মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই দেশের সীমান্তে উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে। যুগান্তরের খবরে প্রকাশ— সোমবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জলপাইতলি এলাকায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে এক বাংলাদেশি নারী এবং এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। বলা বাহুল্য, মিয়ানমারের চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাতে সীমান্ত এলাকায় মর্টার শেল চলে আসা এবং তাতে নিরীহ মানুষের হতাহতের ঘটনা কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়।
<<আরও পড়তে পারেন>> মন্ত্রীর পরিকল্পনা জনগণ কাজে প্রতিফলন দেখতে চায়
বিদ্রোহীদের প্রচণ্ড আক্রমণে টিকতে না পেরে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) দুই শতাধিক সদস্য পালিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’—এ নীতিতে বিশ্বাসী আমাদের সরকার তাদের চিকিৎসার পাশাপাশি নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সশস্ত্র বাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) সতর্ক থাকার পাশাপাশি ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, মর্টার শেলের আঘাতে হতাহতের ঘটনায় দেশটির রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এর আগেও ২০২২ সালের আগস্টে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হেলিকপ্টার আকাশসীমা লঙ্ঘন করার পাশাপাশি তাদের ছোড়া মর্টার শেল এ দেশের ভূখণ্ডে আঘাত করে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখে যা বোঝা যাচ্ছে তা হলো, মিয়ানমারের এ গোলা নিক্ষেপ ও অন্যান্য তৎপরতার লক্ষ্য বাংলাদেশ নয়।
মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের করণীয় কী হবে, সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত তুলে ধরছেন। তারা বলছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানে সর্বাÍক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আমরাও মনে করি, শান্তিপূর্ণ তথা কূটনৈতিক পন্থায়ই এ সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে।
বাংলাদেশের অন্যতম নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার। দুর্ভাগ্যজনক, দেশটির আচরণ সৎ প্রতিবেশীসুলভ নয়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অভিযান চালিয়ে সে দেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালায়, তাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ নৃশংসতার মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার থেকে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন। এসব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে গড়িমসি করে এসেছে মিয়ানমার, যার মাশুল দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
এ অবস্থায় আমরা মনে করি, রাখাইনের পরিস্থিতি যাই হোক, রোহিঙ্গাদের নিজভূমে ফিরতে তাদেরই উদ্যোগী হতে হবে। দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিজেদের প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে অনুকূলে আনা যায় কিনা, তাও তাদেরই ভেবে দেখতে হবে। যেহেতু বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশ—বিদেশের সাহায্যের পরিমাণ ক্রমেই কমে আসছে, তাই প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টির আগেই আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উচিত নিজভূমে ফিরতে সচেষ্ট হওয়া। পাশাপাশি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণপূর্বক তাদের প্রত্যাবাসনে সরকারকেও কৌশলী কূটনৈতিক পথ অবলম্বন করতে হবে।
চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে মিয়ানমারকেও সহনীয় আচরণ প্রদর্শন করতে হবে। আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করবে এবং তাদের নিক্ষেপ করা মর্টার শেল বা গোলা যাতে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে না পড়ে, সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখবে।