২০শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিলাল হোসেন মাহিনী
পাপীদের মধ্যে উত্তম মানুষ কারা
101 বার পঠিত

বিলাল হোসেন মাহিনী : আল্লাহ রব্বুল আলামিন ধৈর্যশীল মানুষকে খুব ভালোবাসেন। কেননা, আল্লাহ তায়ালা নিজেই ধৈর্যশীল, ক্ষমাশীল ও পরম সহিষ্ণু। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ ভুল করে চলেছে। ভুল করা মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম। আর আল্লাহর অন্যতম স্বভাব হলো তার বান্দা তথা মানুষকে ক্ষমা করা।

আরবি ‘ইনসান’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হলো মানুষ। যার উৎপত্তি হয়েছে ‘নিসইয়ান’ থেকে। নিসইয়ান অর্থ ‘ভুলে যাওয়া’। আর ভুলে যাওয়া বা ভুল করা মানুষের সহজাত ও স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ চান তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিতে; আর মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৮)

নিজ প্রবৃত্তি ও শয়তানের কু—মন্ত্রণায় মানুষ গুনাহ করে। আল্লাহর অবাধ্য হয়। শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে নানা রকম পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল বান্দার প্রতি বড়ই সহিষ্ণু। খাঁটি তওবা করার পর আল্লাহ তায়ালা তার সব ধরনের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। মহানবী সা. বলেন, ‘প্রতিটি আদম সন্তানই পাপপ্রবণ।

আরও পড়তে পারেন : ইসলামে নারীর সম্মান

আর পাপীদের মধ্যে উত্তম মানুষ হলো তারা, যারা তওবা করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৯৯) বিশ্বনবী সা. ছিলেন ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার অনুপম আদর্শ। তিনি কখনো অন্যায়ভাবে কারও গায়ে হাত তোলেননি। ব্যক্তিগত কারণে কাউকে শাস্তি দেননি। কাউকে কটু কথাও বলেননি। সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে এসেছে, একবার এক বেদুইন এসে তার গায়ের চাদর ধরে জোরে টান দেয়। তখন নবী (সা.) হাসি মুখে তার সঙ্গে কথা বলেন। কোনো ধরনের বিরক্তি প্রকাশ করেননি।

আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা নবীজির চাচা হামজা রা.—এর বুক চিরে কলিজা বের করে দাঁত দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে টুকরো টুকরো করেছে। সে যখন আল্লাহর রাসুলের কাছে আসে, নবীজি তাকে ক্ষমা করে দেন। ওয়াহশি রা. উহুদের যুদ্ধে হামজা রা.—কে বর্শার আঘাতে হত্যা করে। নবীজি তাকেও ক্ষমা করে দেন। এমনকি আবু সুফিয়ানকেও মক্কা বিজয়ের দিন ক্ষমা করে দেন।

অথচ আবু সুফিয়ান গোটা জীবন ইসলামের বিরুদ্ধে লড়েছে। ইসলামের আলো নিভিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। অপরাধীদের সঙ্গে এই ছিল নবীজির আচরণ। ইসলামের নীতি হলো মানুষের সঙ্গে কোমল আচরণ করা, সে যতই অপরাধী হোক। তাকে সঠিক ও কল্যাণের পথে নিয়ে আসা। কোনো কোনো লোক ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছেন আবার কেউ কেউ অসদুপায় অবলম্বন করেছেন, এরপরও নবী (সা.) সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহিষ্ণু আচরণ করেছেন। কারও প্রতি রূঢ় আচরণ করেননি।

তাফসির ইবনে কাসিরে বর্ণিত হয়েছে, একবার উমর ইবনে খাত্তাব রা. এক লোকের খোঁজ করলেন। লোকটি সিরিয়ার বাসিন্দা ছিল। নামাজ—রোজা করতো। সাহাবিরা বললেন, ‘হে আমিরুল মুমিনিন, ‘সে তো এখন নিয়মিত মদপান করে। তাকে অনেক দিন এদিকে দেখা যায় না।’ উমর রা. সঙ্গে সঙ্গে পত্রলেখককে ডেকে বললেন, ‘লেখো, উমর ইবনুল খাত্তাবের পক্ষ থেকে অমুকের প্রতি।

আসসালামু আলাইকুম, পর সমাচার হলো, আমি তোমার কাছে মহান আল্লাহর প্রশংসা করছি। তিনি একমাত্র প্রভু। ক্ষমাকারী, তওবা কবুলকারী, কঠোর শাস্তি প্রদানকারী এবং প্রাচুর্যের মালিক। আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নেই। তার কাছেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ তারপর তিনি সাহাবিদের বললেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য তোমরা দোয়া করবে, যেন সে ফিরে আসতে পারে এবং আল্লাহ তার তওবা কবুল করে নেন।’

লোকটি চিঠি পাওয়ার পর তা বারবার আওড়াতে লাগল, ‘তিনি আল্লাহ, যিনি পাপের ক্ষমাকারী, তওবা কবুলকারী এবং কঠোর শাস্তি প্রদানকারী।’ সে বারবার বলতে লাগল, উমর আমাকে আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করলেন। ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিলেন। একপর্যায়ে সে কেঁদে ফেলে। মদপান করা ছেড়ে দেয়। উত্তমরূপে তওবা করে। উমর রা. তার কথা শোনার পরে সাহাবিদের বললেন, ‘তোমাদের কোনো ভাইয়ের পদস্খলন দেখলে তার সঙ্গে এমন আচরণ করবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করবে যেন তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। কখনো তাকে দূরে ঠেলে দেবে না। শয়তানের হাতে রেখে দেবে না।’ (উমদাতুত তাফাসির : ৩/২০৭, বাইহাকি : ৬২৬৩)

বিশ্বনবীর সা. সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ থেকে বর্ণিত, ‘এক রাতে তিনি উমর রা.—এর সঙ্গে পাহারা দিচ্ছিলেন। রাত গভীর হলে তারা হাঁটতে শুরু করেন। পথিমধ্যে একটা ঘরে বাতি জ্বলতে দেখা গেল। তারা ঘরটার দিকে এগিয়ে গেলেন। একপর্যায়ে ঘরের ভেতর মানুষের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। উমর রা. আবদুর রহমানের হাত ধরে বললেন, ‘আচ্ছা তুমি কি জানো এটা কার ঘর? তিনি বললেন, না। তখন উমর বললেন, ‘এটা রাবিয়া ইবনে উমাইয়ার ঘর। মনে হয় তারা মদপান করছে। তোমার কি মনে হয়? তখন আবদুর রহমান ইবনে আউফ বললেন, ‘কুরআনে আমাদের মানুষের পিছু নিতে বারণ করা হয়েছে।’ এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে উমর ওখান থেকে সরে পড়েন।’ (বাইহাকি, হাদিস : ১৭২২৫)।

মানুষ ভুল করবে, পাপ করবে। এটাই স্বাভাবিক। তাই মানুষের ভুল কিংবা গুনাহের কারণে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা উচিত নয়। কেউ অপরাধী হলে তাকে দূরে ঠেলে দিতে নেই। বরং এ ক্ষেত্রে ধৈয্যর্ ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে। উত্তম ও কোমলতাপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে অপরাধীকে সঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে ক্ষমা, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সাথে ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন।

লেখক : প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, অভয়নগর, যশোর। ইমেইল : bhmahini@gmail.com

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram