২৭শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জ্ঞানালোকের প্রতীক শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ বুধবার মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি। যা বসন্ত পঞ্চমী তিথি নামে পরিচিত। এ পূণ্য তিথিতে ‘নমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে/ বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।’— এ মন্ত্র উচ্চারণ করে বাঙালি সনাতন ধর্মবিশ্বাসীরা বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শ্রীশ্রী সরস্বতীকে আরাধনা করবেন।

বাঙালি সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীদের মতে, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে শ্রদ্ধা, ঋদ্ধি, কলা, মেধা, তুষ্টি, পুষ্টি, প্রভা ও স্মৃতির সফলতার জন্য দেবী চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন ভক্তরা। কল্যাণময়ী দেবীর চরণে বিদ্যা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রণতি জানাবেন তারা।

পঞ্জিকা অনুসারে পঞ্চমী শুরু হয়েছে মঙ্গলবার রাত ৮টা ৪২ মিনিটের পর। আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৪ মিনিট পর্যন্ত এ তিথি থাকবে। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে পূজার আচারাদি মেনে এ সময়ের মধ্যেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন হবে।

শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে শ্রীপঞ্চমীর দিন সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন হয়। সরস্বতী পূজা সাধারণ পূজার নিয়মানুসারেই হয়। তবে এই পূজায় আলাদা কিছু সামগ্রী যেমন, অভ্র—আবির, আমের মুকুল, দোয়াত—কলম ও যবের শিষ ছাড়াও লাগে বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুল। এ দিনেই অনেকের শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি দেয়া হয়।

সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীদের বাড়িসহ সারাদেশের সাথে যশোরের মন্দির ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। অন্য অনুষ্ঠানমালায় আছে ধর্মীয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি, আলোকসজ্জা ইত্যাদি।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারো সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, মহিলা কলেজ, সিটি কলেজ, যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ, যশোর জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলা আইনজীবী সমিত ভবন, রামকৃষ্ণ আশ্রম ও মিশনসহ মন্দির এবং সনাতন ধর্মবিশ্বাসীরা তাদের নিজ গৃহে মহাসাড়ম্বরে বিদ্যা ও আরাধনার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর পূজার আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলেই স্কুল কলেজের পূজা মন্দির ও মণ্ডপগুলোকে বিশেষ আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে।

উল্লেখ্য সরস্বতী মূলত বৈদিক দেবী। বেদে সরস্বতী প্রধানত নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সরস শব্দের অর্থ জল। অতএব সরস্বতী শব্দের আদি অর্থ হলো জলবতী অর্থাৎ নদী। সরস্বতী শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থে সরস+বতু আর স্ত্রী লিঙ্গে ‘ঈ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে সরস্বতী। তিনি বিদ্যাদেবী, জ্ঞানদায়িনী, বীণাপাণি, কুলপ্রিয়া, পলাশপ্রিয়া প্রভৃতি নামে অভিহিতা। তাঁর এক হাতে বীণা অন্য হাতে পুস্তক।

পুরান মতে, বৃহস্পতি হচ্ছেন জ্ঞানের দেবতা, বৃহস্পতি পত্নী সরস্বতীও জ্ঞানের দেবী। সরস্বতী নদীর তীরে যজ্ঞের আগুন জ্বেলে সেখানেই ঋষি লাভ করেছিলেন বেদ বা ঋগমন্ত্র। সুতরাং সরস্বতী জ্ঞানের দেবী হিসেবেই পরিচিত হয়েছিলেন এ ধরাতে।

কালের বিবর্তনে সরস্বতী তাঁর অন্য বৈশিষ্ট্যগুলো হারিয়ে কেবল বিদ্যাদেবী অর্থাৎ জ্ঞান ও ললিতকলার দেবীতে পরিণত হলেন। সরস্বতী জ্ঞান, সংগীত ও শিল্পকলার দেবী। ঋগবেদে তিনি বৈদিক সরস্বতী নদীর অভিন্ন এক রূপ।

বর্তমানে সরস্বতীর বাহন হাঁস। বেদে এবং উপনিষদে হংস শব্দের অর্থ সূর্য। সূর্যে সৃজনী শক্তির বিগ্রহাম্বিতরূপ ব্রহ্মা এবং সূর্যাগ্নির গতিশীল কিরণরূপা ব্রহ্মা—বিষ্ণু—শিব শক্তি সরস্বতী দেবীর বাহন হয়েছেন হংস বা সূর্য একেবারেই যুক্তিসঙ্গত কারণে।

সরস্বতীর এ বাহন সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয় জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে সর্বত্রই তাঁর সমান গতি ঠিক যেমনভাবে জ্ঞানময় পরমাত্মা সব জায়গায় বিদ্যমান। মজার ব্যাপার হলো হংস জল ও দুধের পার্থক্য করতে সক্ষম। জল ও দুধ মিশ্রিত থাকলে হাঁস শুধু সারবস্তু দুধ বা ক্ষীরটুকু গ্রহণ করে আর জল পড়ে থাকে। জ্ঞান সাধনায় হাঁসের এ স্বভাব যথেষ্ঠ তাৎপর্য বহন করে।

হাতে বীণা ধারণ করেছেন বলেই তাঁর অপর নাম বীণাপাণি। বীণার সুর মধুর। পূজার্থী বা বিদ্যার্থীর মুখ নিঃসৃত বাক্যও যেন মধুর হয় এবং জীবনও মধুর সংগীতময় হয় এ কারণেই মায়ের হাতে বীণা।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram