১৯শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজয়ের মাস
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

সমাজের কথা ডেস্ক : ৫ ডিসেম্বর ১৯৭১। এই দিনে মিত্রবাহিনীর বিমানবাহিনী ঢাকার আকাশ পুরোপুরি দখল করে নেয়। বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন উত্তপ্তহয়ে পড়ে। আর জাতিসংঘে বাংলাদেশকে নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। এদিকে বাংলাদেশকে নিয়ে মার্কিন সরকারের বিশেষ উদ্যোগে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন বসে। এতে যুদ্ধ বিরতির জন্য মার্কিন প্রতিনিধি সিনিয়র বুশের চেষ্টায় সোভিয়েত প্রতিনিধি কমরেড মালিক ‘ভেটো’ প্রয়োগ করেন।
‘ভেটো’ প্রয়োগের পূর্বে কমরেড মালিক বলেন, ‘পাকস্তানি সামরিক জান্তার নিষ্ঠুর কার্যকলাপের ফলই পূর্ব বাংলার বর্তমান পরিস্থিতি উদ্ভব হয়ছে।
মূলত বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মূল লড়াইটা ছিল দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মাঝে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বাংলাদেশের পক্ষে আর যুক্তরাষ্ট্র ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। আর বাংলাদেশ সম্পর্কে পরিষদে তৃতীয় প্রস্তাবটি পেশ করে বেলজিয়াম, ইতালি ও জাপান।
এদিকে জাতিসংঘে চীনের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘কোনো শর্ত ছাড়াই পাকিস্তান থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে এ উত্তপ্ত অবস্থাতে যাতে মুক্তিযোদ্ধারা মনোবল হারিয়ে না ফেলেন সে জন্য মুক্তিবাহিনীর সেনাপতি জেনারেল ওসমানী জাতির উদ্দেশে বেতারে ভাষণ দেন।’
সে সময়ের স্মৃতি তুলে ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত লেফট্যানেন্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতিতে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, স্থলবাহিনী, মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বিত ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে যুদ্ধে বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। ৫ ডিসেম্বর। কিন্তু তখনো রাস্তা অনেক দূর ছিল। আন্তজার্তিক মহলে তখন অনেকগুলো বিষয় চলছিল। পাকিস্তানকে সমর্থন করছিল আমেরিকা, চীন, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ, ইউরোপের কিছু দেশ। তারা জাতিসংঘের কাছে যুদ্ধবিরতির সুপারিশ করেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি তখনো অনুকূলে ছিল না। তখন আমাদের মুজিবনগর সরকার ৮ নম্বর থিয়েটার রোড থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছিল বিভিন্ন দেশে। যারা তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছিলেন, তারাও কাজ করেছেন বিশ্ব বিবেক জাগ্রত করতে।’
‘আমরা দেখেছি, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের স্বীকৃতি পেতে সুপারিশ করা হচ্ছিল। তখন শোনা যাচ্ছিল যে কিছু দেশ হয়তো আমাদের স্বীকৃতি দেবে। আমরা আশা করছিলাম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলে আমাদের মনোবল বেড়ে যাবে, প্রভাব বেড়ে যাবে। সে কাজে ভারত আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছিল। ভারত ও ভুটান আমাদের স্বীকৃতি দিলো। আন্তজার্তিক মহলে আমাদের একটি সঠিক পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলো। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধ আরও ত্বরান্বিত হলো।’
এর আগে ৩ ডিসেম্বর রাত ১টায় বিমান হামলা শুরু করে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বিমান বাহিনী। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ও মিত্র বিমানবাহিনী অবরুদ্ধ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ২৩০ বার হানা দেয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সিলেট সেক্টরে বোমাবর্ষণ করে শত্রুর পাঁচটি বাংকার উড়িয়ে দেয়। জামালপুর বিমান হামলায় হানাদার বাহিনীর কয়েকশ সৈন্য নিহত হয়, বিধ্বস্ত হয় বহু সামরিক যানবাহন। এদিন চট্টগ্রামে পাকিস্তান নৌবাহিনী ও যৌথ নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজগুলোর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। বখশীগঞ্জে যৌথ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়। মুক্ত হয় পীরগঞ্জ, হাতিবান্ধা, পচাগড়, বোদা, ফুলবাড়ী, বীরগঞ্জ ও নবাবগঞ্জ। আর জীবননগর, দর্শনা ও কোটচাঁদপুরে পাক হানাদার বাহিনী মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে আত্মসমর্পণ করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক বলেন, ‘৫ ডিসেম্বর আমরা দেখছি চৌগাছাতে একটা বিশাল ট্যাংক যুদ্ধের সূচনা হয়েছে। সে যুদ্ধে ভারতের ট্যাংক রেজিমেন্ট যুদ্ধ করেছে। তাদের সঙ্গে অবস্থান নিয়েছিল ৮ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা এবং আরেকটা সেনাদল এগিয়ে যাচ্ছে যশোর এক্সিসের দিকে। সেদিন যশোর বিমানবন্দরের ওপরে আর্টিলারি ও মর্টার সেলের প্রচন্ড গোলাবর্ষণ হয়েছে। কারণ সেখানে পাকিস্তানিদের শক্ত অবস্থান ছিল। তারাও যুদ্ধে লড়ে যাচ্ছিল। সেদিন আবার আমরা ভারতীয় বাহিনী ও মিত্রবাহিনী আট নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা দর্শনা দখল করতে দেখলাম। দর্শনা ছিল পাকিস্তানি সেনাদের একটি শক্ত অবস্থান। এত বড় একটি ঘাঁটিতে তাদের পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য করাটা কঠিন বিষয় ছিল। পাকিস্তানিদের মনোবলে আঘাত পেয়েছিল।’
এই বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছে ১৯৭১ সাল ছিল রক্তক্ষণের বছর। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, সেই দিনগুলোকে আমাদের স্মরণ করতে হবে। উত্তরাধিকারদের মধ্যে এই ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে হবে। একাত্তর ছিল সংগ্রামের জীবন, সংগ্রামহীনতা থাকলে আমাদের জাতি ধ্বংস হয়ে যেত। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক সাহিত্য রচনা হচ্ছে, ইতিহাস রচনা হচ্ছে। কিন্তু সঠিকভাবে ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। যেসব বিষয় এখনো তুলে আনা সম্ভব হয়নি, সেসব প্রকাশ করতে হবে।
সাজ্জাদ আলী জহির আরও বলেন, ‘যুদ্ধে অনেক মৃত্যু হয়েছে। তাতে আমরা দুঃখ পাইনি। কারণ এই মৃত্যু ছিল সৃষ্টি, স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য। দেশের অধিকারবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা চেষ্টা করেছিলাম। আমাদের সঙ্গে ছিল বাংলার সাধারণ মানুষ। এটি ছিল গণযুদ্ধ ও জনযুদ্ধের বহিঃপ্রকাশ। চরম বিলাসিতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, অসংযম, অমিত যৌনাচার, লাম্পট্য পাকিস্তানিদের যুদ্ধের স্পৃহা নষ্ট করে দিয়েছিল। আমরা ছিলাম দুরন্ত সময়ের জীবন্ত চলচ্চিত্র। রক্তে ভিজে আমরা শোকাতর হইনি, শোকমুখর হয়েছি স্বাধীনতা পেয়ে। কিশোর থেকে বৃদ্ধ ছিল যুদ্ধক্ষেত্রের সৈনিক। সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় আমরা জয়লাভ করতে পেরেছিলাম।’

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram