সমাজের কথা ডেস্ক : অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বড় ধরনের আস্থা সংকটে ভুগছে দেশের বিমা খাত। দেশে ব্যবসা করা বিমা কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বিমা করছে খুব অল্পসংখ্যক মানুষ। দেড় কোটির কিছু বেশি মানুষ বিমা কোম্পানির মাধ্যমে বিমার আওতায় এসেছে। বিমা কোম্পানিগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা থাকলেও বিকল্প উপায়ে চার কোটির বেশি মানুষ বিমার আওতায় আছে। তাদের বিমার আওতায় নিয়ে এসেছে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) সনদ পাওয়া ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে ঋণ ও সঞ্চয় সেবার পাশাপাশি গ্রাহক কল্যাণ তহবিল গঠন করে এক জাতীয় বিমাসদৃশ সেবা দিয়ে আসছে। বিমা আইন অনুযায়ী, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের বিমা সেবা অবৈধ। কারণ বিমা আইন অনুযায়ী, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছ থেকে নিবন্ধন সনদ না নিয়ে কেউ বিমা ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না।
<<আরও পড়তে পারেন>> মজুতদারদের তালিকা করছে পুলিশ—র্যাব
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধন সনদ পাওয়া ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো চার কোটির বেশি ব্যাংকিং সেবাবহির্ভূত প্রান্তিক মানুষকে ক্ষুদ্রঋণ ও সঞ্চয় সেবাসহ বিভিন্ন আর্থিক সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যেই রয়েছে বিমা সেবা। এই বিমা সেবা হলো— গ্রাহক বা গ্রাহকের পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যের মৃত্যু হলে অথবা দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারালে গ্রাহককে ‘গ্রাহক কল্যাণ তহবিল’ থেকে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়াসহ সঞ্চয় ফেরত ও অবশিষ্ট ঋণ মওকুফ করে গ্রাহক কল্যাণ তহবিলের সঙ্গে সমন্বয় করা।
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো চার কোটির বেশি মানুষকে বিমা সেবা দিলেও বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর তথ্যমতে, দেশে ব্যবসা করা বিমা কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বর্তমানে বিমার আওতায় আছে দেশের এক কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার মানুষ। অর্থাৎ বিমা কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে যত সংখ্যক মানুষ বিমার আওতায় এসেছে, তার দ্বিগুণের বেশি মানুষ বিমা সুবিধা পাচ্ছেন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান থেকে।
বিপুল সংখ্যক মানুষ বিকল্প উপায়ে বা অবৈধ বিমার আওতায় থাকার বিষয়ে বিমা খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা বিমা খাতের জন্য খুবই খারাপ সংবাদ। এতে একদিকে বিমা কোম্পানিগুলোর বাজার নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ মানুষ প্রকৃত বিমা সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তবে তারা স্বীকার করেছেন, দেশের বিমা খাতে এক ধরনের ইমেজ সংকট রয়েছে। কিছু কোম্পানি গ্রাহকদের সঠিকভাবে দাবি পরিশোধ না করে নানাভাবে হয়রানি করেছে। এতে বিমার প্রতি মানুষের তৈরি হয়েছে আস্থার সংকট। যে কারণে দেশের বিপুল মানুষকে বিমার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, সদস্য মৃত্যুর ছয় মাস পরেও বিমা সুবিধা না পাওয়ায় বকেয়া বাড়তে থাকে। প্রিমিয়ামের সম্পূর্ণ টাকা ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচিতে ব্যবহারের কথা থাকলেও তা ব্যবহার করা হয়নি। বিভিন্নভাবে প্রতারিত ও হয়রানি হতে হতে বাংলাদেশে বীমার প্রতি মানুষের আস্থা কমতে কমতে কলানিতে নেমে গেছে। সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা বলছেন অন্তত: ১২ টি বীমা কোম্পানির ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারেন।