১৮ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ড্যান্ডির নেশায় মত্ত পথশিশুরা এখন মাদকের বাহক

ইমরান হোসেন পিংকু : যশোর রেল স্টেশন পাশে দাঁড়িয়ে পাঁচ শিশু। বয়স ১০—১২ বছর। হাতে পলিথিন। একজন অন্য চারজনের পলিথিনে আঠালো জাতীয় কিছু ঢেলে দিচ্ছে। সবাই এক সাথে নাকে শুকছে আঠালো পদার্থের গন্ধ। কাছে যেয়ে জিজ্ঞাসা করতেই জানালো ‘ড্যান্ডি খাচ্ছি’। অপেক্ষা না করেই মুহূর্তেই পালিয়ে গেল ড্যান্ডি খোরের দল। আশপাশে কথা বলে জানা গেল, ওরা সবাই পথ শিশু। জুতোর আঠা নাকে শুকে নেশা করে তারা। এ আঠার বাজারিক নাম ড্যান্ডি, ডেনরাইট, ফেবিকল ইত্যাদি। এ থেকে ড্যান্ডি নাম ব্যবহার করছে নেশার শিশুরা। তারা মাঝে মাঝে বাহক হিসেবে ফেনসিডিল গাজা পৌছে দেয় গ্রাহকের কাছে।

বাবা—মায়ের আদর ভালোবাসা ওদের কপালে জোটেনি। কেউ বা জন্মে পরেই পিতাকে দেখেনি। বুঝে ওঠার পরে মায়ের হাত ধরে নেমে পড়ে জীবিকার তাগিদে। একটু বড় হলেই মা একদিকে, সন্তান অন্যদিকে ঘুরতে থাকে পেটের দায়ে। এমন নির্মহ বাস্তবতায় শিশুদের ঠাঁই হয় পথশিশুদের সাথে। অযত্নে অবহেলায় ছিন্নমূল শিশুরা হয়ে ওঠে আক্রমনাত্মক। বড় ভাইদের প্ররোচনায় তারা নেশায় আসক্তসহ মাদক কারবারের সাথে জড়িয়ে যায়। এভাবে হয়ে ওঠে তারা মাদকসন্ত্রাসী।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের পথশিশুদের ৫৮ শতাংশ মাদকে আসক্ত। গবেষণার অংশ হিসেবে ডিএনসি দেশব্যাপী ১ হাজার ৬০০ পথশিশুর সাক্ষাৎকার নেয়। এর মধ্যে ৯২৮টি শিশু বলেছে, তারা মাদক সেবন করে। অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ পথশিশু মাদকসেবি। এই ৯২৮ জনের মধ্যে ৩৩৬টি শিশু বলেছে, তারা মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদকের বাহক হিসেবেও কাজ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী ও শিশুদের মাদকের বাহক হিসেবে ব্যবহার করছেন মাদক কারবারিরা। পথশিশুরা খুব সহজে মাদক সংগ্রহ করতে পারে। ৫৩ শতাংশ শিশু সরাসরি কারবারিদের কাছ থেকে মাদক কেনে। ১৪ শতাংশ শিশু বলেছে, তারা ১০ বছর বয়স হওয়ার আগে থেকেই মাদক নিচ্ছে। পথশিশুদের মধ্যে গাঁজা সেবনের প্রবণতা বেশি। তবে ঢাকার পথশিশুরা ড্যান্ডি বেশি সেবন করে। ৫—১০ বছর বয়সী পথশিশুদের মধ্যে ড্যান্ডি গ্রহণের প্রবণতা বেশি বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

যশোর রেল স্টেশনের তিনজন পথশিশু বলেছে, পলিথিন ও বোতল কুড়িয়ে দিনে ৫০—১০০ টাকা হয়। যেদিন বেশি টাকা হয়, সেই দিন বন্ধুরা মিলে গাজা খাই। টাকা না থাকলে জুতার আঠা পলিথিনে ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে ভাতের খিদে মেটায়।

ভ্রাম্যমাণ চা দোকদার আনিস হোসেন বলেন, ‘তিন বছর ধরে এই স্টেশনে চা বিক্রি করি। এখানে অনেক ছেলে—মেয়েরা আছে তারা নিয়মিত নেশা করে। সব চেয়ে বেশি ড্যান্ডি খাই।’ চারজন রিকশাচালক বলেন, তারা শুধু ড্যান্ডি বা গাজা সেবন করে না। তারা মাদক এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বহনের কাজও করে। আবার অনেকে কিশোর গ্যাংও হয়ে ওঠে। এভাবে সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের যশোর উপপরিচালক আসলাম হোসেন বলেন, আমরা রেলস্টেশনসহ বস্তি এলাকাগুলোতে মনিটরিং জোরদার করেছি। মাদকবাহক ও নেশাগ্রস্ত ছিন্নমূল শিশুদের পেলে তাদের ভালো হওয়ার জন্য শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে এবং বিভিন্ন সেল্টার হোমে পাঠানো হয়। শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের সাথে পুলিশ, বিজিপি, র‌্যাব একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। পথশিশুসহ বিভিন্ন কিশোর—কিশোরীরা মাদক সেবন করছে। এছাড়াও ভালো পরিবারে ছেলে—মেয়েরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ছে। ভালো হওয়ার শর্তে তাদেরকে পরিবারে কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।’

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram