* মৌসুমে ৬ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা কৃষি বিভাগের
সাইফুল ইসলাম : ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালিতে মৌসুমের শুরুতেই গাছ ও ফুলের নিবিড় পরিচর্যা করছেন ফুলচাষিরা। মৌসুমের শুরুতেই চাষীরা ফুলের বাজার ধরতে উঠে পড়ে লেগেছেন। এই মৌসুমে চাষীরা প্রায় ৬ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। গত বছর মৌসুমে প্রায় ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন পলাশ। ফুলক্ষেতের পাশাপাশি গদখালিতে গড়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্র ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতিও চোখে পড়ার মত।
চলতি মৌসুম ব্যবসা ফল হবে এমন স্বপ্ন দেখছেন দেশের ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালির চাষীরা। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় তাদের লাভ বেশি হবে এ আশায় বুক বাঁধছেন। তবে একই সময় নির্বাচনের মৌসুম হওয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কাও রয়েছে তাদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে সাত হাজার কৃষক ফুল চাষের সাথে জড়িত। দেশের মোট ফুলের চাহিদার ৭৪ শতাংশ এই জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে গদখালির ফুলের চাহিদা ও বিক্রি ক্রমাগত বাড়তে থাকে। একইসাথে বাড়তে থাকে ফুলের দামও।
প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন, থার্টিফাস্টর্ নাইট, ইংরেজি নববর্ষ, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব, ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অনুষ্ঠানকে টার্গেট করে মোটা অংকের ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্র থাকে গদখালির ফুল চাষীদের। চলতি বছরে আগামী ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে ঘিরে এই ফুল সেক্টর থেকে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা।
যশোরের গদখালি ফুলের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ বাজারে গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৪—৫ টাকা, চন্দ্রমলি¬কা প্রতি পিস ৩—৪ টাকা, গাদা ফুল প্রতি হাজার ৪০০—৫০০ টাকা, রজনীগন্ধা প্রতি পিস ৩—৪ টাকা, ঝাউ প্রতি পিস মানভেদে ৫০—১০০ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ১০—১২ টাকা। ভালো দামে ফুল বিক্রি করে সন্তুষ্ট চাষী ও ব্যবসায়ীরা। গদখালির থেকে পানিসারা ফুল মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন বাগান, ফুলের সেড ঘুরে দেখা যায়, আসন্ন দিবসগুলোকে উদ্দেশ্য করে ফুলের বাজার ধরতে বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষী এবং বাগানের কর্মচারীরা।
পানিসারা এলাকার ফুলচাষী ইসমাইল হোসেন বলেন, এ বছর চন্দ্রমলি¬কা, গোলাপ আর গাদা ফুলের চাষ করেছি। চাষের পরিমাণ কম হলেও এ বছর চাষীরা মোটামুটি ভালো দাম পাচ্ছে। তবে হরতাল—অবরোধে দ্বিগুণ গাড়িভাড়া দিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় ফুল সরবরাহ করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তার দশ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুল ও চারা চাষ করেছেন।
ফুলচাষী সাইফুল ইসলাম এ বছর ১ বিঘা জমিতে জারবেরা, রজনীগন্ধার চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমরা ভালো দাম পাচ্ছি। সেটা বজায় থাকলে ও দেশের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক না হলে অনুষ্ঠান বা দিবসগুলো সুন্দরভাবে উদযাপিত হয় তাহলে ভালো লাভ হবে। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর নানা কারণে চাষীরা দাম পায় না। এজন্য চলতি বছর সব চাষী স্বল্প পরিমাণে ফুলের চাষ করেছে। বাজার ধরার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি আশা করি দিবসগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে।
এক বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আজকের বাজারে গোলাপ প্রতি পিস ৪—৫ টাকায় বিক্রি করেছি। ১৬ ডিসেম্বরের আগে দাম আরও বাড়বে। এজন্য এখন গাছের যত্নের দিকে সবাই খেয়াল রাখতে হচ্ছে। ফুলচাষী নেতারা বলছেন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চলতি বছর গদখালির ফুলচাষীরা রেকর্ড পরিমাণের অংকের ফুল বাজারজাত করতে পারবে।
যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, এ বছর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ফুল বাইরের জেলাগুলোতে বিপননে আমাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমরা আশাবাদী দেশ স্বাভাবিক হবে এবং ফুলচাষীরা তাদের ফুল সুন্দরভাবে বাজারজাত করে লাভবান হতে পারবে।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, যশোরের গদখালি এলাকায় প্রায় সাড়ে ৬শ’ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। প্রায় সাত হাজার কৃষক এই ফুলচাষের সাথে জড়িত। গত মৌসুমে এই এলাকা থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকার ফুলের বেচাকেনা হয়েছে। এ বছর প্রায় ৬ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।