নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে ৬টি আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন ৪৬ জন প্রার্থী। তবে যাচাই বাছাইয়ে বাতিল হয়েছে ১৮ জন প্রার্থীর মনোনয়ন। বৈধ প্রার্থী রয়েছেন ২৮ জন। রোবাবর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত যাচাই বাছাই করে এসব প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। ফলে ভোটের আগেই নির্বাচনী ট্রেন থেকে ছিটকে পড়লেন ১৮ প্রার্থী। যদিও তাদের আপিলের সুযোগ রয়েছে। বাতিল হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১% ভোটারদের তালিকায় গড়মিল থাকায় তাদের প্রার্থীতা বাতিল হয়েছে। এছাড়া হলফনামা, আয়কর তথ্যের গড়মিলের কারণে অন্যরা বাদ পড়েছেন।

দিন শেষে যশোরের ৬টি আসনে মনোনয়নপত্র বাতিলের তালিকায় ঠাঁই হয়েছে যশোর—১ (শার্শা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য মো. নাজমুল হাসান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের মো. সোহরাব হোসেন, জাতীয় পার্টির আক্তারুজ্জামানের মনোনয়নপত্র। এদের মধ্যে মো. নাজমুল হাসান, ও মো. সোহরাব হোসেনের একভাগ ভোটার তালিকাগত সমস্যা এবং সিআইবি ঋণ খেলাফির জামিনদার থাকায় বাদ পড়েছেন আক্তারুজ্জামান।

বাতিলের তালিকায় রয়েছেন যশোর—২ (চৌগাছা—ঝিকরগাছা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী চৌগাছার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হাবিবুর রহমান ও বিএনএফ প্রার্থী শামছুর হকের মনোনয়নপত্র। তবে শতকরা একভাগ ভোটার তালিকা ঠিক না থাকায় এসএম হাবিবুর রহমান এবং টিন নম্বর না থাকা ও আয়কর রিটার্ন দাখিল না করায় বাদ পড়েছেন শামছুল হক।

বাদ পড়েছেন যশোর—৩ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম মিলন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের সদর উপজেলা সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মোহাম্মদ তৌহিদুজ্জামান, তৃণমূল বিএনপির কামরুজ্জামান, জাকের পার্টির মহিদুল ইসলাম ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী শেখ নুরুজ্জামান।

এদের মধ্যে শতকরা একভাগ ভোটার তালিকা ঠিক না থাকায় শহিদুল ইসলাম মিলন ও মোহিত কুমার নাথ, হলফনামা ও আয়করের তথ্যের গরমিল থাকায় তৌহিদুজ্জামান, কামরুজ্জামান ও জাকের পার্টির মহিদুল ইসলামের এবং বিদ্যুৎ বিল না দেয়ায় শেখ নুরুজ্জামানের মনোনয়ন বাতিল হয়। যশোর—৪ (অভয়নগর—বাঘারপাড়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সচিব সন্তোষ কুমার অধিকারীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। শতকরা একভাগ ভোটার তালিকা ঠিক না থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।

যশোর—৫ (মণিরামপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেন লাভলু, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি খান টিপু সুলতানের ছেলে হুমায়ুন সুলতান, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল হাসান বারী ও জাকের পার্টির হাবিবুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এরমধ্যে শতকরা একভাগ ভোটার তালিকা ঠিক না থাকায় কামরুল হাসান বারী, আমজাদ হোসেন লাভলু, হুমায়ূন সুলতান এবং সমর্থনকারী অন্য নির্বাচনী আসনের ভোটার হওয়ায় জাকের পার্টির হাবিবুর রহমানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। বাতিলের তালিকায় রয়েছেন যশোর—৬ (কেশবপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মোহাম্মদ ইসলাম। এর মধ্যে শতকরা একভাগ ভোটার তালিকা ঠিক না থাকায় হোসাইন মোহাম্মদ ইসলাম ও আয়কর ফরম—১০ বি জমা না দেয়ায় আজিজুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

বাতিলের তালিকায় সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপত্র রয়েছে যশোর—৩ (সদর) আসনে। এই আসনে সর্বাধিক ৬ জনের মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়েছে। আসনটি থেকে সর্বাধিক ১০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। সবচেয়ে কম বাতিল হয়েছে যশোর—৪ (বাঘারপাড়া—অভয়নগর) আসন থেকে। এই আসনে ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করলেও মাত্র একজনের প্রার্থীতা বাতিল হয়।

ফলে যশোর রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে যাচাই—বাছাই শেষে ২৮ জনের প্রার্থীতা বৈধ বলে গণ্য হয়। বৈধ প্রার্থীরা হলেন যশোর—১ (শার্শা) আসনে আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী বেনাপোলের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল আলম ও জাকের পার্টির সবুর খান। যশোর—২ (ঝিকরগাছা—চৌগাছা) আসনে আওয়ামী লীগের ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের জেলা যুগ্ম সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির মুফতি ফিরোজ শাহ, জাকের পার্টির সাফারুজ্জামান ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের আব্দুল আওয়াল। যশোর—৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান এমপি কাজী নাবিল আহমেদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মারুফ হাসান কাজল, জাতীয় পার্টির মাহবুব আলম বাচ্চু, বাংলাদেশ ন্যাশনাল পিপলস পার্টির অ্যাড. সুমন কুমার রায়।

যশোর—৪ (বাঘারপাড়া—অভয়নগর) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নওয়াপাড়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হক বাবুল, স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং বর্তমান এমপি রণজিত কুমার রায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সুকৃতি কুমার মন্ডল, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. ইউনুছ, জাকের পার্টির লিটন মোল্লা, জাতীয় পার্টির জহুরুল হক, তৃণমূল বিএনপির লে. ক.(অব)এম শাব্বির আহমেদ।

যশোর—৫ (মণিরামপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচায্যর্, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য ও জেলা কৃষকলীগের সহ—সভাপতি এসএম ইয়াকুব আলী, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আবু নসর মোহাম্মদ মোস্তফা, জাতীয় পার্টির এমএ হালিম, ও ইসলামী ঐক্যজোটের হাফেজ মাওলানা নূরুল্লাহ আব্বাসী।

যশোর—৬ (কেশবপুর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং বর্তমান এমপি শাহীন চাকলাদার, স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এইচএম আমির হোসেন, জাকের পার্টির সাইদুজ্জামান ও জাতীয় পার্টির জিএম হাসান।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, যশোরে ৬টি আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন ৪৬ জন প্রার্থী। তবে যাচাই বাছাইয়ে বাতিল হয়েছে ১৮ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র। বাতিল হওয়া প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশন বরাবর আবেদন করে আপিল করতে পারবেন।