মোতাহার হোসেন, মণিরামপুর (যশোর) : যশোরের মণিরামপুরে এলজিএসপি—৩ (লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট—৩) প্রকল্পের অর্থ নয়—ছয়ের অভিযোগ উঠেছে।
নতুন রং আর নেমপ্লেট বদল করে বিগত অর্থ বছরের বরাদ্দে স্থাপিত টিউবওয়েল চলতি অর্থ বছরে দেখিয়ে বিল উত্তোলনসহ কৃষকের মাঝে স্প্রে ও দুঃস্থ মহিলাদের সেলাই মেশিন বিতরণ—প্রশিক্ষণে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নিন্মমানের স্পে্র মেশিন প্রায় তিনগুণ মূল দেখিয়ে ৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ও সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ—বিতরণের নামে ২ লাখ টাকা হজম করা হয়েছে। উপজেলার মনোহরপুর ও মশ্মিমনগর ইউনিয়নে এ অনিয়ম—দুর্নীতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০২২—২৩ অর্থ বছরে এ উপজেলার ১৭ ইউনিয়নে দু’বার এলজিএসপি—৩ এর বরাদ্দ আসে। যার প্রথম কিস্তিতে ৭৩ লাখ ২৩ হাজার ৩০০ টাকা এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯২ লাখ ৭৪ হাজার ৬০০ টাকা।
জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিভাজনকৃত বরাদ্দের মধ্যে উপজেলান মনোহরপুর ইউনিয়ন প্রথম কিস্তিতে ২ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ টাকা ও দ্বিতীয় কিস্তিতে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ টাকা বরাদ্দ পায়। অপরদিকে মশ্মিমনগর ইউনিয়ন প্রথম কিস্তিতে ৫ লাখ ২১ হাজার ৯০০ টাকা ও দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬ লাখ ৬১ হাজার ১০০ টাকা বরাদ্দ পায়।
সূত্রের অভিযোগ, মনোহরপুর ইউনিয়নে বরাদ্দের তিন নম্বর স্কিমে আরএফকিউর (রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন) মাধ্যমে দেড় লাখ টাকায় ৯ ওয়ার্ডে ১০ টি স্যালো টিউবওয়েল স্থাপন দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। ইউনিয়নের ৬, ৫ ও ১ নং ওয়ার্ডে নতুন ৪টি টিউবওয়েল স্থাপিত হলেও বাকি ৬ ওয়াডের্র টিউবওয়েল পুরনো। নতুন করে রং আর নেমপ্লেট বদল করা হয়েছে।
সরেজমিনে মনোহরপুর ও মশ্মিমনগর ইউনিয়নে গিয়ে এ অনিয়মের চিত্র পাওয়া যায়। এসময় মনোহরপুর ইউনিয়নের খাকুন্দি গ্রামের বিলের রাস্তায় ে¯্রাতের মূখে স্থাপিত টিউবওয়েলটি পূর্বের বদল করা হয়েছে।
এসময় উপস্থিত সাখাওয়াত হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, আগের চেয়ারম্যানের সময় স্থাপন করা হলেও অকেজো হয়ে যায়। পরে স্থানীয় মেম্বর কামাল হোসেন রং করে ঠিক করে দিয়েছেন। জানতে চাইলে মেম্বর কামাল হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, “কে বলেছে, তাকে আমার কাছে নিয়ে আসেন।”
একই চিত্র চোখে পড়ে সদর আলী মেম্বরের বাড়িতে স্থাপিত টিউবওয়েলের ক্ষেত্রেও। এটিও পুরনো, কেবল নতুন রং করে নেমপ্লেট বদল করা হয়েছে। অবশ্য বিষয়টি স্বীকার করেননি মেম্বর সদর আলী।
<< আরও পড়ুন >> ‘কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড’ কৃষকদের কোনো উপকারে আসছে না
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে দুইটি পেডেস্টাল ফ্যান ক্রয়েও দুর্নীতি করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে আগের চেয়ারম্যানের সময় প্রায় ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ইউনিয়ন পরিষদের পুনঃসংস্কারের কাজ করা হলে ওই পেডেলস্টাল ফ্যান সরবরাহ করা হয়। এসব অনিয়ম—দুর্নীতির সাথে ইউনিয়ন সচিব সনজু মন্ডলের সংশ্লিষ্টার অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য তিনিও সংশ্লিষ্ট থাকার বিষয়টি স্বীকার করেননি।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার ফারুক মিন্টুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে উপজেলার মশ্মিমনগর ইউনিয়নে আরএফকিউ ক্রয় পদ্ধতিতে বরাদ্দের প্রথম কিস্তির অর্থে বরাদ্দের ৪ নম্বর স্কিমে দুঃস্থ মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন ক্রয় ও প্রশিক্ষণের নামে দুই লাখ টাকা নয়—ছয় করা হয়েছে।
এতে ইউনিয়নের সাত, আট ও নয় নম্বর ওয়ার্ডে ৫৫ হাজার টাকায় ৫ টি সেলাই মেশিন বিতরণ ও বাকি এক লাখ ৪৫ হাজার টাকায় প্রশিক্ষণের কথা বলা হলেও তা আদৌ হয়নি বলে অভিযোগ। একই কিস্তি ও বরাদ্দের ৫ নম্বর স্কীমে এবং দ্বিতীয় কিস্তির এক নম্বর স্কীমে আরএফকিউ ক্রয় পদ্ধতিতে যথাক্রমে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় সর্বমোট চার লাখ ৫৭ হাজার টাকায় ১৬ লিটার ধারণ ক্ষমতা হাত চালিত স্প্রে মেশিন ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে।
যার প্রতিটি স্প্রে মেশিনের মূল্য ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭৭০ টাকা। কিন্তু আহম্মেদ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের এই কোম্পানির এই স্প্রে মেশিনের বাজার মূল্য ১ হাজার টাকা বলে খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে। অথচ ভাল মানের ব্যাটারি চালিত স্প্রে মেশিনের দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা। বাকি টাকা হজম করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, নিয়ম মেনেই বরাদ্দের সব টাকা দিয়েই স্প্রে মেশিন ক্রয়ের পর সুন্দরভাবে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।