সমাজের কথা ডেস্ক : ব্যাংকের নাম শুনলেই টাকার কথা মনে আসে; কিন্তু রাজশাহীর তানোরে এমন একটি ব্যাংক আছে, যেখানে কোনো টাকাপয়সা নেই, আছে শুধু ধান আর ধান। বিলুপ্তপ্রায় ২৬১ জাতের ধানের সংগ্রহ রয়েছে ঐ ব্যাংকে। উপজেলার দুবলই গ্রামের আধা পাকা একটি ঘরে চলে ব্যাংকের কার্যক্রম। ব্যাংকে সংরক্ষিত কাচের বোতলের গায়ে লেখা রয়েছে ধানের মজার হরেক নাম। কোনোটির নাম রূপকথা, আবার কোনোটির নাম দুই সতিন, নারকেলবাধা, তালমুগুর, জামাইনাড়–—আরও কত কী!
দেশি বিলুপ্তপ্রায় ধানের বীজ সংরক্ষণ ও চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে এই বীজ ব্যাংক। তারা প্রতিবছর অগ্রহায়ণ মাসে নতুন ধান উঠলে বীজ বিনিময় ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করে। উৎসবে সারা দেশ থেকে কৃষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, বিজ্ঞানী, কবি—সাহিত্যিকেরা যোগ দেন। হারিয়ে যাওয়া ধানবীজের প্রাণ বাঁচাতেই মূলত এই উৎসবের আয়োজন।
গ্রামে ঢুকতেই রাস্তার পাশে দুই কক্ষের আধা পাকা একটি ঘর। সেই ঘরে কাচের বোতলে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ধান। গায়ে নাম লেখা প্রতিটির। চাষি ইউসুফ মোল্লা ২০১৫ সালে বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ (বারসিক) তাঁকে সহায়তা করে। এখন থেকে বছর দুই আগে ইউসুফ মোল্লা মারা গেছেন। তবু থেমে নেই বীজ ব্যাংকের কার্যক্রম। কৃষকেরাই এগিয়ে নিচ্ছেন বিশেষ এই ব্যাংকের কাজ। গঠন করা হয়েছে সাত সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি। ইউসুফ মোল্লার ছোট ভাই জাহিদুর রহমান ও ছেলে গোলাম মোল্লাও আছেন কমিটিতে। নিয়ম করে প্রতি মাসে তাঁরা বৈঠক করেন। কার থেকে কী ধান পাওয়া গেল, কোথায় তাঁদের ধান বপন করা হলো; কিংবা করা যাবে—সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদরোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মামুনুর রশীদ এই ব্যাংক থেকে ১১ জাতের ধানের বীজ নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, তানোরের ইউসুফ মোল্লার সঙ্গে তাঁর একটা কাজ আছে। তিনি তাঁর বীজ ব্যাংক থেকে ১১ জাতের ধান নিয়ে গবেষণা করছেন।