২৮শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
‘নারীর কর্মসূচিগুলো ঘরকেন্দ্রিক করতে হবে আরও বড় পরিসরে’

সমাজের কথা ডেস্ক : অর্থনৈতিক মুক্তির সঙ্গে জড়িত নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন। স্বাবলম্বী নারী যেমন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, তেমনি পরিবারে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে অর্থনৈতিক মুক্তি। কিন্তু পিতৃতান্ত্রিক এই সমাজে নারীর উপার্জন নিয়ে রয়েছে বহু ভ্রান্ত ধারণা। অনেকেই ব্যঙ্গ করে নারীর স্বাবলম্বী হওয়াকে। মনে করেন ধারণা নারীর উপার্জন প্রয়োজনহীন এবং নারী উপার্জন করেন শখে। তাদের উপার্জন সংসারে কাজে আসে না কোনও, নিজেদের শখ—আহ্লাদ পূরণে অর্থ ব্যয় করেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করা জেবিন নাহার বর্তমানে কর্মরত আছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। তিনি বলেন, ‘দেখুন সংসার তো একজন পুরুষের একার বিষয়টা এমন না। স্বামী—স্ত্রী, সন্তান নিয়েই সংসার। এখন সংসারে আয় যতটা থাকবে সন্তানদের পড়াশোনা, লাইফস্টাইল, খাওয়া—দাওয়া সে পরিমাণেই হবে। আমার আয়ের অংশ যেমন আমার সন্তানদের ভালো স্কুলে পড়তে সহায়তা করছে, আমার স্বামীও আমার চাকরি নিয়ে গর্ববোধ করেন, উৎসাহ দেন।’

<<আরও পড়তে পারেন>> আন্তর্জাতিক নারী দিবস : শ্রেষ্ঠ ৫ জয়িতাকে সম্মাননা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক অধ্যয়নরত সাইফ বলেন, ‘আমার মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। সংসার ও চাকরি একসাথে সামলাতে দেখছি। মা চাকরির কারণে সময় দেন না, এমন অভিযোগও তৈরি হতে দেননি কখনও। আব্বুর রিটায়ারমেন্টের পর মায়ের টাকায়ই আমার পড়াশোনা চলছে। আমার মনে হয়, সংসারে নারী—পুরুষ বিষয় না, সবারই উপার্জন করা উচিত।’

নারিন্দায় মেসবাড়িতে রান্নার কাজ করেন মাহমুদা। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী কারখানায় কাজ করে ১০ হাজার টাকা পায়। যে বস্তিতে থাকি সেটার ভাড়া ৪ হাজার টাকা। তাহলে বাকি টাকায় কীভাবে চলবে? তাই রান্নার কাজ করি। দুজনের উপার্জনে সংসার ভালো চলছে। ছেলে দুইটাকে বড় করছি। কিছু টাকাও জমাচ্ছি ভবিষ্যতের জন্য।’

অনলাইনে শাড়ির ব্যবসা করেন ইডেন মহিলা কলেজের স্নাতক ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা। তিনি বলেন, ‘আমি ২য় বর্ষ থেকেই শাড়ির ব্যবসা শুরু করি। ঢাকাতে থাকতে প্রায় ১০ হাজার টাকা মাসে প্রয়োজন। আমার পরিবার কৃষিকাজে জড়িত, তাদের পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব না। প্রথমে টিউশনি করতাম, সেটার টাকা জমিয়ে ব্যবসা শুরু করি। ব্যবসার টাকা দিয়েই আমার পড়াশোনা খরচ চালাতে পারছি। ছোট ভাই বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, তাকেও মাঝেমধ্যে সাপোর্ট করতে পারছি।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল নোমান। তার স্ত্রীী ইয়ামিন কর্মরত আছেন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে। নোমান বলেন, ‘নারী শখে উপার্জন করে এমন ধারণা ভুল। নিজেকে পরিপাটি রাখতে আমরা পুরুষরাও খরচ করি। সেলুনে আমারও প্রতিমাসে ২ হাজার টাকা খরচ হয়। বরঞ্চ আমার স্ত্রী অনেক হিসেবি আমার থেকে। সে নিজের টাকা সংসারে খরচের পাশাপাশি আমার বেতনের টাকা কোন খাতে খরচ হবে, কতটুকু জমাতে হবে, সব হিসেব সে রাখে।’

সমাজবিজ্ঞানী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারহানা জামান বলেন, ‘আমাদের দেশে যেহেতু পিতৃকেন্দ্রিক কাঠামো, নারীর উপার্জনকে ছোট করে দেখা বা এই ধরনের চিন্তাভাবনা থাকাটা স্বাভাবিক। তবে নারীর উপার্জনটা অবশ্যই জরুরি। যারা বলেন নারী শখে উপার্জন করেন, তারা বাস্তবতা বোঝেন না। তারা মনে করেন নারী সাজিয়ে রাখার বিষয়। আমরা যদি সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর দিকে দেখি, সেখানে সংসারে উপার্জনকারী নারীদের ভূমিকা বেশি। দেশে ৪২ শতাংশ নারী শ্রমকাজে অংশ নিচ্ছেন। যার ৯১ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখেন। আমাদের দেশে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ হচ্ছে, যেটা ফলপ্রসূও হচ্ছে। তবে আমাদের কর্মসূচিগুলো ঘরকেন্দ্রিক করতে হবে আরও বড় পরিসরে। কারণ দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর মতো কাজটা সময় সাপেক্ষ। শুধু নারীকে নয়, পুরুষের মাঝেও সচেতনতা তৈরির কর্মসূচির নিতে হবে। তাহলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো সম্ভব।’

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram