২০শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন যারা
75 বার পঠিত

হাফেজ মাওলানা লোকমান হাকিম : মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা: সাহাবিদের মধ্যে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, তাদেরকে বলা হয় আশারায়ে মুবাশশারাহ। তারা হলেন নবীদের পর উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম লোক। এই ১০ জন ছাড়াও রাসূল সা: আরো অনেক সাহাবির নাম উল্লেখ করেন, আবার কাউকে ইঙ্গিতে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। তা ছাড়া তিনি একটি পরিবার, সাহাবিদের কিছু জামাতকেও জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জনের তালিকা বেশ কিছু হাদিসে এসেছে। তার মধ্যে একটি হাদিস হলো—
আবদুর রহমান ইবনু আওফ রা: থেকে বর্ণিত— তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘আবু বকর জান্নাতি, উমর জান্নাতি, উসমান জান্নাতি, আলী জান্নাতি, ত্বালহা জান্নাতি, জুবাইর জান্নাতি, আবদুর রহমান ইবনু আওফ জান্নাতি, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস জান্নাতি, সাঈদ জান্নাতি এবং আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ জান্নাতি (জামে’আত—তিরমিজি—৩৭৪৭)।

এই ১০ জন নবীদের পর সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি, উম্মতের অগ্রগামী ব্যক্তি। কতই না সৌভাগ্য তাদের। এই ১০ জন ছাড়া আরো যাদেরকে রাসূল সা: জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন—
হজরত হাসান ইবনু আলী রা: ও হজরত হুসাইন ইবনু আলী রা:। রাসূল সা: তাদের উভয়ের সম্পর্কে বলেছেন, ‘হাসান ও হুসাইন দু’জন জান্নাতের যুবকদের নেতা’ (ইবনে হিব্বান—৬৯৫৯)।

হজরত হামজা ইবনু আব্দুল মুত্তালিব রা:
মুসতাদরাকে হাকেমের বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সা: বলেন, ‘সাইয়িদুশ শুহাদা হলেন হামজা ইবনু আব্দুল মুত্তালিব।’ সুতরাং শহীদরা যদি জান্নাতি হন তবে তাদের নেতাও জান্নাতি হবেন।

হজরত জাফর ইবনে আবি তালেব রা:
রাসূল সা: বলেন, ‘আমি জান্নাতে জাফর ইবনে আবি তালিবকে ফেরেশতাদের সাথে পাখির মতো উড়তে দেখেছি’ (জামে সগির—৪৩৬৭)।

হজরত বিলাল ইবনে রাবাহ রা:
বুরাইদাহ রা: থেকে বর্ণিত— একদিন ভোরে রাসূলুল্লাহ সা: বিলাল রা:—কে ডেকে বললেন, ‘হে বিলাল! তুমি জান্নাতে কী কারণে আমার আগে আগে থাকছ? যখনই আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি সে সময়ই আমার আগে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। গত রাতেও আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি এবং আমার আগে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি।’ তারপর বিলাল রা: বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কখনো আমি আজান দিলেই দুই রাকাত নামাজ আদায় করি এবং কখনো আমার অজু ছুটে গেলেই আমি অজু করি এবং মনে করি আল্লাহ তায়ালার নামে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা আমার কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘এ দু’টি কারণেই (তোমার এ মর্যাদা)’ (তিরমিজি—৩৬৮৯)।

জনৈক বেদুইন সাহাবি—
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত— এক বেদুইন নবী সা:—এর কাছে এসে বলল, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন যদি আমি তা সম্পাদন করি তবে জান্নাতে প্রবেশ করব। রাসূল সা: বললেন , ‘আল্লাহর ইবাদত করবে আর তার সাথে অপর কোনো কিছু শরিক করবে না। ফরজ সালাত আদায় করবে, ফরজ জাকাত প্রদান করবে, রমজান মাসে সিয়াম পালন করবে।’ সে বলল, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ করে বলছি, আমি এর চেয়ে বেশি করব না। যখন সে ফিরে গেল, নবী সা: বললেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো জান্নাতি ব্যক্তিকে দেখতে পছন্দ করে সে যেন এই ব্যক্তিকে দেখে নেয়’ (বুখারি—১৩৯৭)।

ইয়াসার রা:—এর পরিবার
হজরত সুমাইয়া রা:, হজরত ইয়াসার রা:, আম্মার ইবনু ইয়াসার রা:—এর ওপর কাফিরদের নির্যাতন দেখে রাসূল সা: তাদেরকে বলেছিলেন, ধৈর্য ধরো হে ইয়াসারের পরিবার, তোমাদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা রয়েছে (ইবনু আবিদদুনিয়া—কিতাবুস সবর)।
বদরি সাহাবি
ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ বদরের প্রান্তরে ৩১৩ জন সাহাবি অংশগ্রহণ করেছেন।
বদরি সাহাবিদের সম্পর্কে একটি প্রসিদ্ধ হাদিস হলো, হজরত জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ রা: বর্ণিত— রাসূল সা: বলেন, ‘যারা বদর ও হুদায়বিতে অংশগ্রহণ করেছে তারা কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না’ (মুসনাদে আহমাদ)।

<< আরও পড়ুন >> ইবাদত কবুলের পূর্ব শর্ত হালাল উপার্জন

বায়াতে রিদাওয়ানের শপথকারী সাহাবিরা
ষষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়।
যে সব মুমিন হুদায়বিয়ার দিন গাছের নিচে রাসূলুল্লাহ সা:—এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন তাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে জান্নাতের সুসংবাদ দেন। তাদের সংখ্যা চৌদ্দ শ’ জন। হজরত জাবের রা: বলেন, হুদায়বিয়ার দিন আমাদের ব্যাপারে রাসূল সা: বলেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীদের মধ্যে উত্তম মানুষ’ (বুখারি—৪১৫৪)।

রাসূল সা: আরো বলেন, ‘যারা গাছের নিচে বাইয়াত করেছে তাদের কেউ জাহান্নামে যাবে না’ (তিরমিজি—৩৮৬০)।
তা ছাড়া বিভিন্ন হাদিস থেকে এরকম আরো কিছু সাহাবির ব্যাপারে রাসূল সা: কর্তৃক জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে রয়েছেন— আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, সাবিত ইবনু কুয়াইস রা:, আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম, উক্কাসা ইবনে মুহসিন রা:সহ আরো অনেকে।

নারীদের মধ্যে অনেক সাহাবিকে রাসূল সা: জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হজরত খাদিজাতুল কোবরা রা:। আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত— তিনি বলেন, খাদিজাহ রা:—কে জান্নাতে মণি—মুক্তাখচিত একটি প্রাসাদের খোশখবর দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা নবী সা:—কে আদেশ করেন (বুখারি—৩৮১৬)।

রাসূল সা: জান্নাতের সুসংবাদ আরো যাদেরকে দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন হজরত ফাতিমাতুজ জাহরা রা:
উন্মু সালামাহ রা: থেকে বর্ণিত— রাসূল সা: মক্কা বিজয়ের দিন হজরত ফাতিমা রা:কে বলেন, তুমি মারইয়াম বিনতু ইমরান ছাড়া জান্নাতের নারীদের নেত্রী হবে। তখন তিনি আনন্দে হেঁসে উঠেছিলেন (তিরমিজি—৩৮৯৩)।
রাসূল সা: জান্নাতের সুসংবাদ আরো যাদেরকে দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত— জিবরাইল আ: একখানা সবুজ রঙের রেশমি কাপড়ে তার (আয়েশাহ) প্রতিচ্ছবি নবী সা:—এর কাছে নিয়ে এসে বলেন, ইনি দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার স্ত্রী (বুখারি—৫১২৫, মুসলিম, তিরমিজি)।

তা ছাড়া বিভিন্ন হাদিস থেকে এরকম আরো কিছু নারী সাহাবির ব্যাপারে রাসূল সা: কর্তৃক জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া যায়।
তাদের মধ্যে রয়েছেন— একজন কালো নারী, যিনি মসজিদে নববীর খাদেম ছিলেন, রাসূল সা: তাকেও জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করা হলো চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করা। আর যারা এমনটি পেয়েছেন তারা হলেন উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।

লেখক : খতিব, নন্দন হাউজিং সোসাইটি জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram