নিজস্ব প্রতিবেদক, মণিরামপুর : মণিরামপুরে কথিত সাংবাদিকদের হয়রানিতে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন সধারণ জনগণসহ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী। পৌর শহরসহ রাজগঞ্জ, নেহালপুর, ঢাকুরিয়া অঞ্চলে কথিত সাংবাদিকের ছড়াছড়ি। ক্যামেরা, বুম হাতে মোটর সাইকেলে প্রেস সাঁটিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দৌড়—ঝাঁপ চলে এসব সাংবাদিকদের। কে কোন পত্রিকার সাথে যুক্ত এসব নিয়ে চায়ের দোকান গুলোতে রীতিমত আলোচনা শুরু হয়েছে সাধারণ জনগণের মাঝে। সরকারি কর্মকর্তারাও বিব্রত তাদের নিয়ে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, নাম সর্বস্ব কিছু অনলাইন এবং ফেসবুক আইডি ব্যবহারকারী সাংবাদিকের দৌরাত্ম্যই বেশি। নিজেদের অবস্থানকে মজবুত করে নিতে কথিত সংগঠনও করে নিয়েছেন তারা। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যাবেক্ষক হিসেবে পরিচয়পত্র নিতে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট আবেদন জমা পড়ে আড়াই শতাধিক। এরমধ্যে দুই শতাধিক পরিচয়পত্র ইস্যু করেন কতৃর্পক্ষ।
একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলার খালিয়া মাদরাসা মোড়ে এক গ্রাম্য পশু চিকিৎসক একটি অনলাইনের এডিটর। অভিযোগ রয়েছে, কথিত ওই এডিটরও নাকি রিটার্নিং বরাবর প্রত্যায়ন ইস্যু করে ২০টি। কথিত এসব সাংবাদিকদের দাপটে বিব্রত সাধারণ জনগণও। সম্প্রতি সাংবাদিক আনোয়ারের চোখ তুলে নেওয়ার হুমকি দেয় কথিত এক সাংবাদিক নেতা। আনোয়ার তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন, লেখা নেই, পড়া নেই, এমন লোকও সাংবাদিক নেতা। আনোয়ারের এমন পোস্ট দেওয়ায় তাকে চোখ তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি সাংবাদিক আনোয়ার ও হুমকিদাতার কথপোকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাংবাদিক আনোয়ার থানায় অভিযোগ করলে হুমকিদাতা পরে আনোয়ারের সাথে ক্ষমা চেয়ে আপোস করে নেন।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা এক শ্রেণির যুবক নিজেদেরকে সাংবাদিক দাবি করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পৌরশহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত। কথিত এসব সাংবাদিককে নিয়ে বিব্রত প্রকৃত সাংবাদিকদের। কোন অনুষ্ঠান বা সভা সেমিনারে নিউজের জন্য এক প্রকার যাওয়ায় বন্ধ করে দিয়েছেন প্রকৃত সাংবাদিকরা। কথিত ওই সব সাংবাদিকদের ক্যামেরার ঝলকানি আর বুম ধরে সাক্ষাতকার নিয়ে ব্যক্তি অথবা নেতার কাছ থেকে বখশিস নেওয়া পর্যন্তই তাদের কাজ। সাংবাদিকদের একাধিক সূত্র থেকে জানাগেছে, পৌর শহরের পোস্ট অফিস মোড়ের একটি চায়ের দোকানে সকাল ১০টার দিকে অন্তত: ২০জন কথিত সাংবাদিকেরর সাক্ষাত সহজেই মিলবে।
এছাড়া উপজেলার প্রকল্প অফিস, শিক্ষা অফিস, সাব— রেজিস্ট্রি অফিসসহ কয়েকটি অফিসের সামনে অফিস খোলা থাকা পর্যন্ত এদের অবস্থান লক্ষণীয়। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, কথিত এই সাংবাদিকদের মধ্যে একাধিক মামলার আসামি, মাদককের সাথে জড়িত, এমন যুবকের সংখ্যাও রয়েছে অনেক। প্রশাসনের বিভিন্ন ঝামেলা এড়াতে সাংবাদিকের লেবাস নিয়ে প্রকাশ্যে এখন এরা মাঠে ময়দানে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে মণিরামপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এস এম মজনুর রহমান বলেন, ওই সব না বলাই ভালো। ওদের সংখ্যা এখন অনেক। ওদেরকে এখন সবাই ভয় পায়।
মণিরামপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারুক আহাম্মেদ লিটন বলেন, কথিত সাংবাদিকদের জন্য প্রকৃত সাংবাদিকরা পদে পদে হেয় হচ্ছেন। সাংবাদিকদের মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী বলে মনে করি।