সমাজের কথা ডেস্ক : গবেষণা সংস্থা ব্লুমবার্গএনইএফের (বিএনইএফ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ সৌরবিদ্যুৎ।
জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর বাংলাদেশের অত্যাধিক নির্ভরতা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা কমিয়েছে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি বাড়িয়েছে পরিবেশ দূষণ। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য আশার আলো হয়ে উঠতে পারে কম দামে পাওয়া সৌরবিদ্যুৎ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌর প্রযুক্তি সুলভ হওয়ার কারণে ২০২৫ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ায় বিদ্যুতের সবচেয়ে সস্তা উৎস হয়ে উঠবে সৌরবিদ্যুৎ। এছাড়া এই দশকের শেষ নাগাদ সৌর প্লাস ব্যাটারি কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় সস্তা হবে।
এতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ দেশের ৯৭ শতাংশ বিদ্যুৎই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উৎপাদিত হয়। কিন্তু বিপরীতে বাংলাদেশ এখনও আরও কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। সেই সঙ্গে কার্বন নির্গমন কমাতে অপেক্ষাকৃত ক্লিনার গ্যাসের ওপর নির্ভর করছে।
কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের সঙ্গে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচের একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা করেছে ব্লুমবার্গ। তাদের প্রতিবেদন বলছে, নতুন একটি বড় আকারের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতি ঘণ্টায় ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের খরচ হবে ৯৭ থেকে ১৩৫ মার্কিন ডলার। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে খরচ হচ্ছে ৮৮ থেকে ১১৬ ডলার। আর কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে খরচ হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ ডলার। সৌরবিদ্যুতের প্রযুক্তি খরচ ২০২৫ সালে আরও কমে আসবে। আর ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যাটারিযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় সস্তা হয়ে দাঁড়াবে। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সৌরবিদ্যুৎ হতে পারে সস্তা বিকল্প।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের বরাতে ব্লুমবার্গএনইএফ জানিয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। যার পরিমাণ ৫৫ শতাংশ। এছাড়া ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হয় ও ৩২ শতাংশ আসে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।
আগে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ মজুত দিয়ে চালানো হতে। কিন্তু বর্তমানে তা কমে আসায় বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির ওপর নির্ভর হচ্ছে।
এদিকে গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে গ্যাসের দাম। এক্ষেত্রে আমদানিনির্ভর বাংলাদেশি জ্বালানি খাত ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। এতে সারাদেশে লোডশেডিং বাড়ার পাশাপাশি একটি বড় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও বন্ধ হয়ে যায়।
একদিকে করোনা অতিমারির প্রভাব, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি আমদানি বিল। এই দুই কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে জ্বালানি খাতে বৈচিত্র্য আনার বিষয়ে তাগিদ দিয়েছে ব্লুমবার্গএনইএফ।