৯ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজয়ের মাস
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

সমাজের কথা ডেস্ক : ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১। বাংলাদেশের নতুন পরিচয় দিয়ে—বাংলাদেশ এখন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। এরই মধ্যে ভুটান স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর সংযোজনে মিত্র বাহিনীর আক্রমণে তখন হানাদার বাহিনী দিশেহারা। পাকিস্তানিরা বুঝে গেছে— তাদের পরাজয় কেবলই সময়ের ব্যাপার।

৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যশোরের সর্বত্র উত্তোলিত করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। এদিন ভারতীয় বেতার কেন্দ্র আকাশবাণী থেকে রাত ১০টায় হিন্দি, উর্দু ও পশতু ভাষায় ভারতের সেনাধ্যক্ষ জেনারেল মানেকশ’ বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তোমাদের বাঁচার কোনো পথ নেই। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য তোমাদের ঘিরে রেখেছে। তোমরা যে নিষ্ঠুর আচরণ করেছ, তারা তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। অনেক দেরি হওয়ার আগেই তোমরা আত্মসমর্পণ কর।’ রণাঙ্গনে বিজয়ের বেশে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের আরও উৎসাহ দেওয়ার জন্য—স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত দেশাত্মবোধক ও যুদ্ধের গান বাজতে থাকে।

সাড়ে সাত কোটি বাঙালি স্বাধীনতার রাঙাপ্রভাতকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে জেনারেল নিয়াজি গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন রাওয়ালপিন্ডি হেড কোয়ার্টারে। রিপোর্টে তিনি উলে¬খ করেন, ‘সৈন্যরা দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লাকসাম, চাঁদপুর ও যশোরে প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। গত ১৭ দিনে যেসব খন্ডযুদ্ধ হয়েছে, তাতে জনবল ও সম্পদের বিচারে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে গেছে। রাজাকারদের অস্ত্রসহ শটকে পড়ার সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের নিজেদের ট্যাংক, ভারি কামান ও বিমান সমর্থন না থাকায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে।’ এ বার্তা পেয়ে হেড কোয়ার্টার থেকে সম্মুখ সমরের সৈন্যদের পিছিয়ে এনে প্রতিরোধ ঘাঁটিতে সমবেত করার পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়।

আজ ৭ ডিসেম্বর রণাঙ্গনের সর্বশেষ অবস্থা হলো—মিত্র—মুক্তিবাহিনীর দুর্বার অভিযানের কাছে বর্বর পাকিস্তানি সেনারা পরাস্ত, হতাহত, বন্দী অথবা পলায়নপর অবস্থা। কুমিল¬া ক্যান্টনমেন্ট মিত্র—মুক্তিবাহিনী চারদিক দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে—পালাবার কোনো পথ নেই, হয় আত্মসমর্পণ করতে হবে না হয় মৃত্যু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাকিস্তানিদের শক্ত ঘাঁটি—এখানে নয় মাসই প্রচন্ড যুদ্ধ হয়েছে, সেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া মিত্র—মুক্তিবাহিনী অবরুদ্ধ করে রেখেছে—ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাকিস্তানি সৈন্যদের অবস্থাও হয় আত্মসমর্পণ না হয় মৃত্যু—হয়তো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুক্তিকামী মানুষ আগামীকাল মুক্তির রাঙাপ্রভাত দেখতে পাবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি মিত্র—মুক্তিবাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ যে কোনো সময় পতন। সিলেট মুক্ত সেখানে বিমানবন্দরে মিত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারও বিনাবাধায় অবতরণ করেছে। লালমণিরহাট মুক্ত।

এদিকে বাংলাদেশের পতাকা খচিত মুক্তিবাহিনীর বিমান বাহিনী ৬ ডিসেম্বর থেকেই পুরোদমে পাকিস্তানি শক্ত ঘাঁটির ওপর আঘাত অব্যাহত রেখেছে। গতকালই মুক্তিবাহিনীর বিমান সিলেট রণাঙ্গনে চারটি মালবাহী ট্রেনের ওপর সফল আঘাত হানেন। বাংলাদেশের স্বর্ণালি মানচিত্র খচিত লাল—সবুজ পতাকাবাহী জঙ্গি বিমান দেখে হানাদার পাকিস্তানিরাও হতবাক ও স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছে—আর মুক্তিবাহিনী ও জনতা বাংলাদেশের পতাকাবাহী জঙ্গি বিমান দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে জয়বাংলা ে¯¬াগান দিয়ে উল¬াসে ফেটে পড়ছে। এদিকে জাতিসংঘের কর্মীদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকটি বিমান গতকালের মতো আজও ঢাকা বিমান বন্দরে অবতরণ করতে না পেরে হংকং ফিরে যায়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram