে ঘেরাও করে; পরে জড়িতদের শাস্তির আশ্বাস দিলে উপাচার্যের পথ ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা। এসময় আন্দোলনকারীরা ছয় দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপিও প্রদান করেন। কর্মসূচিতে উপস্থিত অনেক শিক্ষার্থীকে লুঙ্গি পরে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়।
এদিকে, এই ঘটনায় ভুক্তিভোগী শিক্ষার্থী থানার অভিযোগ দেওয়ার তিন দিন পার হলেও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনার সঙ্গে নেতাকর্মীদের কোন সংপৃক্ততা নেই দাবি করেছে ছাত্রলীগের। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপর উদ্দেশ্যপ্রণোদীতভাবে দোষারোপ করছেন একটি পক্ষ বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
<<আরও পড়তে পারেন>> সালাম না দেয়ায় শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে যবিপ্রবির শহীদ মসীয়ূর রহমান (শ. ম. র.) হলের ৩০৮ নম্বর কক্ষে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার সামনে লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় চলাচল এবং সালাম না দেওয়ায় মাঞ্জুরুল হাসান নামে হলের আবাসিক এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পর ওই শিক্ষার্থী যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় গত শনিবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যশোর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন এবং হলের প্রভোস্ট বরাবর পৃথক লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে অভিযুক্তরা হলেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা, ছাত্রলীগ কর্মী ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ফয়সাল আহমেদ, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ইসাদ হোসেন, আল আমিন, শেখ বিপুল হাসান ও মুশফিক, ফার্মেসী বিভাগের রাইসুল হক রানা। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরও কয়েকজনকে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল কবীর দ্বীপ স্বাক্ষরিত ৬ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপিতে উলে¬খ করা হয়, মাঞ্জুরুল হাসানের উপর হামলাকারীদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আগামী তিনদিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত শিক্ষার্থী ও অছাত্রদের হল থেকে বের করতে হবে।
৬ ফেব্র“য়ারি ফিশারীজ এন্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের ছাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ ও করুচিপূর্ণ মন্তব্যকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। হলগুলোকে মাদকমুক্ত রাখতে হবে, হলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রত্যেক ফ্লোরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ হতে আইনি সহযোগিতা ও মামলার সকল ব্যয়ভার বহন করতে হবে।
এদিকে, ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কোন সংপৃক্ততা নেই দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনের (টিএসসি) দ্বিতীয় তলায় এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় দুই বন্ধুর মধ্যে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে একটি পক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদীতভাবে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে বলে দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সালসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল বলেন, ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ নেতাকর্মীদের কোন সংপৃক্ততা নেই। প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধানে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। কেউ দোষী প্রমানিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি নাজমুস সাকিব বলেন, যখন শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ২০—৩০ জন কর্মীকে নিয়ে সভাপতির রুমে হামলা করে তখন আমি পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত হই। আমি এ ঘটনার সুস্থ্য তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
এবিষয়ে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস. এম. ইকরামুল কবির দ্বীপ বলেন, আমি সহ আমার বিভাগের ছোট ভাইয়েরা সভাপতির ৩০৬ নং কক্ষে জানতে গিয়েছিলাম আমার ছোট ভাই মঞ্জুরুলকে কেনো মারা হয়েছে? কিন্তু তারা সিনক্রিয়েট করলে আমি সেখান থেকে চলে আসি। আর নাজমুস সাকিব তো সেখানে ছিলই না। তাকে হেনস্তা করার কোনো প্রশ্নই উঠে না।
এদিকে ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা এ ঘটনার বিষয়ে বলেন, ছাত্রলীগের কিছু বিপদগামী নেতাকর্মী ও অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য ও বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। এর আগেও এমন বদনাম করার চেষ্টা করা হয়েছে। যে শিক্ষার্থী আমার নামে থানায় জিডি করেছে তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনিও না। ক্যাম্পাস রাজনীতির গ্র“পিংয়ে বলি হয়ে আমাকে দোষারাপ করা হচ্ছে’।
এই বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ হয়েছে কিনা জানি না। কাউকে আটকও করা হয়নি। এই ঘটনায় কোন মামলাও রুজু হয়নি।'