৪ঠা মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নারীর ক্ষমতায়ন এবং প্রতিবন্ধকতা
55 বার পঠিত

আবির হাসান সুজন : নারীর ক্ষমতায়ন বলতে এমন একধরনের অবস্থাকে বোঝায়, যে অবস্থায় নারী তার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাধীন ও মর্যাদাকর অবস্থায় উন্নীত হতে পারে। নারীর ক্ষমতায়ন তখনই সম্ভব, যখন কোনও বাধা বা সীমাবদ্ধতা ছাড়াই নারী শিক্ষা, কর্মজীবন এবং নিজেদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে পারবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন নারী উন্নয়নের পথপ্রদর্শক। ১৯৬৭ সালে মহিলা লীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু নারীদের মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দেন।

বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনে রেখে শিক্ষায় নারীদের শতভাগ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা, নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করা, আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নারীদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করাসহ রাজনীতিতে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহ প্রদান করে আসছেন।
নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে কোনও জামানত ছাড়াই সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা এসএমই ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা রাখা করেছেন। আবার নারী উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ ব্যাংক ও এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ১০ শতাংশ সুদে ঋণও নিতে পারছেন। বর্তমানে ৩০ লাখেরও বেশি নারী শ্রমিক পোশাক শিল্পে কর্মরত আছেন।

আমাদের নারীসমাজ খেলাধুলায়ও পিছিয়ে নেই। প্রথম নারী উপাচার্য, প্রথম নারী পর্বতারোহী, বিজিএমইএ প্রথম নারী সভাপতি, প্রথম মেজর, প্রথম নারী স্পিকার, প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিগত এক দশকে সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর যথাযোগ্য অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধানে নারীর অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। ১৯ অনুচ্ছেদে বর্ণনা হয়েছে— “জাতীয় জীবনে সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের ক্ষমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবে।” ২৭ নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে— “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।” এছাড়াও ২৮(১), ২৮(২), ২৮(৩), ২৮(৪), ২৯(১), ২৯(২)— ধারায় নারী—পুরুষ, ধর্ম—বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকারের বিধান রয়েছে। ৬৫(৩) ধারায় নারীর জন্য জাতীয় সংসদে আসন সংরক্ষিত আছে এবং এ ধারার অধীনে নারী স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।

নারীর প্রতি সব ধরনের সহিসংতা রোধে ২০১২ সালে প্রণয়ণ করা হয় পারিবারিক সহিংসতা দমন ও নিরাপত্তা আইন ২০১২। নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে প্রণয়ণ করা হয় মানবপাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১১। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭ প্রণয়ণ করা হয়েছে। এছাড়া মেয়েশিশুদের নিরাপত্তায় শিশু আইন ২০১৩ প্রণীত হয়েছে। হিন্দু নারীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার্থে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন ২০১২ প্রণয়ণ করা হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতিও গ্রহণ করেছেন। দেশের এতো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড থাকা সত্ত্বেও নারী সমাজ আজও লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার।

তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশের নারী হিসেবে বাঙালি নারীদের প্রতিটি পদক্ষেপে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। অশিক্ষা, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা নারী উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতাটি এখনও নারীবিরোধী নেতিবাচক মানসিকতা। আমাদের সমাজে এখনও এই এই ধারণা আছে, নারীর প্রাথমিক কাজ ঘর—সংসার দেখে রাখা, স্বামী—শ্বশুরের খেদমত করা। যদিও এইসব দেখে রাখা ও খেদমত করার নামে নারীর কাঁধে বিপুল পরিমাণ মজুরিবিহীন কাজের ভার চেপে দেয়ার প্রয়াস।

তাছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধার অপর্যাপ্ততার কারণে কিশোরীরা প্রজননতন্ত্রের নানা সংক্রমণেও ভোগে, যা তাদের শারীরিক—মানসিক বিকাশে এবং ক্ষমতায়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় এ চিত্র আরও ভয়াবহ। পেশাজীবী নারীদের সিংহভাগকেই বাসস্থান ও কর্মস্থলে যাতায়াত করতে হয় গণপরিবহনে, যেখানে নিয়মিতভাবে তাদের যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। এসব অপরাধে যুক্ত থাকে একইসঙ্গে পুরুষ যাত্রী এবং পরিবহন শ্রমিকরা।

নারী যাতে নির্বিঘ্নে বাসে চলাচল করতে পারে, সেজন্য বিধি মোতাবেক কিছু আসন সংরক্ষণ করা হলেও প্রায়ই ওসব আসন দখল করে রাখে পুরুষ যাত্রীরা। সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়ে ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার নারীর বেশিরভাগই নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চায় না সামাজিকতার ভয়ে।

যেভাবে নারীরা তাদের মেধা, শ্রম, সাহসিকতা, শিক্ষা ও নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের দেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে সেই একইভাবে আমাদের যুব সমাজের উচিত হাতে হাত মিলিয়ে তাদের সাহায্য সহযোগিতার দারা দেশকে চরম উন্নতির পথে ধাবিত করা।

গ্রামে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে যাতে গ্রামীণ নারী—পুরুষ অপেক্ষাকৃত ভালো জীবনযাপন করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ঊারফবহপব অপঃ ১৮৭২—এর ১৫৫ ধারা, যা ধর্ষিতা নারীর চরিত্র ও জীবনধারা নিয়ে প্রশ্ন করার এখতিয়ার প্রদান করে, সেই বৈষম্যমূলক এবং অপমানজনক ধারাটিকে আমাদের উচিত খুব তাড়াতাড়ি বাতিল করা।

নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি শিক্ষিত জাতি দেব।’ আরেকটি কথা আছে, একজন পুরুষ মানুষকে শিক্ষা দেওয়া মানে একজন ব্যক্তিকে শিক্ষা দেওয়া। আর একজন নারীকে শিক্ষা দেওয়া মানে একটি গোটা পরিবারকে শিক্ষিত করে তোলা। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন। প্রচার মাধ্যমগুলোতে নারীর নেতিবাচক উপস্থাপন বন্ধ হতে হবে। নারী কোনো পণ্য নয়। এই জন্য আইনের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

নারীশিক্ষা ও নারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। নারীকে তার কাজের যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে। নারীর কাজকে ছোট করে দেখা চলবে না। নারীর ক্ষমতায়নে নারীকেই সবার প্রথম এগিয়ে আসতে হবে। নিজেরা সচেতন না হলে, নিজের উন্নয়ন নিজে না ভাবলে ক্ষমতায়ন অসম্ভব। তাই নারীদের যাবতীয় অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। পরিশেষে আমাদের উচিত কাজী নজরুল ইসলামের অমর বাণী কাজে লাগিয়ে হাতে হাতে কাজ করা।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram