১৯শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে যশোর
ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে যশোর

ইমরান হোসেন পিংকু : যশোরাঞ্চলেও দ্রুত ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। গত ৯ দিনে (১জুলাই থেকে ৯ জুলাই) জেলায় মোট ৮০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর যশোরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যশোরের চিকিৎসক ও পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, যশোরের চারটি কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। স্থায়ী জলাবদ্ধতা, মাঝেমধ্যে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়া, যোগাযোগের ট্রানজিট পয়েন্ট হওয়া এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুবিধা বেশি থাকায় যশোরে রোগীরা ভিড় জমায়। ফলে যশোরে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেড়েছে।


যশোর সিভিল সার্জন সূত্রে জানাগেছে, গত ৯ দিনে জেলায় মোট ৮০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬জন সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছে। তবে এই ৮০জনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ২৩জন ঢাকা থেকে আগত। গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত একজন রোগী ঢাকা থেকে আগত। এদিকে, বর্তমানে ভর্তি রয়েছে, অভনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩জন, চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন, শার্শ স্বাস্থ্য কর্মপ্লেক্সে একজন ও যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১০জন।


যশোরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ায় এডিস মশা নিয়ে জরিপ করেছে যশোর সিভিল সার্জন কার্যালয়। আর জরিপে নেতৃত্ব দেন জেলা কীটতত্ত্ববিদ আমিনুল হক। যশোর পৌর ও সদর উপজেলা টায়ারের দোকান, পুকুর-জলাশয়, ড্রেন এবং অভানগর ও চৌগাছা উপজেলার বিভিন্ন বাড়ি পাশের ডোবা থেকে লার্ভা সংগ্রহ করে জরিপ দল।


জেলা কীটতত্ত্ববিদ আমিনুল হক বলেন, সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া গেছে অভয়নগর ও যশোর সদর উপজেলাতে। জরিপে দেখা গেছে, ডাবের খোসা বা ভাঙ্গা চোরা পাত্রে গায়ে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।’ তিনি বলেন, এডিস মশার দুটি প্রজাতি এডিস ইজিপটাই ও এডিস অ্যালবোপিকটাস। ডেঙ্গু ভাইরাস প্রধানত এডিস ইজিপটাইয়ের মাধ্যমে বেশি ছড়ায়। কম হলেও এডিস অ্যালবোপিকটাসও ডেঙ্গু ছড়ায়। গ্রামাঞ্চলে এডিস অ্যালবোপিকটাস বেশি। এডিস ইজিপটাই বেশি শহর এলাকায়। তবে অভায়নগরে যারা আক্রন্ত হচ্ছে; বেশির ভাগ গ্রামের লোকজন।’


যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রফেসর ড. সাইবুর রহমান মোল্যা বলেন, ‘যশোরের তিন উপজেলার জলাবদ্ধতা রয়েছে। একই সাথে যশোর হচ্ছে যোগাযোগের ট্রানজিট পয়েন্ট। যানবাহন, বিশেষ করে ট্রেন, ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসের মাধ্যমে রাজধানীকেন্দ্রিক এডিস মশার যশোরে বিস্তার ঘটেছে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেন যশোর আসে। সেখানে থাকা ফাঁকা বগিতে মানুষের সঙ্গে এডিস মশাও ট্রান্সফার হতে পারে। ট্রানজিট পয়েন্ট বিধায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এমনকি ভারত থেকেও যানবাহন যশোরে আসে। ট্রাকের পেছনের অংশ, যেখানে পানি জমতে পারে এবং গ্যারেজে থাকা পুরোনো টায়ারেও এডিস মশার প্রজনন হয়ে থাকে।

ফলে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এ ছাড়া যশোরে ভালো চিকিৎসাসুবিধা থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের মাধ্যমেও ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যশোরে ড্রেনগুলোতে পানি সরে না। অন্যদিকে ভৈরব নদীতে স্রোত নেই। ফলে এখানে এডিস মশা একবার ডিম পাড়লেই বংশ বিস্তার হয় সহজে।’


যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার পার্থ প্রিতম চক্রবর্তি বলেন, বতমানে হাসপাতালে ৯জন ডেঙ্গু রোগী ভতি রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৭জন এবং নারী ২জন রয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদানে কোন সমস্য হচ্ছে না। তবে বর্তমানে যে অবস্থা তাতে আগামীতে মেডিসিন বিভাগে রেখে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না। এ জন্য প্রয়োজন হলে হাসপাতালের রেড জোন ব্যবহার করা হবে। ’


তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ব্যাপকহারে ডিম পাড়ছে এবং লাখ লাখ মশার জন্ম নিচ্ছে। এই মশার লার্ভা দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বড় হয়। এদের মধ্যে যে সব মশা স্ত্রী জাতীয় তারা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে। এ মশায় কামড়ালে মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকার ড্রেনে পানিতে পড়ে থাকা টায়ারের ভিতরে, বাড়ির ফুলের টবে, ফ্রিজের জমে থাকা পানিতে এডিস মশার জন্ম নিচ্ছে। এই মশা যখম মানুষকে কামড় দিচ্ছে তখন মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই সকলের সচেতন হতে হবে।


ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. নাজমুস সাদিক বলেন, দ্রুত গতি যশোরের বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। জেলার সদর উপজেলা এবং অভনগর উপজেলা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। ডেঙ্গু মোকাবেলায় সকল ধরণের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছি।’


যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ডেঙ্গুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে অবহিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু কর্নার খোলা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক চিকিৎস নিশ্চিত করা হয়েছে।’

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram