২০শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গাঁজা চাষে ঝুঁকছে পাকিস্তান
বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে গাঁজা চাষে ঝুঁকছে পাকিস্তান

সমাজের কথা ডেস্ক : গাঁজা বাণিজ্যের বৈধ ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করছে পাকিস্তান। প্রায় চার বছর আগে দেশটি শিল্পখাতে গাঁজা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছিল। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বিকাশমান বাজারের সুযোগ নিতে চাইছে দেশটি।

ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রথম গাঁজা নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে শিল্পখাতে গাঁজা ব্যবহারের অনুমোদন সরকার দিলেও অভ্যন্তরীণ জটিলতায় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ থেমে ছিল।

দেশটির স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফেসিলিটেশন কাউন্সিলের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, এই উদ্যোগ নিয়ে আমরা খুবই সচেষ্ট। খুব দ্রুত গতিতে সব কিছু এগিয়ে যাচ্ছে। এই কাউন্সিলটি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে।

 

ওই কর্মকর্তা বলেছেন, নতুন জোট সরকার নীতি, উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাদের লাইসেন্স প্রদান ও চাষের জন্য অঞ্চল নির্দিষ্ট করার জন্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠন করছে।

ভারতীয় একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, বৈশ্বিক গাঁজার বাজারে প্রবেশ এবং উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশের সুবিধা নিতে আশাবাদী পাকিস্তান। গাঁজার বৈশ্বিক বাজার ২০২২ সালে ছিল ২৭.২ বিলিয়ন ডলারের। ২০২৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৮২.৩ বিলিয়ন ডলার। বিদেশি ঋণ পরিশোধ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর কাছ থেকে ঋণ সহায়তা পেতে পাকিস্তান রফতানি বাড়ানো ও কর বৃদ্ধির উদ্যোগ নিচ্ছে।

 

পাকিস্তানের আফগান সীমান্তে এই ঔষধি গাছটি উন্মুক্তভাবে চাষ ও বিক্রি হয়। তবে গাছটি উত্তর ও পশ্চিম পাকিস্তানেও চাষ করার মতো পরিবেশ রয়েছে। ১৯৭০ দশক পর্যন্ত স্থানীয় গাঁজার দোকানগুলো বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হক গাঁজার ব্যবহার ও রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ওই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মাদকের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক যুদ্ধ চলছিল।

নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের ফলে চিকিৎসায় গাঁজার ব্যবহারের সুযোগ বাড়বে। টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (টিএইচসি) ও ক্যানাবিডিওল (সিবিডি) পণ্য রোগীদের কাছে বিক্রি করা সম্ভব হবে। অপর দিকে এই গাছটি রশি, কাপড়, কাগজ ও নির্মাণ সামগ্রীতেও ব্যবহার করা হয়।

 

গাঁজার অপব্যবহার রোধে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কঠোর শাস্তির বিধান করছে। আইন লঙ্ঘন করলে কোম্পানিকে ২০ কোটি পাকিস্তানি রুপি এবং ব্যক্তিকে ১ কোটি রুপি পর্যন্ত জরিমানা দেওয়া লাগতে পারে।

 

২০২২ সালে প্রথম এশীয় দেশ হিসেবে থাইল্যান্ড গাঁজাকে বৈধ করার পর দেশটিতে এর ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু একজন পাকিস্তানি চিকিৎসক বলছেন, শুধু চিকিৎসাপত্রের মাধ্যমে গাঁজা থেকে ওষুধ বিক্রির ব্যবস্থা করলে অপব্যবহার রোধ করা যাবে।

রাওয়ালপিন্ডিভিত্তিক চিকিৎসক রশিদ ইকবাল বলেন, চিকিৎসাপত্রের মাধ্যমে বিক্রিকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষের উচিত তা নিশ্চিত করা।

 

কেয়ারগিভার আদনান আমিনও মনে করেন যে, গাঁজার অপব্যবহার হতে পারে। কিন্তু নিম্ন রক্তচাপের রোগীর জন্য জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হলো এফেড্রিন। এটিরও তো অপব্যবহার হয়।

 

পাকিস্তানের সরকারি গবেষণা সংস্থা কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ-এর চেয়ারম্যান ও সিসিআরএ-এর গভর্নিং বডির সদস্য সৈয়দ হোসাইন আবিদি বলেছেন, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠন জাতিসংঘের আইন অনুসারে বাধ্যবাধকতা। ওই আইন অনুসারে, কোন দেশ গাঁজা উৎপাদন, প্রকিয়াজাত ও তা থেকে উৎপন্ন পণ্য বিক্রি করতে চাইলে অবশ্যই একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

সিসিআরএ-এর ফ্রেমওয়ার্কে উল্লেখ করা হয়েছে, চিকিৎসায় ব্যবহৃত পণ্যের অপব্যবহার রোধে টিএইচসিতে গাঁজার পরিমাণ সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক তিন শতাংশ রাখা যাবে।

আবিদি বলেছেন, পাকিস্তান নিজেদের সুবিধার জন্য এই গাছটির চাষকে কাজে লাগাতে পারে এবং রফতানি, বিদেশি বিনিয়োগ ও দেশে বিক্রির মাধ্যমে মূল্যবান বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে পারবে।

 

তিনি বলেছেন, কার্যত এখন পাকিস্তানে গাঁজা চাষ বৈধ। কিন্তু বিধি ও প্রক্রিয়াগুলো তৈরি করার পর্যায়ে রয়েছি আমরা। এছাড়া কর্তৃপক্ষের নিবন্ধনের অপেক্ষাও রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদে লাইসেন্স দেওয়া হতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারণ করে দেবে কোন কোন অঞ্চলে বৈধভাবে চাষ করা যাবে। আবিদি বলেছেন, গাঁজা চাষে আমাদের দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। আমাদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

 

পাকিস্তানি এই কর্মকর্তার মতে, নিয়ন্ত্রক কাঠামো নিশ্চিত করবে যে মানুষ যেনও কেবল নির্ধারিত চিকিৎসায় ব্যবহৃত পণ্য পায়। এটি গাঁজার অবৈধ বিক্রয় ও সেবন দমন করবে। পরিচ্ছন্ন পণ্য খুচরা বিক্রির জন্য পাওয়া গেলে তা কালোবাজারি কমাতে সহযোগিতা করবে এবং শুধু চিকিৎসাপত্র দিয়ে রোগীরা এমন ওষুধ পাবেন।

সূত্র: আল জাজিরা, নিক্কি এশিয়া

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram