অবকাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিচারে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোলমডেল। বাংলাদেশের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বিশ্বনেতা। আমাদের শহীদ দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি এখন বিশ্বেব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে মর্যাদা পাচ্ছে, পালিত হচ্ছে। বাংলা ভাষাও এগিয়ে চলেছে। প্রযুক্তির দিক থেকে বাংলার বিপুল অগ্রযাত্রা হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি যে, বিশ্বব্যাপী বাংলা ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বের দেশে দেশে বাংলাদেশের মানুষ বসবাস করছে কর্মসূত্রে বা দ্বিতীয় আবাসভূমির নাগরিক হিসেবে।
বিশে^র বহু ভাষা যেখানে হারিয়ে যেতে বসেছে, সেখানে বাংলা ভাষার অবস্থান আমাদের গর্বিত করে। বিশ্বে বর্তমানে সাত হাজার ১৬৮টি ভাষা আছে। এর ৪২ শতাংশ ভাষাই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থায় আছে। অর্থাৎ তিন হাজার ৪৫টি ভাষা এখন বিলুপ্তির পথে। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক ভাষা চিরতরে হারিয়ে গেছে। বিশ্বের বহুল ব্যবহৃত ভাষাগুলোর মাঝে বাংলা সপ্তম। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বসবাস করে বাংলাদেশে এবং এরপর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে। তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান পৃথিবীতে বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা ২৭ কোটির বেশি।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগের আগে থেকেই ভাষা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার নির্দেশ দেয় এবং পাকিস্তান সরকারের এমন ঘোষণার বিরোধিতা করে বর্তমান বাংলাদেশের জনগণ। ছাত্ররা বুকের রক্ত ঢেলে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে। ক্রমবর্ধমান আন্দোলনের চাপে শেষ পর্যন্ত ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালে একসাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর বাংলাকে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা হয়। সবশেষে, বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য আন্দোলন এবং ভাষার অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
এবারের মাতৃভাষা দিবসে আমাদের একটি অর্জন বাংলা ফন্টসহ চালু হলো একগুচ্ছ প্রযুক্তি সেবা। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতমিন্ত্রী বলেন, একুশের চেতনায় ডাক ও তথ্যপ্রযুক্তি একসঙ্গে করে অন্তর্ভুক্তি ও সমন্বিত পদক্ষেপের নতুন একটি ভিত্তি রচিত হলো। দেশের গবেষক ও উদ্ভাবকরাই এসব প্রযুক্তি সেবা তৈরি করেছেন। তারা ১৬ ধরনের কম্পোনেন্ট ও ৪০ ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করেছেন নিজেদের নকশায়। এটাই আÍনির্ভরশীল বাংলাদেশের স্বাক্ষর। তিনি আরও বলেন, নতুন সেবার মধ্যে গুগল জি— বোর্ডের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এর অ্যাকিউরিসি রেট। উচ্চারণ, কথা, বর্ণমালা, পূর্ণ, অনুভব, ধ্বনি, গুরুত্ব সবই বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এটা আগামী দিনের সার্চ ইঞ্জিন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আÍনির্ভরশীলতার সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ।
বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যসম্ভারসহ সবক্ষেত্রের অর্জন বিশ্বব্যাপী আরও ছড়িয়ে পড়–ক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।