নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর পৌরসভায় বসবাসকারী বাড়ির মালিকদের পানির বিলের সঙ্গে সাব—মার্সিবল পাম্প ব্যবহার বাবদ ফি পরিশোধ করতে হবে। সাবমার্সিবল পাম্প বাবদ তিনশত টাকা বিল পরিশোধে নোটিশ দেয়া হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে নাগরিক সমাজ।
এই বিল প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণার হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। একইসাথে আগামীকাল মঙ্গলবার ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪ টায় প্রেসক্লাবে পৌরসভার করদাতাদের মতবিনিময় সভা আহ্বান করা হয়েছে। তবে পৌরসভা কতৃর্পক্ষ বলছে, পৌরসভার মাসিক সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিধি অনুসারে এই বিল ধার্য করা হয়েছে।
<<আরও পড়তে পারেন>> ভাগাড় থেকে মুক্তি মিলেছে যশোরবাসীর
জানা যায়, যশোর পৌরসভায় জরিপ চালিয়ে সাব—মার্সিবল পাম্প ব্যবহারকারী ১১ হাজার বাড়ির মালিক শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম পর্যায়ে তিন হাজার বাড়ির মালিককে সাব—মার্সিবল পাম্প ব্যবহার বাবদ প্রতি মাসে ৩শ’ টাকা হারে পরিশোধের জন্য নোটিশ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ২২ মার্চ পৌরসভার মাসিক সভার সিদ্ধান্তের আলোকে এই নোটিশ দেয়া হয়েছে। প্রায় এক বছর পর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে কতৃর্পক্ষ।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌরসভা পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা ২০২৩ মোতাবেক যেখানে পৌরসভা কতৃর্ক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে পৌর পরিষদের অনুমোদন ব্যতিত অন্যকোন উৎস হতে পানি সংযোগ গ্রহণ করা যাবে না।
সেই কারণে ২০২৩ সালের ২২ মার্চ পৌর পরিষদের মাসিক সভায় যশোর পৌর এলাকায় বাসাবাড়ি বা অন্য ভবনে স্থাপিত সাব মার্সিবল পাম্পের জন্য ভবন মালিককে মাসিক ৩শ’ টাকা বিল পরিশোধ করতে হবে। এই চিঠি নাগরিকদের হাতে পেঁৗছানোর পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর শহরের বাসিন্দা ও সাংস্কৃতিকর্মী নওরোজ আলম খান চপল বলেন, যশোর পৌরসভার নাগরিকরা নিয়মিত পৌর কর পরিশোধ করে থাকে। এই কারণে সেবা প্রদান করবে পৌরসভা। দুশ’ বছরের পুরাতন বসতি এলাকায় গেলে দেখতে পাবেন পানি নেই, ড্রেন নেই। ভাঙাচোরা রাস্তায় নাজেহাল অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে আবার নতুন করে সাব—মার্সিবল বিল জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া অযৌক্তিক। এটা চাঁদাবাজির শামিল।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বাম নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, পৌরসভায় নিয়মিত কর নেয়। তার ভিতরে ১০ শতাংশ পানি কর। এছাড়া সাপ্লাইয়ের পানি বাবদ মাসে প্রায় ৩শ’ টাকা বিল নেয়। কিন্তু নাগরিকরা ঠিকমত পানি পায় না। নাগরিকরা বাধ্য হয়েছে নিজস্ব খরচে সাব—মার্সিবল পাম্প স্থাপন করেছে। সেই সাব—মার্সিবল পাম্প বাবদ প্রতি মাসে ৩শ’ টাকা ফি ধার্য্য করেছে পৌরসভা। এ অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত।
একই মুরগি তিনবার জবাই দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌরসভা। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় নাগরিক সমাজ বৃহত্তর কর্মসূচি দিবে।
জানতে চাইলে যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি) বিএম কামাল আহমেদ বলেন, এক বছর আগের মাসিক সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক পৌর এলাকার ১১ হাজার বাড়ি মালিক শনাক্ত করেছি। যারা সাব—মাসিবল ব্যবহার করছেন। এদের মধ্যে তিন হাজার বাড়ির মালিককে সাব—মার্সিবল পাম্প বাবদ প্রতিমাসে ৩শ’ টাকা বিল পরিশোধের নোটিশ দেয়া হয়েছে।
বাকীদের পর্যায়ক্রমে নোটিশ দেয়া হবে। এটা আইন অনুযায়ী আদায়ের নোটিশ করা হয়েছে। আমরা কম ফি ধার্য্য করেছি। ঝিনাইদহ পৌরসভায় ৫শ’ ও কুষ্টিয়া পৌরসভায় ৮শ’ টাকা আদায় করা হয়। সেই হিসেবে আমাদের পৌরসভায় ৩শ’ টাকা অনেক কম।
যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শরীফ হাসান বলেন, পৌরসভা থেকে পানি নেয়া বাধ্যতামূলক। অন্যকোন উৎস থেকে পানি নিলে ফি দিতে হবে, এটাই আইনে আছে। এটা শুধু যশোর পৌরসভা নয়, সব পৌরসভার জন্য প্রযোজ্য। যশোর পৌরসভা অনেক দেরিতে সাব—মার্সিবল পাম্প বিল আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে, এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে নাগরিক সমাজ। এই বিল প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণার হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। একইসাথে আজ মঙ্গলবার ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪ টায় প্রেসক্লাবে পৌরসভার করদাতাদের মতবিনিময় সভা আহ্বান করা হয়েছে।
করদাতাদের পক্ষে বাম নেতা ইকবাল কবির জাহিদ এক পত্রে জানিয়েছেন, পৌরসভা একটি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। করদাতারা কিছু পরিমান সহযোগিতা করবে এবং পৌরসভা সরকার ও অন্যান্য স্থান থেকে সহযোগিতা নিয়ে নাগরিকদের সেবা দেবে—এটাই বিধান। যশোর পৌরসভা সেবা দানে ব্যর্থ। শুধু তাই না পৌরসভা এখন নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ।
নাগরিকরা পানি সুবিধা পাওয়ার জন্য মোট করের ১০% পানি কর দেয়। আবার মাসিক ২৭০/২৯০ টাকা পানি বিল দিয়ে পানি কিনে নিতে হয়। তবে সুপেয় বা পরিষ্কার পানি অধিকাংশ সময় পাওয়া যায় না। শুষ্ক মৌসুমে পানির জোর থাকে না। আপনি একবার পানির লাইন নিলে আর কোন দিন তা বিচ্ছিন্ন করতে পারবেন না। ব্যবহার না করলেও বিল দিতে হবে। এটা কোন যুক্তির মধ্যে পরে কি?
স্বাভাবিকভাবে পানি না পেয়ে নাগরিকরা পানি কষ্ট দূর করতে পকেটের টাকা ব্যয় করে সাবমার্সিবল নিতে বাধ্য হয়েছে। যারা নিয়েছেন তাদেরকে মাসে মাসে সাবমার্সিবেল বিল ৩০০ টাকা করে দিতে হবে বলে পৌরসভা নোটিশ করেছে।
তাহলে দাঁড়াল— একজন করদাতার পানি কর দিতে হবে, সাপ্লাইয়ের লাইন থাকলে পানি বিল দিতে হবে। যদি তিনি সাবমার্সিবল নেন, তবে সাবমার্সিবল বিল দিতে হবে। অর্থাৎ তাঁকে পানি সংক্রান্ত তিনটা বিল দিতে হবে। এটাই কি পৌরসভার সেবার নমুনা ? এটা অন্যায়, অযৌক্তিক। পৌরসভার এজাতীয় জুলুম মানা যায় না।
এজন আজ মঙ্গলবার ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪ টায় প্রেসক্লাবে পৌরসভার করদাতাদের এক মতবিনিময় সভা আহ্বান করা হয়েছে। তিনি পৌরবাসীকে সভায় উপস্থিত হয়ে মতামত দিয়ে পৌরসভার জুলুমের জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।