১৭ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পুলিশের অ্যাকশনে সন্তুষ্ট যশোরবাসী

# মদ্যপান ও মাদক রাখায় মদ্যপ টাক মিলন কারাগারে # শহরবাসীর সন্তুষ্টি প্রকাশ; বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ #অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি সাধারণ মানুষের

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরের আইন—শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনের কঠোর অবস্থানে সন্তুষ্ট যশোরবাসী। ইতোমধ্যে আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শহরের আলোচিত বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী ও গডফাদারকে গ্রেফতার করেছে। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন শহরবাসী। কোথাও কোথাও মিষ্টি বিতরণের ঘটনাও ঘটেছে। তারা প্রশাসনের প্রতি অভিযান অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। একইসাথে একটি স্বার্থান্বেষী মহল অভিযানের বিরোধিতা করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

<<আরও পড়তে পারেন>> টাক মিলন ও ম্যানসেল গ্রেফতার

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোর শহরে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে পরিচিত দুই ‘বড়ভাইকে’ বুধবার গ্রেফতার করে আইন—শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গ্রেফতারকৃত দু’জন হলেন, যশোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলন ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহবুব রহমান ম্যানসেল। এদিন পৃথক অভিযানে তাদের ছয় সহযোগীও গ্রেফতার হন। এছাড়াও এর আগে আরও কয়েকজন গডফাদার ও সন্ত্রাসের হোতাদের ডেরায় আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালায় এবং কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে।

এদিকে, যশোরের ‘বহুল আলোচিত’ পৌর কাউন্সিলর হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলনকে ‘মদ্যপ’ অবস্থায় মদসহ গ্রেফতার খবরে বৃহস্পতিবার শহরের মিষ্টি বিতরণ করে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। বুধবার রাতে যশোরের পালবাড়ি কাঁচা বাজার এলাকায় তার কার্যালয় থেকে তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার করা হয়। মদ্যপান ও মাদক রাখার অপরাধে রাতে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।

এদিকে, হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলনকে গ্রেফতার করায় পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শহরের পালবাড়ি, কাঠালতলা, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড, দড়াটানাসহ ১৫/২০স্থানে মিষ্টি বিতরণ ও মিষ্টিমুখ করেছেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা।
টাক মিলনের সাথে আটক তিনজন হলেন, শহরের টালিখোলা এলাকার আকবার আলী ছেলে দস্তগীর, কদমতলা এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে শফিকুল ইসলাম ও টালিখোলা এলাকার আব্দুল গফফারে ছেলে মারুফুজ্জামান। পরে পুলিশ আটককৃতদের নিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে যায়। সেখানে মদ্যপদের ওয়াশ করা হয়।

যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মদ্যপান ও তিন বোতল বিদেশি মদ রাখার অপরাধে জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই অপরাধে টালিখোলা এলাকার আকবার আলী ছেলে দস্তগীর, কদমতলা এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে শফিকুল ইসলাম ও টালিখোলা এলাকার আব্দুল গফফারে ছেলে মারুফুজ্জামানকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে পালবাড়ি এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘ ধরে কাঁচা বাজারে ব্যবসা করি; অনেক সন্ত্রাসী দেখেছি। তাদের পরিণতি পরবর্তীতে ভাল হয় না। তারা সমাজ এবং রাষ্ট্রে শত্রু। টাক মিলন আমাদের উপরে বিনা কারণে অন্যায় অত্যাচার করতো। তার গ্রেফতারে এলাকাবাসী আজ খুশি।
তারা আরও বলেন, টাক মিলন যে অফিসে বসে মদ্যপান ও অপরাধের চালায়। তার পাশের রুমে একটি মাদরাসা রয়েছে। সেখানে পড়াশুনা করে শিক্ষার্থীরা। তাকে বার বার বিরত থাকতে বলা হলেও ওই অফিসে বসে মদ্যপান করেন টাক মিলন। তাই তাকে গ্রেফতার করায় খুশি এলাকাবাসী।

সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কারণে খুশি যশোরবাসীও। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে যশোরের কিশোর গ্যাং বেড়েছে। তাদের হাতে খুনও হচ্ছে মানুষ। কিশোর গ্যাং তৈরি কারিগরদের আইনের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানিয়েছিলাম প্রশাসনের কাছে। সেই দাবির প্রেক্ষিতে কিছু চিহৃিত সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশের কর্মকান্ডে আমরা সাধারণ মানুষেরা সন্তুষ্ট। অভিযান অব্যাহত থাকুক।

যশোর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, অনেক দিন ভালো ছিলাম। হঠাৎ কিছু দিন দেখলাম যশোরে মানুষের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এরপর পুলিশের এই অ্যাকশনে আমরা খুশি। সকল খুনি ও দাগি আসামি গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকুক। তবে একটি মহল জেলা পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অপসারণের দাবি জানিয়েছে। এতে আমরা আতঙ্কিত। এই জেলা আবার না জানি কালো মেঘ ঢেকে যায়।

বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, যে কারণে খুন হচ্ছে। সেটা আগে চিহৃিত করতে হবে। তারপরে আসল মূল উপড়িয়ে ফেলতে হবে। তবেই সমাধান হবে। আশা করছি প্রশাসন এটা করতে পারবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় কার্যকরি সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম বলেন, যারা শান্তি বিনষ্ট করে, মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে রাখে; তাদের আটক করা পুলিশের দায়িত্ব। এসব সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করায় মানুষের মধ্যে আশা আলো সৃষ্টি হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকতে হবে।

এদিকে, পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, জাহিদ হাসান মিলন ওরফে টাক মিলনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে দুবাই চলে যান তিনি। নাগালের বাইরে থাকায় তখন গ্রেফতার করতে পারেনি যশোরের পুলিশ। অবশেষে দুবাই থেকে দেশে ফেরার পথে টাক মিলনকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া এলাকার যুবলীগ কর্মী শরিফুল ইসলাম সোহাগকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। অভিযোগ রয়েছে, ওই হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী টাক মিলন। ওই মামলায় আটক এক আসামির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে টাক মিলনের নাম উঠে আসে। এই মামলার সন্ধিগ্ধ আসামি তিনি। এছাড়াও একাধিক মামলা, অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

টাক মিলন যশোর শহরের পালবাড়ি এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে ইজিবাইক, ট্রাকে ব্যাপক চাঁদাবাজি, এলাকার মানুষের কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও পালবাড়ির রয়েল কমিউনিটি সেন্টারে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাসিনো (জুয়া) ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারির সামনে মানিক ওরফে ডিম মানিককে হত্যা করা হয় টাক মিলনের নির্দেশে।

রুহুল নামে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যার পর শহরের কাজীপাড়া তেঁতুলতলা নদীর পাড়ে পুতে রাখা হয়। কাজীপাড়া এলাকার শিমুলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে জখম করে টাক মিলনের ক্যাডার বাহিনী। বছর খানেক পর শিমুল মারা যান। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যার মূলপরিকল্পনাকারীর মধ্যে মিলনের নাম রয়েছে।
শুধু খুন নয়, চাঁদাবাজি, জুয়া, টেন্ডারবাজি, বোমাবাজির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে টাক মিলন ও তার ক্যাডার বাহিনীর।

আর শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যানসেলের বিরুদ্ধে রয়েছে দেড় ডজন মামলা। ২০০৮ সালে পুলিশের কথতি ক্রসফায়ারে ম্যানসেল ডানপায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতো। কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেকে কখনো বেরিয়ে আসেনি। বরং তার পায়ে পুলিশ গুলি করার পর ম্যানসেল আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ২০১০ সালের দিকে তৎকালীন যশোর সদরের এমপি খালেদুর রহমান টিটোর হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করে।

পরবর্তীতে যশোর সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগ নেতা কাজী নাবিল আহমেদ। ম্যানসেল কাজী নাবিল আহমেদের গ্রুপে যোগ দিয়ে তার ছত্রছায়ায় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রায় দুই বছর আগে কাজী নাবিল আহমেদের আশীর্বাদধন্য হয়ে ম্যানসেল শহর যুবলীগের কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়কের পদ লাভ করেন। কিন্তু সরকারি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে হামলা ও কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় কারাগারে যাওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram