২৮শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিলুপ্তপ্রায় ভাষার সুরক্ষা
46 বার পঠিত

জাতিসংঘ শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালে বাঙালির মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল শুধু মাতৃভাষা বাংলা নয়, বরং বিশ্বের সব ভাষার স্বীকৃতি, সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিসহ প্রসার ঘটানো। কেননা, ভাষা হলো সঞ্জীবনী সুধা, মানবিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। মানব সম্প্রদায়ের জ্ঞানভান্ডার সঞ্চিত, সঞ্চারিত ও সুরক্ষিত হয় এর মাধ্যমে। ভাষা বৈচিত্র্য, বহু কথিত ও স্বল্প কথিত ভাষা— সব মিলিয়ে গড়ে ওঠে এক বিশ্বজনীন ভাষা—প্রজাতন্ত্র। তবে দুর্ভাগ্যবশত আমরা এই ভাষা বৈচিত্র্যের হারিয়ে ফেলার সংকটকাল অতিবাহিত করছি। অনুমিত হয় বর্তমানে সাত হাজার ভাষা বিদ্যমান রয়েছে বিশ্বে। দুঃখজনক হলো, বর্তমান শতাব্দীর শেষ নাগাদ অনেক ভাষাই রয়েছে সমূহ হুমকিতে। যেগুলো শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে ভাষা বিজ্ঞানীদের।

উদাহরণত বলা যায়, বাংলাদেশে মাতৃভাষা ও রাষ্ট্রভাষা বাংলা ছাড়াও আরও ৪১টি ভাষা রয়েছে, যেগুলো প্রধানত ক্ষুদ্র নৃ—গোষ্ঠীর ভাষা। এর মধ্যে ১৫টি ভাষা ঝুঁকির সম্মুখীন, তথা বিলীন হওয়ার পথে। কারণ, এসব ভাষায় মাত্র ৫০ থেকে ৩০০০ মানুষ কথা বলে। তাদের নেই লিখিত কোনো বর্ণমালাও। এগুলো হলো— সৌরা, কোদা, মুন্ডারি, কোল, মাল্টো, কোন্দো, খুমি, পাংখুয়া, চাক, কিয়াং, রেংমিৎচা, লুসাই, কাহারিয়া, দেশওয়ালী, ও লালেং/পাট্রা। ভাষা বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি ভাষা হারিয়ে যাওয়া মানেই ভাষাভিত্তিক একটি জনগোষ্ঠী এবং তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অবলুপ্তি। সেক্ষেত্রে ঝুঁকিতে থাকা ও বিলুপ্তির পথে থাকা ভাষাগুলোকে ডিজিটাল তথা রেকর্ডিং ও ভিডিওর মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে যথাযথভাবে। এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করার জন্য অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। মূলত এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সংস্থাটি এই অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজটি দায়িত্ব সহকারে করবে বলেই প্রত্যাশা।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ১৯৫৭ সালের ৫ জুন ৪০তম অধিবেশনে ১০৭ নং কনভেনশনে আদিবাসী ও উপজাতীয় ভাষা বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে কিছু নীতিমালা তৈরি করেছে। এ কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ। কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ২১—এ উলে¬খ রয়েছে, ‘সংশি¬ষ্ট জনগোষ্ঠীর সদস্যদের জাতীয় জনসমষ্টির অবশিষ্ট অংশের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সকল স্তরে শিক্ষা অর্জন করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।’

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের ঘোষণা অনুসারে, মাতৃভাষায় শিক্ষা পাওয়ার অধিকারের অংশ হিসেবে ২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে ৫ ক্ষুদ্র নৃ—গোষ্ঠীর শিশুদের দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক। ক্ষুদ্র নৃ—গোষ্ঠীর এক লাখের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। এ থেকে বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার দিকটিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একুশে পালন তখনই সত্যিকারের তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে, যখন দেশের সকল ক্ষুদ্র নৃ—গোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণের কাজ আমরা যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে পারব।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram