২৭শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিএনপির ভারত বিরোধিতা তুঙ্গে

সমাজের কথা ডেস্ক : দীর্ঘকাল আগে থেকেই ভারত বিরোধী রাজনীতিতে সরব বিএনপি। কখনো কখনো বিভিন্ন কারণে ভারতের পক্ষে কথা বলার কৌশল নিলেও তা বেশিদিন টেকসই হয়নি। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলটি ভারত বিরোধিতা জোরদার করতে থাকে। আর এখন বিএনপির ভারত বিরোধিতা তুঙ্গে। ইতোমধ্যেই সে দেশের সকল পণ্য বর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে বিএনপিসহ ছোট—বড় ৬৩ দল মিলে আন্দোলন করার ঘোষণাও দিয়েছে।

এই ইস্যুতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে জনসম্মুখে গায়ে থাকা ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন বিএনপির মুখপাত্র ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ পরিস্থিতিতে জনমনে প্রশ্ন ক্ষমতায় না যেতে পারায়ই কি দলটির নেতাদের এত ক্ষোভ?
বিএনপি অতীতে অধিকাংশ সময় ভারত বিরোধী বক্তব্য দিলেও গত ৩টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টার পাশাপাশি ওই দেশের সমালোচনা থেকে বিরত থাকে। তবে প্রতিবারই নির্বাচনের পর আবার ভারত বিরোধী বক্তব্য শুরু করে। এবারও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর নতুন করে ভারত বিরোধিতায় সোচ্চার হয় বিএনপি। দলটির সিনিয়র নেতারা প্রায় প্রতিদিনই ভারতের সমালোচনা করে বক্তব্য রাখতে থাকেন।
সূত্র জানায়, বিএনপির নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবির প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ সমর্থন জোগালেও এ বিষয়ে নীরব থাকে ভারত। এ কারণে অবস্থা প্রতিকূলে দেখে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েই ভারত বিরোধিতা শুরু করে দলটি। দিন যত যাচ্ছে দলটির ভারত বিরোধী বক্তব্য ততই বাড়ছে। সর্বশেষ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ওই দেশটির প্রতি তীব্র ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটায় বিএনপি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্তত দুই বছর আগে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা জোরদার করে বিএনপি। এজন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে দলটি।

একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে সোচ্চার হয়। তখন আওয়ামী লীগ সরকার বেকায়দায় পড়ে। এ পরিস্থিতিতে চীন ও রাশিয়াসহ কিছু দেশ আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ নিলেও ভারত এ বিষয়ে নীরব থাকে।
প্রতিবেশী দেশ ভারত আওয়ামী লীগ সরকার বা বিএনপির পক্ষে—বিপক্ষে অবস্থান না নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অতিমাত্রায় আওয়ামী লীগ সরকারের বিপক্ষে বিভিন্ন কর্মকা— পরিচালনা করতে থাকে। এ সময় তারা ভারতকেও তাদের সঙ্গে চায়। কিন্তু ভারত এই উপমহাদেশের এবং তাদের প্রতিবেশী দেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অতিমাত্রায় নাক গলানোকে ভালো চোখে দেখেনি।

তাই একপর্যায়ে ওইসব দেশের এই হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে সংবিধান অনুসারে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিভিন্নভাবে তাগিদ দেয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারকে ঠেকানোর চেষ্টায় ভারতের সমর্থন না পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ একপর্যায়ে কঠোর অবস্থান থেকে পিছু হটে। এ পরিস্থিতিতে সংবিধান অনুসারে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে নতুন সরকার গঠন করে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে আওয়ামী লীগ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে ভারতের প্রতি বিএনপির ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পায়। তাই জনমনে প্রশ্ন ক্ষমতায় না যেতে পারায়ই কি এত ক্ষোভ?

এদিকে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও আওয়ামী লীগ তাদের আন্দোলন ঠেকিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর আবারও রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়ে রাজপথের বিরোধী দলটি। এ পরিস্থিতিতে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে বিএনপি নেতারা ক্ষোভ ঝাড়তে শুরু করে ভারতের ওপর। তারা মনে করছেন শুধুমাত্র ভারতের কারণেই এবার বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারেনি।

তাই বিভিন্ন সভা—সমাবেশে প্রতিদিনই বিএনপি নেতারা ভারত বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। এর আগে একাদশ ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও বিএনপি ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলা থেকে বিরত থাকে এবং নির্বাচনে পরাজয়ের পর আবার ভারত বিরোধী বক্তব্য দিতে থাকে।
এবার অবশ্য বিএনপি ভারত বিরোধিতার ক্ষেত্রে ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করে। প্রথমে তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়ে ভারত বিরোধী কর্মসূচি পালন শুরু করে। এর পাশাপাশি বিএনপি নেতারাও দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভারত বিরোধী বক্তব্য জোরালো করতে থাকে। সর্বশেষ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি ভারতীয় পণ্য বর্জন এবং তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ৬২টি দলসহ (অধিকাংশই নামসর্বস্ব) ৬৩ দল মিলে ভারত বিরোধী আন্দোলন করার ঘোষণা দেয়। অবশ্য এর আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলের কর্মীরা ভারতের পণ্য বর্জন নিয়ে সোচ্চার হয়।
বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন দলটির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। সেইসঙ্গে তিনি বিএনপিসহ ৬৩টি দল মিলে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন করার ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনের পরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি ভারতের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জনসম্মুখে তার গায়ে থাকা ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দেন।

সংবাদ সম্মেলনের পর রুহুল কবির রিজভী বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের জড়ো করে ভারত বিরোধী বক্তব্য দিতে থাকেন। এ সময় নেতাকর্মীরা ভারত বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে রিজভী তার গায়ে থাকা চাদর ছুড়ে ফেলে দিয়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

এরপর তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সর্বত্রই এখন ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেনে উত্তাল। ভারতীয় পণ্য বর্জন করে জনগণ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে ঢেউ দৃশ্যমান তাতে মনে হয় দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী ভারতীয় পণ্য বর্জনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে। তাই বিএনপিসহ ৬৩টি গণতন্ত্রকামী দল এবং দেশপ্রেমিক জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জনের এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করছে।

এ সময় সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবু কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, যুবদলের সহসভাপতি জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ডা. জাহিদুল কবির প্রমুখ। এ ছাড়াও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের বিএনপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রাণপণ চেষ্টা করেও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারেনি বিএনপি। এ কারণে দলের সিনিয়র নেতাদের ভারত সফরও সম্ভব হয়নি। তবে বিএনপির মঙ্গল চায় দেশী—বিদেশী এমন একটি মহল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ভারতের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক উন্নয়ন চেয়েছিল। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও তারা তা চেয়েছিল। সেজন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টাও চালানো হয়েছিল।

এ চেষ্টা সফল না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে ভারতকে চাপ দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু ভারত সরকার কোনোভাবেই বিএনপির প্রতি আস্থা রাখতে পারেনি। বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের মধুর সম্পর্কের কারণে ভারতের সর্বস্তরের জনতা এই দলটির প্রতি তাদের মনোভাব ইতিবাচক করতে পারেনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে বিভিন্ন মহলের সহযোগিতা নেন।

ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে এমন একটি প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে দেনদরবারও করেন। কিন্তু কিছুতেই ভারতের সঙ্গে বিএনপির সুসম্পর্ক করার আশ্বাস পাননি। তারপর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার বিষয়ে ভারতের সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সহযোগিতা চায়।

বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশ্বের অনেক দেশের বিরোধিতা সত্ত্বেও শুধু ভারতের সহযোগিতা পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন দলীয় সরকার নির্বাচনটি করে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে সক্ষম হয়। এর ফলে আবার রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। আর এ কারণেই ভারতের প্রতি দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় পৌনে দুই বছর আগে ২০১২ সালে (২৮ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে ভারত সফরে গেলে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয় তৎকালীন ভারতের কংগ্রেস সরকার। সে সফরে গিয়ে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

এ ছাড়া তিনি সে দেশের বিরোধী দলের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এর ফলে এক সময় বিএনপি ভারত বিরোধী বক্তব্য নিয়ে সোচ্চার থাকলেও খালেদা জিয়ার সেবার ভারত সফরের পর ভারত বিরোধিতার পরিবর্তে সে দেশের পক্ষে বক্তব্য রাখতে থাকেন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তবে খালেদা জিয়ার ভারত সফরকালে ভারতের পক্ষ থেকে তাকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করাসহ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়।

এ খবর শুনে জামায়াত ক্ষুব্ধ হয়। তাই রাজনৈতিক জোট রক্ষার স্বার্থে বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই একের পর এক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে থাকে। তবে এ বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেনি ভারত।

২০১৩ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশ সফরের সময় ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে সোনারগাঁও হোটেলে গিয়ে সাক্ষাৎ করার কথা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। সেদিন ছিল ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জামায়াতের হরতাল। হরতালের মধ্যে গাড়ি বহর নিয়ে গুলশানের বাসা থেকে সোনারগাঁও হোটেলে গেলে হরতাল ভঙ্গ করা হবে এবং এজন্য দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াত নাখোশ হবে মনে করে সেদিন খালেদা জিয়া প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না গিয়ে শিষ্টাচার—বহির্ভূত কাজ করেন।

খালেদা জিয়ার এ অবস্থানে খোদ বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা নাখোশ হলেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা খুশি হন। তবে প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে না গিয়ে খালেদা জিয়া যে অসৌজন্যতা দেখিয়েছেন তা নিয়ে দেশে—বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিশেষ করে ভারতীয় মিডিয়া এ নিয়ে সোচ্চার হয়।
২০১৩ সালের শেষদিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘসহ বিশ্বের অধিকাংশ প্রভাবশালী দেশ এগিয়ে এলেও প্রতিবেশী দেশ ভারত এ ব্যাপারে কোনো সাড়া দেয়নি।

বরং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তখন বরাবরই বলা হয় বাংলাদেশ সরকার সংবিধান অনুসারে নির্বাচন করলে এতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। প্রতিবেশী প্রভাবশালী দেশ ভারতের এ অবস্থানের কারণে বিএনপির কূটনৈতিক মিশন ব্যর্থ হয়। এর ফলে বিএনপি জোটের লাগাতার আন্দোলনসহ নির্বাচন বয়কটের হুমকি উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ সমমনা দলগুলোকে নিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে ফেলে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরও বিএনপি বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী দেশের সমর্থনের পাশাপাশি ভারতের সমর্থন আদায় করে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করে। বিশেষ করে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিজয়ী হওয়ার পর বিএনপি সে দেশের সমর্থন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ থেকে সবার আগে নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

অপরদিকে লন্ডন থেকে তারেক রহমানও নরেন্দ্র মোদিসহ বিজেপির প্রভাবশালী নেতাদের অভিনন্দন জানান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির যে শপথ অনুষ্ঠান হয় সে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন খালেদা জিয়া। জানা যায়, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে খালেদা জিয়া পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎ কর্মসূচিতে না যাওয়ায় ভারত বিএনপির প্রতি চরম নাখোশ হয়। কারণ, প্রণব মুখার্জী শুধু তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবেই নন, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে ভারতবাসীর কাছে শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।

তাই কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রণব মুখার্জী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেও বিজেপি ক্ষমতায় এসেও তাকে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে যথার্থ সম্মান শ্রদ্ধার জায়গায় রাখেন। নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা গ্রহণের প্রাক্কালে প্রণব মুখার্জীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে দেশাত্মবোধ ও সৌজন্যবোধের অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেন নরেন্দ্র মোদি। এ পরিস্থিতিতে প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার অসৌজন্যমূলক আচরণের পর বিএনপিকে মাসুল দিতে হয়।

তারপরও বিএনপি পরবর্তী দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কোনোভাবেই ভারতের সমর্থন আদায় করতে না পারায় চরম ক্ষুব্ধ হয়ে এবার বিএনপি ভারতের সকল পণ্য বর্জনের আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram