২৮শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও চিন্তিত অপু দাস

মোতাহার হোসেন, মণিরামপুর : বাবা চরম দরিদ্রতার সাথে লড়াই করে সড়কের পাশে চটের উপর বসে জুতা সেলাই ও কালির কাজ করেন। জুতা সেলাইয়ের প্রতিটি বুবনে লুকিয়ে রাখতেন ছেলেকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন। আজ সেই চিকিৎসক হওয়ার প্রথম সোপান ভর্তি যুদ্ধে উৎরে গেলেও ডাক্তারি পড়তে খরচ নিয়ে অজানা শংকা পেয়ে বসেছে।

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা খানপুর ঋষি পল্লীর অসিৎ দাস ও সাধনা দাসের ছেলে অপু দাস চলতি শিক্ষা বর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। ৭৫ নম্বর পেয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। শতবাধা—বিপত্তিকে জয় করে অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের কাছে হার মেনেছে দরিদ্রতা।

দুই ভাইয়ের মধ্যে অপু দাস ছোট। বড় ভাই তিতাস দাস কেশবপুর সরকারি কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছে। পাশাপাশি মণিরামপুর পৌরশহরের একটি ইলেকট্রিক দোকানে মেকানিকের কাজ করে। ছোট বেলা থেকেই অদম্য মেধাবী অপু দাস। পড়া—লেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে বাবা—মা রোদ—বৃষ্টি উপেক্ষা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে ছেলেকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন।

অপুর বাবা ছোট বেলা হতেই জুতা সেলাই আর কালির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রায় ৪০ বছর আগে চরম দরিদ্রতার কারণে কাজের সন্ধানে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা হতে মণিরামপুরের বালিয়াডাঙ্গা খানপুর গ্রামে আসেন। সাধনা দাসকে বিয়ে করে এই গ্রামেই থেকেই যান।

রাজারহাট—চুকনগর মহাসড়কের পৌরশহরের রাজগঞ্জ মোড়ের পাশে চটের উপর বসে জুতা সেলাই ও কালির কাজ করেন। শাশুড়ির দেওয়া তিন শতক জমির উপর কোন রকম ঘর বেঁধে বসবাস করছেন। অপু দাস ছোট বেলা হতেই পড়া—লেখায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।

স্থানীয় ঋষি পল্লীর ব্র্যাক সেন্টার হতে ৫ম শ্রেণি পাশ করে মণিরামপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০২০ সালে এসএসসি ও ২০২২ সালে এইসএসসি’তে জিপিএ—৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। চলতি ২০২৩—২৪ শিক্ষা বর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ৭৫ নম্বর পেয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

অপুর বাবা অসিৎ দাস বলেন, ‘জুতা সেলাই ও কালি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে সংসার। তারপর ছেলেদের পড়া—লেখা শিখাচ্ছি। শুনেছি ডাক্তারি পড়তি মেলা (বেশি) খরচ। এহন এই টাহা কোনে পাবানে, তাই নিয়ে চিন্তায় আছি’।

অপু দাস বলেন, ‘ ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হবো। দুঃখী—অসহায় মানুষের সেবা করবো। ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু সামনের দিনগুলি কিভাবে যাবে। দরিদ্র বাবা—মা কিভাবে আমার ডাক্তারি পড়ার খরচ জোগাড় করবে, তা নিয়ে মহাচিন্তায় আছি।

অপুর মা সাধনা দাস বলেন, ‘আমার অপু ডাক্তার হবে, শুনে আনন্দ লাগছে। সমাজের অন্য দশজন ছেলের মতো অপুকে কাপড়—চোপড়, বই—খাতা কিনে দিতি পারিনি। আমাগের জমি—জমাও নেই। ওরে কিভাবে ডাক্তারি পড়াবো তা নিয়ে ভাবছি। ওর বাবা রাস্তায় জুতা সেলাই আর কালি করে।’

প্রতিবেশি মিলন দাস বলেন, অপু পড়া—লেখা ছাড়া কিছুই বুঝে না। ও ডাক্তার হবে শুনে তারা খুব আনন্দিত।
অপুর শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ বাবুল আক্তার বলেন, কঠোর অধ্যবসায় আর ইচ্ছা শক্তি দিয়ে সব কিছু জয় করা যায়, তার উদাহরণ অপু দাস। ডাক্তারি পড়তে তার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram