মেহেরপুর প্রতিনিধি : দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বীজ উৎপাদন খামার মেহেরপুরের বারাদি খামারের উপ পরিচালকের বিরুদ্ধে নানা উপায়ে অর্থ আত্মসাৎ ও দায়ীত্বহীনতার অভিযোগ উঠেছে। তার দায়িত্বহীনতার কারণে পচে নষ্ট হয়ে গেছে ৫শ মণ বীজ আলু। খামারে উৎপাদিত ধানের বিচালী বিক্রিতে অনিয়ম করে রাষ্ট্রীয় খাতে নামমাত্রও অর্থ জমা দেওয়া হয়েছেন মর্মেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া নিয়মিত শ্রমিক না লাগিয়ে অনিয়মিত শ্রমিকদের নামে নিয়মিত টাকা তোলারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানাগেছে, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের বারাদিতে ৪০০ একর জমি নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের আওতায় বারাদি বীজ উৎপাদন খামার। এখানে প্রতিবছর আমন, বোরো, হাইব্রিড ধান, গম, ভুট্টা ও আলু বীজ উৎপাদন করা হয়। যা দেশের বীজের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখে।
বিভিন্ন সূত্র মারফত জানাগেছে, বারাদি খামারে আমন মৌসুমে ২২০ একর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়। খামারের শ্রমিকদের কাছে ওই ধানের প্রতি একরের বিচালী ৫ হাজার টাকায় এবং বহিরাগতদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকায়। একর প্রতি ৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হলেও ২২০ একরের বিচালীর দাম হয় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। অথচ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বিচালী বিক্রি বাবদ জমা করা হয়েছে ৫৭ হাজার টাকা। একটি সূত্রের দাবি ২ লাখের অধিক টাকার বিচালী বিক্রি হয়েছে।
নাম প্রকাশে না করার শর্তে খামারের বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, খামারের ১৪০জন শ্রমিক একটি ব্লকের ১০০ একর জমির বিচালী কিনেছেন। খামারের শ্রমিক হিসেবে তাদের কাছে একর প্রতি দাম নেওয়া হয়েছে ৫ হাজার টাকা করে। বাকী বিচালী বহিরাগতদের কাছে একর প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন খামার উপ পরিচালক। শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, খামারের বিভিন্ন অংশে প্রায় একশ সজিনা গাছ রয়েছে। সেসব গাছের সজিনা ডাটা লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করা হয়েছে এক সবজি ব্যবসায়ীর কাছে। অথচ সজনের ডাটা বিক্রি বাবদ ৩ হাজার টাকা জমা করা হয়েছে।
খামারে মৌসুমে বীজের জন্যে আলু চাষ করা হয়েছিলো ৪৫ একর জমিতে। উৎপাদিত আলু বীজ হিমাগারে সংরক্ষণের আগেই অন্তত ৫শ মণ আলু বীজ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। রাতের অন্ধকারে সে পচা আলু ফেলে দেওয়া হয়েছে।
খামার সর্দার মিনহাজ উদ্দীন জানান, ৫’শ মণের অধিক আলু পচে গেছে। খামারের প্রায় সব ঘরেই পচা আলু এখনও রাখা আছে। খামারে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের প্রতিদিন মজুরি বাবদ ৫শ টাকা দেওয়া হয়। প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক দেখানো হলেও কাজ করেন ৫০ থেকে ৬০ জন। শ্রমিকদের নামে টাকা তুলে উপ পরিচালক নিজে আত্মসাৎ করেন বলে শ্রমিকরা জানান।
বারাদি বীজ উৎপাদন খামারের উপপরিচালক মনিরুজ্জামান সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো সঠিক না। তিনি বলেন, মাত্র ৩ হাজার টাকার সজনে ডাটা বিক্রি করা হয়েছে। বিচালি বিক্রি করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকার মত। এর মধ্যে ৫৭ হাজার টাকা সরকারি খাতে এবং বাকিটা ভ্যাট বাবদ জমা দেওয়া হয়েছে। আলু পচনশীল বীজ। একটি পচা আলুর পাশে থাকা অপর আলুও পচে যায়। এই কারণে কিছু আলু পঁচেছে। নিয়মিত শ্রমিকদের তালিকা দেখতে চাইলে তিনি লিখিত আবেদন করার জন্যে বলেন।