নিজস্ব প্রতিবেদক : সংস্কৃতিপ্রেমী দর্শকদের মুগ্ধ করে পর্দা নামলো ঐতিহ্যবাহী নাট্য সংগঠন বিবর্তন যশোরের চার দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের। এ উৎসবে ভারত ও বাংলাদেশের মঞ্চনাটকে নাটক মুগ্ধ হয়েছেন যশোরের দর্শক। ভারতের দুটি দল এ উৎসবে অংশ নেয়।
এতে আলাদা রূপ নেয় উৎসবটি। নব উল্লাসে প্রাণের উচ্ছ্বাসে, জানাই সাম্যের আহ্বান— প্রতিপাদ্য নিয়ে বিবর্তনের ৩৪ বছরপূর্তি উপলক্ষে যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে গত ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় এ উৎসব উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার।
আর শেষ হয় শুক্রবার শিশুদের দুটি নাটকের মাধ্যমে।এ উৎসব ঘিরে যশোরে সংস্কৃতিকর্মীদের মিলনমেলা বসে।
গত ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় উদ্বোধনী দিনে মঞ্চস্থ হয় ভারতের কলকাতার অনীক’র প্রযোজনায় দিব্যেন্দু পালিতের গল্প অবলম্বনে ‘ব্রাহ্মণ’ নাটক। ধর্মান্ধতার বেড়াজাল পেরিয়ে সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই— এমনই বক্তব্য উপস্থান করেন নাটকের অভিনেতা—অভিনেত্রীরা।
তাদের অভিনয়ে অভিভূত হন সংস্কৃতিপ্রেমী দর্শকরা।
চারদিনের নাট্যোৎসবে প্রতিদিনই নাটক দেখেছেন সংস্কৃতিজন তারিকুল ইসলাম তারু। তিনি বলেন, ‘বিবর্তনের নাট্য উৎসব মানেই মানসম্মত নাটক পরিবেশন। নাটক জীবনের কথা বলে। প্রতিটি নাটকেই সেই জীবনের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে সমাজের অসঙ্গতির কথা।
মানবতার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে ‘ভোরের বারান্দা’ নাটকে মাত্র দুজন নাট্যশিল্পী দেড় ঘণ্টা ধরে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। এ নাটকে যেনো আমারই কথা বলা হচ্ছিল।’
<< আরও পড়ুন >> ১৯ জানুয়ারি থেকে মধু মেলা
‘ব্রাহ্মণ’ নাটকের নির্দেশক অরূপ রায় বলেন, নাটকটি বিকৃত, সংকীর্ণ ও সা¤প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ঘোষণা দিয়ে ধর্মের উদার মর্মবাণী প্রচার করা হয়েছে। ধর্মের মুনাফালোভী রাজনীতির ব্যবসায়ীদের কপটতা, শঠতার প্রতিকূলে গেয়ে ওঠে মানবতার চিরকালীন জয়গান।
আর প্রকাশ পায় সর্বোপরি সবার উপরে মানুষ সত্য এই দর্শনের উদাত্ত দীপ্তি।
বিবর্তন যশোরের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর বিশ্বাস জানান, সামাজিক অসংগতির বিরুদ্ধে নাটক— এই স্লোগানকে সামনে রেখে ৩৪ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে বিবর্তন যশোর।
দীর্ঘ এ সময়ে নাটকের মাধ্যমে বিবর্তনের শতাধিক কর্মী সমাজের শোষকদের বিরুদ্ধে ও শোষিতদের পক্ষে নানা বার্তা তুলে ধরেছেন। দেশের বাইরেও মঞ্চ নাটকে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন সংগঠনের কর্মীরা।
তিনি আর জানান, ১৯৮৯ সালের ১২ অক্টোবর যশোর শহরের একদল প্রগতিশীল তরুণ বিবর্তন যশোর গড়ে তোলেন। সংগঠনের ৩৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ নাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয়।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ১৮ অক্টোবর মঞ্চস্থ হয় পশ্চিমবঙ্গ ভারতের কল্যাণী নাট্য চর্চা কেন্দ্রের নাটক ‘ভোরের বারান্দা’।
১৯ অক্টোবর মঞ্চস্থ হয় বিবর্তন যশোরের নাটক ‘মাতব্রিং’ এবং ২০ অক্টোবর উৎসবের সমাপনী দিনে মঞ্চস্থ হয় বিবর্তনের শিশু বিভাগের ‘পাগলা দাশু’ ও ঢাকা ইউনিটের পরিবেশনায় নাটক ‘চিচিংগে অ্যান্ড কোং’।