২৮শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ

নাছিমা বেগম এনডিসি : একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতায়ন অপরিহার্য। প্রাসঙ্গিকভাবে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের 'নারী' কবিতার বিখ্যাত দুটি চরণ "বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।"— বিশ্লেষণ করলেই দেখা যায় নারী—পুরুষের সম্মেলনে সৃষ্ট এই পৃথিবীতে দুজনই অপরিহার্য। কিন্তু আমরা জানি যুগ যুগ ধরে রাষ্ট্র, সমাজ এবং জনজীবনে সুবিধা ভোগের ক্ষেত্রে নারী বৈষম্যের শিকার। এ অবস্থার উত্তরণে নারীদের প্রতিনিয়তই করতে হয়েছে সংগ্রাম।

নারীর অধিকার মানবাধিকার হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। নারী—পুরুষ একজন আরেকজনের পরিপূরক হলেও উনিশ শতকের গোড়ার দিকে মেয়েরা বাড়ির বাইরে পা রাখার কথা ভাবতেও পারতো না। পড়াশোনা ছিল কল্পনার বাইরে! কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষের চিন্তাধারা বদলে যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে সমাজব্যবস্থা। এখন নারীরা অবাধে পড়াশুনার পাশাপাশি নানা পেশায় কাজ করছে। এই পরিবর্তন হঠাৎ করেই আসেনি। এই উপমহাদেশের নারীদের অন্ধকার কূপ থেকে টেনে আনতে সবার আগে হাত বাড়িয়েছিলেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি উনবিংশ শতাব্দীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন রক্ষণশীল সমাজের শৃঙ্খল ভেঙে নারী সমাজে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে ক্ষমতায়নের পথ দেখিয়ে গেছেন।আশার কথা হলো দিনে দিনে মানুষের মাঝে সচেতনতা বেড়েছে। সকল মানুষের ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে জাতিসংঘ কর্তৃক সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র —১৯৪৮ গৃহীত হয়। ঘোষণাপত্র অনুসারে মানুষ হিসেবে নারীর এই প্রাপ্য অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না।

<<আরও পড়তে পারেন>> ‘নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় পুরুষকেও এগিয়ে আসতে হবে’

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সময়ের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন, নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছেন, সংবিধানে নারীর অধিকার সমুন্নত রেখেছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নের কথা সমভাবে বলেছেন। সংবিধানের ১৯, ২৭, ২৮ এবং ২৯ অনুচ্ছেদে নারীর অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে রাষ্ট্রের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার রয়েছে। পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমতা ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সংবিধানে ২৮(৪) উপ—অনুচ্ছেদে বিশেষ বিধানও রাখা হয়েছে। সংবিধানের এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ সে সময়কার সামাজিক পরিবেশ বা রাজনৈতিক পরিবেশে কঠিন কাজ হলেও বঙ্গবন্ধু সে কাজটাও করে গেছেন। জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৭৯ সালে গৃহীত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ (সিডও) সনদের প্রতিটি অনুশাসনই বঙ্গবন্ধুর ১৯৭২—এর সংবিধানে বিদ্যমান।

বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক—বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার মা—বোনদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয় করে রাখা এবং তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৭২ সনেই বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজে তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু এই নারীদেরকে 'বীরাঙ্গনা' সম্মাননা উপাধিতে ভূষিত করেন। বঙ্গমাতাবেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বীরাঙ্গনা নারীদের বিয়ের ব্যবস্থাসহ পারিবারিক ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের সর্বাত্মক সহায়তা করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে নারী পুনর্বাসন বোর্ডকে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশনে রূপান্তরিত করেন; যা পরবর্তীতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও জাতীয় মহিলা সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

নারীকে সুযোগ দেয়া হলে সে যে শিক্ষা—দীক্ষা, জ্ঞান—বিজ্ঞান, ক্রীড়া—সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি সকলক্ষেত্রেই তার যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে, পুরুষের সাথে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারে— তার শত শত উদাহরণ বাংলাদেশে বর্তমান। বঙ্গবন্ধু নারীর রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিকাশের জন্য সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে নারীর জন্য জাতীয় সংসদের আসন সংরক্ষিত রাখা হয়। এক্ষেত্রে ৬৫(২) অনুচ্ছেদের অধীনে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত ৩০০ আসনেও নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদের আলোকে সংরক্ষিত আসনে ১৫ জন নারী সদস্য নিয়ে ১ম সংসদের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে তা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫০ জনে উন্নীত হয়।

নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের অন্যতম শর্ত হিসেবে ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে শতকরা ৩৩ ভাগ আসন নারীদের জন্য বরাদ্ধ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বিস্ময়কর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ৩৫০ জন সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৭০ জন নারী সদস্য রয়েছেন। একাদশ সংসদের তুলনায় নির্বাচিত নারীসংসদ সদস্যদের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও নারী মন্ত্রীর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ বর্তমানে ৮ জন নারী মন্ত্রিপরিষদে দায়িত্ব পালন করছেন। এবারই প্রথম অর্থ মন্ত্রণালয়ে একজন নারী প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জাতীয় সংসদের উদ্যোগে গঠিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিটিতেই নারী সংসদ সদস্যের অন্তর্ভুক্তি রয়েছে। ২০১৩ সালে নবম জাতীয় সংসদে ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হয়ে পর পর চতুর্থ মেয়াদে স্পিকার হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। মাননীয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গত ৯ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী এ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হয়েছেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি সিপিএ চেয়ারম্যান। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে থাকে সিপিএ।

সাধারণত নারীরা ঘর সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকে এবং তাদের এই কাজের কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। কিন্তু নারী—পুরুষের সম অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে দেশকে উন্নত বিশ্বে পৌঁছানো সম্ভব নয়। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, জেন্ডার রেসপনসিভ বাজেট বাস্তবায়ন করছে। নারীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের ১০ শতাংশ সুদে বিনা জামানতে পঁচিশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন প্রদানের সুযোগ রেখেছে। তৃণমূলের নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য তাদের জীবন দক্ষতামূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষিত বেকার মহিলাদের আত্ম—কর্মসংস্থান এবং কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহিলারা ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সার ট্রেনিং গ্রহণ করে আয় করতে পারায় তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।নারীদের ব্যবসায় উৎসাহ প্রণোদনা প্রদানসহ উদ্যোক্তা সৃজনে সরকারের বহুমুখি পদক্ষেপ রয়েছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা কর্তৃক ঝসধষষ ধহফ গবফরঁস ঊহঃবৎঢ়ৎরংবং (এসএমই) ঋণ প্রাপ্তির সুবিধার্থে নারী উদ্যোক্তাদের গ্রুপভিত্তিতে এসএমই ঋণ প্রদানের নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রতিটি ব্যাংক ও নন—ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ও শাখা পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আবশ্যিকভাবে উইমেন এন্টেপ্রেনিয়র ডেডিকেটেড ডেস্ক খোলা হয়েছে। নারী উদোক্তাদের কম সুদে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।

নারীর সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থায় নারী কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকিস্তান আমলে আইন ছিল কোনো মেয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিসে প্রবেশ করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু সে আইন পরিবর্তন করে মেয়েদের জন্য সব পেশা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। আমাদের সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদ আলোকে ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে।’ ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদে ‘নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন, সে উদ্দেশ্যে তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না।’ এ বিধানের আওতায় নারীদের বিভিন্ন পর্যায়ে নিনিয়োগগের সম—সুযোগ থাকার পরেও বিশেষ সুযোগ হিসেবে নির্ধারিত কোটায়নিয়োগ পাওয়ায় চাকরি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।

পূর্বে নারীদের মেডিকেল কোর ছাড়া আর কোথাও চাকরির সুযোগ ছিল না। বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশের মেয়েরা যাতে কাজের সুযোগ পায়, কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন এবং তিনবাহিনীসহ বর্ডার গার্ডেও নারীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে মহিলা জজ নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করেনসরকার। এখন অনেক নারী জজ হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশবাহিনীর একটি নারী কন্টিজেন্ট কঙ্গোতে খুব ভাল কাজ করায় মেয়েদের পদায়নের চাহিদা বেড়ে যায়। সশস্ত্রবাহিনী বা সেনাবাহিনী এবং পুলিশবাহিনী সর্বত্রই মেয়েরা অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দূতাবাসেও নারী কর্মকর্তাগণ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের নারীরা নিজ মেধা আর যোগ্যতা বলে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের বিভিন্ন উচ্চ পদে যেমন— জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, মহাপরিচালক, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব/ সিনিয়র সচিব পদে দায়িত্ব পালন করে নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন।

প্রবাসে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত নারীদের প্রেরিত রেমিটেন্স দেশের বিনিয়োগ এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যায় হচ্ছে। সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে নারী কর্মীগণ তাদের আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মোটাদাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২০ শতাংশে রয়েছে নারীর অবদান। এছাড়াওএনজিও সেক্টরে নারীদের বিশাল অবদান রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নারীদের নেতৃত্বে বিভিন্ন এনজিও যেমন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাক, আইন ও শালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, ব্লাস্ট, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ইত্যাদি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে।গার্মেন্টস শিল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন করেছে পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাও বেড়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের বিকাশে অন্যতম নিয়ামক শক্তির ভূমিকায় রয়েছেন আমাদের নারীরা। এ শিল্পের মোট শ্রমিকের ৮০ শতাংশই নারী। বাংলাদেশে নারীরা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তথা সাংবাদিকতায়ও রয়েছে আমাদের নারীদের সরব পদচারণা। নারী তার মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে সংবাদ সংগ্রহ ও উপস্থাপনায় পারদর্শিতার পরিচয় দিচ্ছে।

পূর্বে সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পিতার নাম ব্যবহার করা হতো। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে নারী—পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় পিতার নামের সাথে মায়ের নাম যুক্ত করে জনজীবনের সকল স্তরে সন্তান—সন্ততির পরিচয়ের ক্ষেত্রে পিতার নামের সাথে মায়ের নাম উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করেন। সন্তানের পরিচয়ের সকল ক্ষেত্রে জননেত্রী শেখ হাসিনার এই বিশেষ উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়নের ভিত্তিকে আরও মজবুত করেছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের ‘দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ—২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনের আলোকে লিঙ্গ সমতায় বিশ্বের ১৪৬টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৫তম এবং টানা নবম বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে বৈশ্বিক লিঙ্গ সমতা সূচকে নারী ও পুরুষের বৈষম্য এবং বিভিন্ন সময় এ বৈষম্য দূরীকরণে দেশগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। মূলত চারটি ক্ষেত্র— স্বাস্থ্য ও গড় আয়ু, শিক্ষার সুযোগ, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী—পুরুষের বৈষম্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলো অনেক পিছিয়ে আছে।

একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, বাংলাদেশের নারীদের শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ এর সংবিধানে সুস্পষ্ট বিধান রেখে গেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় নারীর ক্ষমতায়নে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্বেও জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং বহুমুখী কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং নারীর রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার কাজ এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নের সব সূচকেই নারীর বিশাল অবদান রয়েছে। ক্রিকেট, ফুটবল থেকে শুরু করে নানা খেলাধুলায় সরকারের উৎসাহ ও প্রণোদনা নিয়ে নারীরা অংশগ্রহণ করছে এবং কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। এক কথায় তৃণমূল থেকে হিমালয়ের শিখর জয়, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক সব অঙ্গনেই রাষ্ট্র, সরকার এবং সমাজের কাছ থেকে সুযোগ পাওয়া মাত্রই নারীরা এগিয়ে এসেছে, এবং এগিয়ে যাচ্ছে। — পিআইডি ফিচার

লেখিকা : সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং সাবেক সিনিয়র সচিব

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram