নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরের চৌগাছায় চাঞ্চল্যকর দুই ভাই আইয়ুব ও ইউনুচ হত্যা মামলায় হামলাকারী দুই সহোদরের মৃত্যুদণ্ড ও অপর ভাই ও তার স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার বিকেল যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক তাজুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী এপিপি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন: টেঙ্গুরপুর গ্রামের আবজেল খানের দুই ছেলে বিপ¬ব ওরফে বিপুল ও মুকুল খান। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলো তাদের অপর ভাই বিল্লাল খান ও তার স্ত্রী রুপালী বেগম। রায় ঘোষণার সময় চার আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী এপিপি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বলেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও সাক্ষ্য প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক চার আসামির মধ্যে মুকুল খান ও বিপ্লব ওরফে বিপুলকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছেন।
একইসঙ্গে অপর দুই আসামি বিল্লাল খান ও তার স্ত্রী রুপালী বেগমকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। ঘটনার এক বছর সাত মাসের মাথায় রায় হয়েছে। এ মামলায় ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন বিচারক।
সাক্ষীদের মাধ্যমে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় বিচারক সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন। এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে চৌগাছা—মহেশপুর সড়কের টেঙ্গুরপুর সর্দার ব্রিকসের বিপরীতে মুকুল হোসেনের চার দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন ইউনুস খান।
কাজের লোক ঠিক করা নিয়ে প্রথমে ইউনুস খানের সঙ্গে দোকানি মুকুলের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় ইউনুসকে মারধর করে মুকুল, বিল্লাল, বিপুল ও রুপালি বেগম।
পরবর্তীতে ইউনুসের ভাই আইয়ুব খাঁ ও ভাতিজা আসাদুজ্জামান খানসহ মুকুলের দোকানে যান এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে। এ সময় মুকুল তার ভাই বিপুল, বিল্লাল ও রুপালি বেগম মিলে ইউনুস খান, আইয়ুব খান এবং আসাদুজ্জামান খানকে দা ও বটি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ইউনুছ আলী খান ও আইয়ুব আলী খানকে মৃত ঘোষণা করেন। আসাদুজ্জামান খানের মাথায় ও হাতে গুরুতর জখম হয়।
এ ঘটনায় পরদিন নিহত আইয়ুব খানের মেয়ে সোনিয়া খান বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ছৌগাছা থানায় হত্যা মামলা করেন। আসামিরা হলো, আবজেল খানের তিন ছেলে বিপ্লব খান বিপুল, মুকুল খান, বিল্লাল খান ও বিল্লাল খানের স্ত্রী রুপালী বেগম।
এ মামলার তদন্ত শেষে আটক আসামিদের দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি ও সাক্ষীদের বক্তব্যে হত্যার সাথে জড়িত থাকায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই চারজনকে অভিযুক্ত করে ওই বছরের ২৮ জুলাই আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক ইয়াছিন আলম চৌধুরী।
এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি বিপুল ও মুকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রামাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড এবং অপর আসামি বিল্লাল ও তার স্ত্রী রুপালী বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। সাজাপ্রাপ্ত চারজন কারাগারে আটক আছে।
এদিকে রায় শুনে আদালত চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন দণ্ডিতদের স্বজনরা। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মুকুল খানের স্ত্রী জলি বেগম বলেন, মিথ্যা সাক্ষীর মাধ্যমে নির্দোষ ব্যক্তিদের সাজা দেয়া হয়েছে। আমরা এ রায় মানি না। আমরা ন্যায় বিচার পেতে উচ্চ আদালতে যাব।
আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুল করিম মন্ডল জানিয়েছেন, আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।