নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুলের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি আইনে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেছেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। ফেসবুক লাইভে অশ্লীল বক্তব্য দেওয়ায় দুইকোটি টাকার মানহানি হয়েছে বলে তিনি মামলায় উল্লেখ করেছেন।
অপরদিকে, চাঁদা দাবি, জবরদখল ও হুমকির অভিযোগে আনোয়ার হোসেন বিপুলসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মেসার্স নদী বাংলা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন।
যশোর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুলের বিরুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। বুধবার মামলাটি করেছেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সফিকুল আলম চৌধুরী।
<<আরও পড়তে পারেন>> মাদরাসা সভাপতির নামে মামলা : অভিযোগ গুরুতর
তিনি জানিয়েছেন, বিপুলকে ধরতে পুলিশ অভিযানে নেমেছে। এর আগে গত মঙ্গলবার লাইভে এসে আনোয়ার হোসেন বিপুল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে অশ্লীল বক্তব্য প্রদান করেন। তারই প্রেক্ষিতে মিলন এ মামলা করেছেন।
মামলায় শহিদুল ইসলাম মিলনের অভিযোগ, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে আনোয়ার হোসেন বিপুল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন বলে মিলনের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখান বিপুল। এছাড়া মিলনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে সাংবাদিক সম্মেলন করার হুমকি দেন। এছাড়াও ফেসবুকে বিভিন্ন মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে তার সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন বিপুল।
শেষমেষ চাঁদা না পেয়ে বিপুল হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যান। তার জেরে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাতটায় বিপুল তার নিজের ফেসবুক থেকে লাইভে এসে সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারসহ বিভিন্ন পদধারী নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রচারণায় মান ক্ষুন্ন হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই সব বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ কারণে মামলার বাদী শহিদুল ইসলাম মিলনের দুইকোটি টাকার মানহানি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, মামলা গ্রহণের পর পুলিশ বিপুলকে ধরতে মাঠে নেমেছে।
এদিকে, ফেসবুক লাইভে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অশ্লীল ও মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। একইসাথে এই বক্তব্য দেওয়ায় আনোয়ার হোসেন বিপুলের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ বাতিলের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপ—দপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদার।
অপরদিকে, চাঁদা দাবি, জবরদখল ও হুমকির অভিযোগে যশোর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুলসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মেসার্স নদী বাংলা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহম্মেদ অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ দিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসিকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী রুহিন বালুজ।
অপর আসামিরা হলো, উপশহর বাবলাতলা এলাকার বাসিন্দা এসএম মোস্তাফিজুর রহমান, পুরাতনকসবা পাওয়ার হাউজপাড়ার আব্দুল হামিদ, পুরাতনকসবা মশিউর রহমান সড়ক এলকার বাসিন্দা নূর আলম ও পুরাতনকসবা পুলিশ লাইন এলাকার আব্দুল হাই শাহাবুদ্দীন।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, আসামি আব্দুল হামিদ, নুর আলম ও আব্দুল হাই শাহাবুদ্দিন শহরের গাড়িখানা রোডের ৫ শতক জমির মালিক। এ জমিতে তারা বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য আমমোক্তারনামার মাধ্যমে মেসার্স নদী বাংলা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করে। চুক্তি অনুযায়ী এ ভবনের ৪০ শতাংশ ফ্লাটের মালিকানা পাবে ওই তিনজনসহ তার শরিকেরা।
ভবনের ৫তলা পর্যন্ত নির্মাণ শেষে হলে আসামিদের প্রাপ্য অনুযায়ী ফ্ল্যাট বুঝে দেয়া হয়। ৬ষ্ঠ তলার কাজ শুরু করলে হামিদ, আলম ও তাই অপর দুই আসামির সহযোগিতা নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপর আসামিরা কোম্পানির প্রাপ্ত ফ্লাট বিক্রি করতে বাধা দেয়। ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি আসামি ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমকে ডেকে নদী বাংলা কাশেম টাওয়ারের নিচ তলায় নিয়ে আসামি বিপুল এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে।
চাঁদার টাকা না দেয়ায় আসামিরা পরিকল্পিতভাবে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ৪র্থ তলা দখল এবং আসামি বিপুল অফিস খুলে বসে। এরপর নানা দেনদরবার করেও কোন লাভ হয়নি। ২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আসামি বিপুল ঢাকা রোড ব্রিজ সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে দেখা করতে বলে। সেখানে আসামি তার আড়াই কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধারে এক কোটি টাকা চাঁদা না দিলে ভবনের আশেপাশে গেলে খুন—জখম করবে বলে হুমকি দেয়। বিষয়টি মীমাংসায় ব্যর্থ হয়ে তিনি আদালতে এ মামলা করেছেন।