এস হাসমী সাজু : ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত ২৪জন যশোরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরমধ্যে শুধুমাত্র জেনারেল হাসপাতালে ১৮ রোগী ভর্তি আছেন। যাদের ৩ জন ঢাকা থেকে ডেঙ্গু নিয়ে যশোরে ভর্তি হয়েছেন। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত ৩৭ ঘণ্টার পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের ২২তারিখ রাত ৮টা পর্যন্ত জেলায় মোট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৮৮জন। এর মধ্যে ২জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৩৭জন। বর্তমানে জেলায় ৪৯জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যশোরে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৪জন।
হাসপাতালের ডেঙ্গু কর্নারের ইনচার্জ হাসি আরা বেগম জানান, হাসপাতালে গত ৩৭ ঘণ্টায় (অর্থাৎ শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়ে মহিলাসহ ১৮জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। শুধুমাত্র শনিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মহিলাসহ ৫জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ডেঙ্গু নিয়ে ৩জন জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ২৬জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ২০জন এবং মহিলা রয়েছেন ৬জন।
ডেঙ্গু কর্নারে চিকিৎসাধীন চৌগাছা আড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, ‘বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করে মাথাব্যথা ও প্রচন্ড জরে আক্রান্ত হই। সকালে আরও অসুস্থ হলে পরিবারের লোকজন শুক্রবার সকালে চৌগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শরীরে ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস ধরা পড়ে। তখন চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন।’
শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোড এলাকার হাসিনা বেগমের স্বামী রেজাউল্লা জানান, হঠাৎ করেই শুক্রবার দুপুরে তার স্ত্রী বমি করে ও সাথে জ্বর আসে শরীরে। শনিবার হাসপাতালের প্যাথলজিতে রক্ত পরীক্ষা করে শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস পাওয়া যায়। তিনি আরও জানান তার স্ত্রী গত এক মাসে শহরের বাহিরে যায়নি।
এদিকে যশোর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় গত ৩৭ ঘণ্টায় (অর্থাৎ শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়ে মহিলাসহ ২৪জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে জেনারেল হাসপাতালে ১৮জন, অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২জন, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২জন এবং কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার জানান, যশোরে বছরের পর বছর ধরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ হচ্ছে। আর এই রোগের ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এর একটি মাত্র কারণ হচ্ছে, জেলার পৌরসভা ও ইউনিয়ন এবং এ কাজে নিয়োজিতরা সঠিক সময়ে মশা নিধনের ব্যবস্থা নেয় না। যখন রোগী হাসপাতালে বাড়ে তখন কর্মকর্তারা মশা নিধন অভিযান শুরু করেন। ২/৩দিন পরে আবার যা তা হয়ে যায়। যার ফলে এই বছরে ডেঙ্গু মারাত্মক হয়ে উঠছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার পার্থ প্রতিম চক্রবর্তি জানান, গত বছরের সঙ্গে এই বছরে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আসার ক্ষেত্রে কোন বিরতি ছিল না। শীতকালেও হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে। এবার মৌসুম শুরু হওয়ার এক দেড় মাস আগে থেকেই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গু এখন আর মৌসুমী রোগ না এটি এখন রেগুলার রোগে পরিণত হয়েছে।
যশোরের সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, ‘যশোরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। খারাপ হতে পারে এমন আশঙ্কায় যশোর জেনারেল হাসপাতালসহ প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য জেলায় মাইকিং উপজেলায় নিয়মিত উঠান বৈঠক ও অবহিতকরণ সভা করা হচ্ছে।’