নিজস্ব প্রতিবেদক : এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেশসেরা অবস্থান থেকে দু’বছরের ব্যবধানে তলানিতে নেমেছে যশোর বোর্ড। এ বছর (২০২৩) যশোর বোর্ডে পাসের হার ৬৯ দশমিক ৮৮ ভাগ; জিপিএ—৫ পেয়েছে ৮ হাজার ১২২ জন শিক্ষার্থী।
পাসের হারের দিক থেকে এই ফলাফল সাধারণ ৯টি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ দু’বছর আগে (২০২১) এইচএসসি’র ফলাফলে দেশসেরা অবস্থানে উঠে এসেছিল যশোর বোর্ড। ২০২১ সালে যশোর বোর্ডের পাসের হার ছিল ৯৮ দশমিক ১১।
জিপিএ—৫ পেয়েছিল ২০ হাজার ৮৭৮ জন শিক্ষার্থী। আর এইচএসসি—২০২২ এর ফলাফলে এই বোর্ডের পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৯৫। জিপিএ—৫ পেয়েছিল ১৮ হাজার ৭০৩ জন শিক্ষার্থী।
ফলাফল অনুযায়ী, গতবছরের তুলনায় পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ০৭ ভাগ এবং জিপিএ—৫ প্রাপ্তি কমেছে ১০ হাজার ৫৮১। রোববার বিকেলে প্রকাশিত ফলাফলে যশোর বোর্ডের এ চিত্র উঠে এসেছে।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড’র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ জানান, গত বছরের তুলনায় এবার যশোর বোর্ডের সার্বিক ফলাফল খারাপ হয়েছে।
ইংরেজি এবং উচ্চতর গণিতে শিক্ষার্থীরা খারাপ ফলাফল করেছে। এই প্রভাব পড়েছে সার্বিক ফলাফলে। আগামীতে বোর্ডের ফলাফল ভাল করার জন্য তারা পদক্ষেপ নেবেনে।
যশোর বোর্ডের প্রকাশিত ফলাফল থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ড থেকে এক লাখ ৯ হাজার ৬৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭৬ হাজার ৬১৬ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ৩৫ হাজার ৮৮৫ জন এবং ছাত্রী ৪০ হাজার ৭৩১ জন। পাসের হার ৬৯ দশমিক ৮৮। জিপিএ—৫ পেয়েছে ৮ হাজার ১২২ জন। বহিষ্কৃত হয়েছে ২৭ জন।
২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ড থেকে ৯৮ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ৮২ হাজার ৫০১ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ৪০ হাজার ৮২১ জন এবং ছাত্রী ৪১ হাজার ৬৮০ জন। পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৯৫। জিপিএ—৫ পেয়েছিল ১৮ হাজার ৭০৩ জন। বহিষ্কৃত হয়েছিল ৯ জন।
২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ড থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ১৬৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৪১ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ৬৪ হাজার ১০৬ জন এবং ছাত্রী ৬১ হাজার ৬৩৫ জন।
পাসের হার ছিল ৯৮ দশমিক ১১। জিপিএ—৫ পেয়েছিল ২০ হাজার ৮৭৮ জন। এই ফলাফলে ২০২১ সালে যশোর বোর্ড দেশসেরা অবস্থান অর্জন করেছিল।
আর ২০২০ সালে করোনা মহামারীর কারণে এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়নি। কোভিড—১৯ জনিত বৈরী পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কতৃর্ক গঠিত ‘এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রণয়ন সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটি’র সুপারিশ অনুসারে এবং বোর্ড কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
ওই পরীক্ষার জন্য ২০২০ সালে যশোর বোর্ড থেকে ১ লাখ ২১ হাজার ৫২৮ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিল। করোনা ভাইরাসের কারণে পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব না হওয়ায় ঘোষণা অনুযায়ী এদের সবাইকে উত্তীর্ণ করা হয়।
উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ছিল ৬১ হাজার ৭৬১ জন এবং ছাত্রী ৫৯ হাজার ৭৬৭ জন। জিপিএ—৫ পেয়েছিল ১২ হাজার ৮৯২ জন।
এর আগে ২০১৯ সালে যশোর বোর্ড থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ২২৯ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।
এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল ৯৫ হাজার ৪৯৫ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ৪৭ হাজার ৪৪২ জন এবং ছাত্রী ৪৮ হাজার ৫৩ জন। পাসের হার ছিল ৭৫ দশমিক ৬৫। জিপিএ—৫ পেয়েছিল ৫ হাজার ৩১২ জন। বহিষ্কৃত হয়েছিল ৬০জন।
২০১৮ এই বোর্ড থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৬৯২ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল ৬৬ হাজার ২৫৮ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ছিল ৩১ হাজার ৬৫২ জন এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৬০৬ জন। পাসের হার ছিল ৬০ দশমিক ৪০। জিপিএ—৫ পেয়েছিল ২ হাজার ৮৯ জন। বহিষ্কৃত হয়েছিল ৪৭ জন।
২০১৭ সালে এই বোর্ড থেকে ৯৫ হাজার ৬৯২ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল ৬৭ হাজার ২ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ৩৩ হাজার ৮০৮ জন এবং ছাত্রী ৩৩ হাজার ১৯৪ জন। পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ০২। জিপিএ—৫ পেয়েছিল ২ হাজার ৪৪৭ জন। বহিষ্কৃত হয়েছিল ৫৬ জন।
২০১৬ সালে এই বোর্ড থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ৫৭২ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করেছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৯২৯ জন। পাশের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ, জিপিএ—৫ পেয়েছিল ৪ হাজার ৫৮৬ জন। পরীক্ষায় বহিষ্কৃত হয়েছিল ৮১ হন।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর যশোর বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৮ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৬ হাজার ৩৪১ জন। পাসের হার ৮৭ দশমিক ৯২ ভাগ। জিপিএ—৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৫১২ জন। মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৭৬ হাজার ৫৮৬ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৪৯ হাজার ৩৩০ জন।
পাসের হার ৫৭ দশমিক ৮৭ ভাগ। এই বিভাগ থেকে জিপিএ—৫ পেয়েছে ২ হাজার ৯৫৬ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ১৪ হাজার ৪৬২ জন ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ১০ হাজার ৯৪৫ জন। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬৮ ভাগ। জিপিএ—৫ পেয়েছে ৬৫৪ জন ছাত্র ছাত্রী।
এবারের ফলাফলের চিত্র তুলে ধরে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড’র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ জানান, অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় যশোর বোর্ডর ফলাফল খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে ইংরেজি পরীক্ষায় ২৩ শতাংশ এবং উচ্চতর গণিতে ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ হয়েছে। এর প্রভাব সার্বিক ফলাফলের ওপর পড়েছে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ উল্লেখ করেন, যশোর বোর্ডের শিক্ষার্থী অন্য বোর্ডের প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষায় ইংরেজি প্রশ্নপত্র জটিল হয়েছে। বিষয়টি তারা আন্তঃবোর্ড সমন্বয় সভায় উত্থাপন করবেন। একইসাথে ভবিষ্যতে ফলাফল ভাল করার জন্য বোর্ডের পক্ষ থকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন ড. বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ।